সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি সুরঙ্গের মধ্যে অগুন্তি মানুষের হাড় ও কঙ্কালের ভিডিও ও কিছু ছবি ভাইরাল হয়েছে। সেগুলি শেয়ার করে সমাজমাধ্যম ব্যবহারকারীরা ভুয়ো দাবি করেছেন সেটিতে বাংলাদেশের (Bangladesh) একটি গোপন অত্যাচার কেন্দ্র আয়নাঘরের (House of Mirrors) দৃশ্য দেখা যায়।
বুম যাচাই করে দেখে ভিডিও ও ছবিগুলি প্যারিসের জনপ্রিয় ভ্রমণস্থান "দ্য ক্যাটাকম্বস"-এর; বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত আয়নাঘরের নয়।
৫ আগস্ট ২০২৪ শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। শেখ হাসিনার শাসনকালে মূলতঃ সরকার বিরোধী বা রাজনৈতিক বন্দীদের গোপন বন্দিশালা বা ডিটেনশন ক্যাম্পকে আয়নাঘর নাম দেওয়া হয়। ঢাকা ক্যানটনমেন্ট এলাকায় অবস্থিত আয়নাঘরে জানা যায় ২০০৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত মোট ৬০৫ জনকে আটক করে রাখা হয়।
অত্যাচার কেন্দ্র হিসাবে খ্যাত আয়নাঘর দাবি করে ছড়িয়ে পড়েছে এই ভাইরাল ভিডিও এবং ছবিগুলি। ভাইরাল ভিডিওতে একটি সিমেন্টের দেওয়ালের সুরঙ্গ পথের মধ্যে অগুন্তি মানুষের হাড় ও কঙ্কাল পরে থাকতে দেখা যায়। ভিডিওটির উপরে "শেখ হাসিনার আয়না ঘর" লেখাটি দেখা যায়।
একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশন হিসাবে লিখেছেন, "না-জানি কতো মায়ের সন্তান এখানে শেষ হয়েছে। আয়না ঘরের আন্ডারগ্রাউন্ড।"
পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
আরও একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী কিছু ছবি শেয়ার করে লেখেন, "খুনি শেখ হাসিনার আয়না ঘর,,,,, আয়না ঘর নাম শুনেছেন কিন্তু এর ভয়াবহতা দেখেন নি! ছবিতে দেখলেই বুঝতে পারবেন.....(ঢাকার ডিজিএফআইয়ের গোপন ট র্চা র সেল এবং বন্দিশালা।"
পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম দাবিটির সত্যতা যাচাই করতে ভাইরাল ভিডিওর কিফ্রেমের রিভার্স ইমেজ সার্চ করে। সার্চের মাধ্যমে ভাইরাল ভিডিওর অনুরূপ এক ভিডিও আমরা টিকটকে পেয়ে যাই।
achilles.bc টিকটক চ্যানেলটিতে দেওয়া ভিডিওর বর্ণনা অনুযায়ী সেটিতে প্যারিসের "দ্য ক্যাটাকম্বস"-এর ভিতরের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।
১৮০০ শতকে তৈরি প্যারিসের ক্যাটাকম্বস একটি ভূগর্ভস্থ কবরস্থান যেখানে ছয় মিলিয়নেরও বেশি মানুষের কঙ্কাল রয়েছে। প্যারিসের কবরস্থানগুলিতে জায়গার অভাব হলে এই ক্যাটাকম্বস তৈরি করা হয়। বর্তমানে প্যারিসের ক্যাটাকম্বস একটি পর্যটন কেন্দ্র।
নীচে ভাইরাল ভিডিওর স্ক্রিনশটের সঙ্গে টিকটকে পাওয়া প্যারিসের ক্যাটাকম্বসের ভিডিওর একটি তুলনা দেওয়া হল।
এছাড়াও, আমরা শেখ হাসিনার শাসনকালের গোপন বন্দিশালা আয়নাঘরের কিছু ছবি নেত্র নিউজের আয়নাঘর সংক্রান্ত প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে দেখতে পাই যা ভাইরাল ছবি ও ভিডিওর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।
প্রতিবেদন অনুযায়ী ছবিগুলি নেত্র নিউজকে দেন একজন মিলিটারি অফিসার যিনি আয়নাঘরের অস্তিত্ব সম্পর্কে অবগত ছিলেন। তার দেওয়া ছবিগুলি আয়নাঘরের দুই বন্দী হাসিনুর রহমান এবং শেখ মহম্মদ সেলিমের দেওয়া বর্ণনার সঙ্গে মিলে যায়।