এক ব্যক্তি রেস্তোরাঁয় বসে তাঁর সঙ্গিনীর পানীয়তে কোনও ওষুধ (lacing) মেশাচ্ছে, কিন্তু সেই রেস্তোরাঁরই এই তৎপর কর্মী তাঁর সেই পরিকল্পনা বানচাল করে দিচ্ছে— ভিডিওতে দেখা যাওয়া এই ঘটনাটি একেবারে চিত্রনাট্য (drama) মেনে অভিনয়। কিন্তু, সেই ভিডিওই ফেসবুকে ভাইরাল হল। সঙ্গে মুসলিমদের (Muslims) লক্ষ্য করে মিথ্যা সাম্প্রদায়িক দাবি (Communal Spin)।
বুম ভিডিওটি খুঁটিয়ে দেখে বুঝতে পারে যে, ভিডিওটি এমন ভাবে এডিট করা হয়েছে যাতে দেখে মনে হয় এটি একটি সিসিটিভি ফুটেজ। এটি একটি আসলে নাটক এবং একটি ফেসবুক পেজ এই ভিডিওটি 'জনশিক্ষার উদ্দেশ্যে' বানিয়েছে।
ভাইরাল হওয়া ফুটেজটিতে এক ব্যক্তি এবং মহিলাকে একটি রেস্তোরায় ঢুকে বসতে দেখা যায়। কিছু ক্ষণ পরে মহিলা টেবিল থেকে উঠে যান এবং ওই ব্যক্তি সেই সুযোগে তার ঠান্ডা পানীয়ে কিছু মিশিয়ে দেয়। রিসেপশন কাউন্টারে বসে থাকা এক মহিলা কর্মী এই পুরো ঘটনাটি দেখে ফেলেন, এবং কাউকে ফোন করেন। যে কর্মী ওই টেবিলে খাদ্য পরিবেশন করছিলেন, রিসেপশনের মহিলা কর্মী তাঁর সঙ্গেও কথা বলেন। খাদ্য পরিবেশনকারী কর্মী তার পর ওই টেবিলে যান, এবং ইচ্ছা করেই মেয়েটির পানীয়ের গেলাসটি উল্টে ফেলেন, এবং সেটি টেবিলকে থেকে সরিয়ে দেন।
একটু পরেই এক পুলিশ কর্মী রেস্তোরায় ঢোকেন এবং ওই ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন। ভিডিওটির শেষে পুলিশ ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। দেখা যায়, রেস্তোরাঁর এক কর্মী ওই মহিলাকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন।
এই ভিডিওটি সাম্প্রদায়িক রঙ চড়িয়ে শেয়ার করা হয়েছে।
ফেসবুক পোস্টে ভিডিওটির সঙ্গে দেওয়া হিন্দি ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "এই মুসলমান ছেলেটির কাণ্ড দেখুন। সে ধর্ষণ করার উদ্দেশ্যে তার বান্ধবীর জলে মাদকদ্রব্য মিশিয়ে দিচ্ছে। তবে হোটেলের এক সতর্ক কর্মী পুরো ব্যাপারটি দেখে ফেলেন এবং ওই ছেলেটি ধরা পড়ে যায়। এখনও যদি আপনি সতর্ক না হন তবে পৃথিবীর কোনও শক্তি আপনাকে বাঁচাতে পারবে না। কারণ এটি দেখার পরও আপনি বলবেন, আমার সঙ্গে তো এ রকম হয়নি, আমি কেন ভাবব?"
হিন্দিতে লেখা মূল ক্যাপশন यह देखिये इस मुस्लिम लड़के की करतुत..अपने हिन्दु लड़की दोस्त को पानी में नशे की दवा खिलाकर इज्जत लुटने का प्लान बना रहा था..,पर होटल वालों के जागरूकता से पकड़ा गया ये कृत्य देखने के पश्चात भी यदि आप जागरूक नही होते तो ईश्वर क्या संसार की कोई भी शक्ति आपकी रक्षा नही कर सकती कारण केवल इतना है की ये सब देखने के पश्चात भी आप यही बोलेंगे अरे हमारे यह थोड़े हुआ है हमें क्यों लेनी tansion "समाप्त"।)
পোস্টটি দেখুন এখানে।
একই দাবির সঙ্গে ভিডিওটি একাধিক ফেসবুক পেজ থেকে শেয়ার করা হয়েছে।
তথ্য যাচাই
বুম ভিডিওটির কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে এবং ভিডিওটির একটি লম্বা ভার্সন দেখতে পায় যেটি হামসা নন্দিনী নামে একটি ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে শেয়ার করা হয়েছে। এই পেজটির ২.৯ মিলিয়ন ফলোয়ার রয়েছে এবং তারা প্রায়শই এ রকম সিসিটিভি ফুটেজের মতো দেখতে ভিডিও শেয়ার করে থাকে।
আমরা দেখতে পাই, ২০২০ সালের ১৮ অক্টোবর এই পেজ থেকে একটি ভিডিও শেয়ার করা হয়েছিল, যা বর্তমানে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটির একটি দীর্ঘতর রূপ। সঙ্গে ক্যাপশন দেওয়া হয়েছিল, "এর পরের লক্ষ্য আপনি হতে পারেন! ভিডিওটি দেখার জন্য ধন্যবাদ! দয়া করে মাথায় রাখবেন যে, এই পেজ থেকে প্যরোডি এবং নাটকও পোস্ট করা হয়। এই ছোটো ফিল্মগুলি শুধুমাত্র শিক্ষাদানের উদ্দেশ্য বানানো হয়েছে। ভিডিওটি দেখার জন্য ধন্যবাদ।"
আমরা দেখতে পাই ভিডিওটির শেষে একটি মেসেজ আসে যাতে লেখা রয়েছে, " কাউকে অন্ধভাবে বিশ্বাস করবেন না। ভিডিওটি দেখার জন্য ধন্যবাদ! দয়া করে মাথায় রাখবেন যে, এই পেজ থেকে প্যরোডি এবং নাটকও পোস্ট করা হয়। এই ছোটো ফিল্মগুলি শুধুমাত্র শিক্ষাদানের উদ্দেশ্য বানানো হয়েছে"।
এই ফেসবুক পেজটিতে এ রকম আরও বেশ কিছু অভিনীত নাটকের ভিডিও রয়েছে।
আমরা ওই ফেসবুক পেজে আরও একটি ভিডিও দেখতে পাই, যাতে ওই একই রেস্তোরাঁর দৃশ্য রয়েছে কিন্তু আলাদা অভিনেতাদের দেখা যাচ্ছে।
বুম হামসা নন্দিনীর সঙ্গেও যোগাযোগ করে। তাদের উত্তর পেলেই এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে তা জানিয়ে দেওয়া হবে।আরও পড়ুন: উত্তরপ্রদেশে বিজেপি বিধায়ককে গ্রামে ঢুকতে বাধা? পুরনো ভিডিওটি বিহারের