রাস্তা ধসে এক মহিলার গর্তে পড়ে যাওয়ার ভিডিও সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশের (Uttar Pradesh) ঘটনা দাবি করে ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। সমাজমাধ্যম ব্যবহারকারীদের অনেকে অযোধ্যার (Ayodhya) নবনির্মিত রামপথের (Rampath) অবস্থা দাবি করে ভিডিওটিকে শেয়ার করেছেন।
বুম যাচাই করে দেখে ভাইরাল দাবিটি ভুয়ো। আমরা দেখি ভাইরাল ভিডিওটি অযোধ্যায় নয় বরং ২০২২ সালে ব্রাজিলে তোলা।
উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায় রাম মন্দির তৈরি হওয়ার পর এবছরের প্রথম ভারী বর্ষণে নতুন তৈরি রামপথের দশটিরও বেশি জায়গায় রাস্তা ধসে যায় ও একাধিক জায়গা জলমগ্ন হয়। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের নির্দেশে ছয় জন পিডব্লিউডি ও জল নিগমের আধিকারিককে সাসপেন্ডও করা হয়েছে বলে জানা যায়। এই ঘটনাগুলির পরিপ্রেক্ষিতেই ভাইরাল এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সমাজমাধ্যমে।
ফেসবুকে ভিডিওটি শেয়ার করে একজন ব্যবহারকারী ক্যাপশন হিসাবে লেখেন, "প্রথম বর্ষাতেই অযোধ্যার রামপথের অবস্থা এই। মোট ১৩ কিলোমিটার রাস্তা তৈরিতে খরচ করা হয়েছে ৮৪৪ কোটি, অর্থাৎ প্রতি কিলোমিটারে খরচ হয়েছে ৬৫ কোটি টাকা। এটি তৈরি করেছে গুজরাটের ভুবন ইনফ্রাকম প্রাইভেট লিমিটেড, যারা আবার উনিজীর দলকে ইলেক্টোরাল বন্ডে কোটি কোটি টাকা ডোনেশন দিয়েছেন। তাহলে কি বুঝলেন শেষমেষ?? "না খাউঙ্গা, না খানে দুঙ্গা"!!"
ভিডিওটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
একই ক্যাপশনসহ আরও একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী ভিডিওটি শেয়ার করেছেন।
ভিডিওটি দেখুন এখানে এবং আর্কাইভ দেখুন এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম ভাইরাল ভিডিওটির সত্যতা যাচাই করে দেখে ভিডিওটি অযোধ্যার নয়, সেটি আদতে ব্রাজিলের সিয়ারা রাজ্যের ভিডিও।
আমরা দাবিটি যাচাই করতে প্রথমে গুগলে ভাইরাল ভিডিওটির কিফ্রেমের রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। ওই সার্চের মাধ্যমে আমরা ব্রাজিলিয়ান সংবাদমাধ্যম এসবিটি নিউজের ইউটিউব চ্যানেলে ২০২২ সালের ৩ জুন আপলোড করা একটি ভিডিও প্রতিবেদন পাই।
পর্তুগিজ ভাষায় ওই ভিডিওর শিরোনাম হিসেবে লেখা হয়, "মুলহার কামিনহা ই কাই এম ক্রাতেরা কে সে আব্রিউ এম ক্যালসাদাও"-এর বাংলা অনুবাদ হয় "হাঁটতে হাঁটতে এক মহিলা রাস্তায় একটি খোলা গর্তে পড়ে যান।"
ভিডিওটি দেখুন এখানে।
ওই ভিডিও প্রতিবেদনের শুরুতে, ৯ সেকেন্ড অংশে, একজন মহিলা রাস্তায় হাটতে হাটতে হঠাৎ একটি গর্তে পড়ে যায় ও তারপরে দুজন লোককে তাকে সাহায্য করার জন্য ছুটে যেতে দেখা যায়।
এরপর আমরা গুগলে সম্পর্কিত কিওয়ার্ড সার্চ করে ইটাতিয়াইয়া.কম নামক একটি ব্রাজিলিয়ান সংবাদ ওয়েবসাইট খুঁজে পাই। সেখানে আমরা ২০২২ সালের ৩ জুন প্রকাশিত এক প্রতিবেদন পাই যার মূল ছবি হিসেবে ভাইরাল ভিডিওটির এক স্ক্রিনশট দেখতে পাওয়া যায়।
ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, গর্তে পড়ে যাওয়া মহিলাটিকে ঘটনাস্থলের কাছাকাছি থাকা মানুষেরা উদ্ধার করেন। প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, আকস্মিক এই ঘটনার কারণে ওই মহিলা ভয় পেয়ে গেলেও তিনি সুস্থ ছিলেন ও তারপর বাড়িতে বিশ্রাম করেছেন। প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে।
এছাড়াও, আমরা অযোধ্যা পুলিশের অফিসিয়াল এক্স হ্যান্ডলে অনুসন্ধান করে ভাইরাল এই ভিডিওর সম্পর্কে এক স্পষ্টীকরণ দেখতে পাই। ওই পোস্টে পুলিশ জানায় ভিডিওটির সাথে করা দাবি ভুয়ো এবং পুলিশ এই সংক্রান্ত একটি মামলা দায়ের করে ভিডিওটি খতিয়ে দেখছে।
অযোধ্যা পুলিশ তাদের আধিকারিক এক্স হ্যান্ডেলে এবিষয়ে সেখানকার পুলিশ সুপারের এক ভিডিও পোস্ট করে হিন্দিতে লেখে, "সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে বিভ্রান্তিকর ভিডিও শেয়ার করে জনপথ অযোধ্যার রামপথ দাবি করার জন্য থানা কো০ নগরের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে, পুলিশ দ্বারা নেওয়া ব্যবস্থা সম্পর্কে শহরের পুলিশ সুপারের বক্তব্য।"
পোস্টটি দেখুন এখানে।