সোশাল মিডিয়ার বেশ কিছু পোস্টে স্ন্যাকস নির্মাতা সংস্থা হলদিরাম-এর (Haldiram) ইতিহাসকে (History) বিকৃত করে দাবি করা হচ্ছে যে, এটির মালিকানা মুসলিমদের (Muslims) হাতে চলে গেছে।
অথচ এই দাবির সপক্ষে কোনও প্রমাণ নেই, কেননা সরকারি নথিপত্র এবং কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রকের তথ্যে এই বিকৃতির কোনও সমর্থনও নেই।
হলদিরামসের 'ফলাহারি মিশ্রণ'-এর প্যাকেটে আরবি ভাষায় কিছু লেখা দেখে এ মাসের শুরুতে সোশাল মিডিয়ার কয়েকটি পোস্টে এই অপপ্রচারটি শুরু হয়। হিন্দুত্বের সমর্থক চ্যানেল 'সুদর্শন টিভি'র এক প্রতিবেদক হলদিরামসের দোকানে চুপি-চুপি প্রবেশ করে এক কর্মচারী মারফত এই আরবিতে লেখা মোড়কের বিষয়টি বার করে আনেন।
ভাইরাল হওয়া ভুয়ো পোস্টটিতে দাবি করা হয়, এক অজ্ঞাত প্রতিষ্ঠাতার ছেলে জনৈক 'ঘসি লাল' (কাল্পনিক চরিত্র) একটি কারখানায় এই স্ন্যাকস-এর ব্যবসাটি শুরু করেন এবং তাঁরই দুই পুত্র নরেশ খাণ্ডেলওয়াল এবং যোগেশ ব্যবসাটি মুসলিমদের কাছে বেচে দিয়েছেন!
সংস্থাটির সূচনা হয়েছিল ১৯৩৭ সালে রাজস্থানের বিকানেরে গঙ্গাভীষেণ অগ্রবালের হাতে (যাঁকে লোকে হলদিরাম বলে ডাকত) এবং বর্তমানে তাঁর নাতিপুতিরা ৩টি আলাদা অঞ্চলে ভাগ করে এই সংস্থার ব্যবসাটি চালান।
ভাইরাল হওয়া ভুয়ো দাবিটি হিন্দির অনুবাদ হল, "আপনি হয়ত জানেন না হলদিরামসের বর্তমান মালিকানা মুসলিমদের। মালিক নরেশ খান্ডেলওয়াল কোম্পানি বিক্রি করে দেয় মুসলিমদের। হলদিরাম ছিল ওদের দাদু যে খাস্তা নোনতা নিমকি বিক্রি করতো। তাঁর ছেলে ঘসি লাল একটি কারখানা স্থাপন করে যাতে সর্বত্র এই খাবার পৌঁছাতে পারে। তাঁর ছেলে যোগেশ ও নরেশ এটা বিক্রি কর দেয় এক মুসলিমকে। হলদিরামস ব্রান্ড হয়ে গেছে। কিন্তু এর সঙ্গে পবিত্রতার কোনও সম্পর্ক নেই। এখনকার দিনে এটা হোটেল, ধাবা, প্রাতরাশ বেচা ঠেলাগাড়ি প্রভৃতিতে হিন্দু নামে বিক্রি হচ্ছে।"
(মূল হিন্দিতে পোস্টটি: आप सब को पता नहीं है कि #हल्दीराम_नमकीन अब वर्तमान में मुस्लिम के अधीन है । इसका मालिक नरेश खण्डेलवाल ने यह कम्पनी एक मुस्लिम को बेच दी है। हल्दी राम इसके दादा थे और उन्होंने ही नमकीन बनाने का कार्य किया जो कि अच्छा चला तो हल्दी राम के पुत्र घासी लाल ने इसे फेक्ट्री लगा कर जन जन तक पहुंचाने का कार्य किया । फिर इनके लडके योगेश व नरेश दोनों लडकों ने मुस्लिम को यह कम्पनी बेच दी है हल्दी_राम एक ब्रांड बन गया है. लेकिन यह विधर्मियों के अधीन है, अतः शुद्धता का तो दूर - दूर तक ही नाता नहीं है । ऐसे में यह नमकीन का प्रयोग ना करें। ये आजकल हिन्दू नाम से होटल, ढाबे, नाश्ता ठेला आदि भगवान के नाम पर चला रहे हैं)
সোশাল মিডিয়াতেও দেখা যাবে একই পোস্ট।
আরও পড়ুন: কেরলে কি সত্যি মুসলিমরা এক মন্দিরকে মসজিদে বদলে দিল? তথ্য যাচাই
তথ্য যাচাই
১. হলদিরাম কী ভাবে বেড়ে উঠলো?
আদি হলদিরাম গঙ্গাভীষেণ অগ্রবালের বিকানেরের একটি দোকান থেকে এই সংস্থার উৎপত্তি। কলকাতায় একটা বিয়ের আসরে গিয়ে তিনি এই সংস্থা তৈরির ধারণা পান এবং সেই শহরে একটি শাখাও চালু করেন।
হলদিরাম-এর পর তাঁর দ্বিতীয় প্রজন্ম ব্যবসাটিকে খুব একটা বাড়াতে পারেনি। অন্তত আগরওয়াল তথা হলদিরামের উত্থান ও বিকাশ নিয়ে পবিত্র কুমারের লেখা বই 'ভুজিয়া ব্যারনস' অনুযায়ী।
তাঁর 'ছেলে' ঘসিলাল ব্যবসাটিকে অনেক বাড়িয়েছিলেন বলে যে ভুয়ো দাবি করা হয়েছে, তার সঙ্গে এই তথ্যের কোনও সামঞ্জস্য নেই। বরং হলদিরামসের ব্যবসা ও বিপণন ব্যাপকভাবে বাড়ে এবং নাগপুর, দিল্লি ও কলকাতায় ছড়িয়ে পড়ে তাঁর নাতিদের হাত ধরেই।
২. আজ হলদিরাম-এর অবস্থা কী?
হলদিরামের নাতিদের পরিচালনায় বর্তমানে তিনটি স্বতন্ত্র সংস্থা তিনটি পৃথক অঞ্চলে ব্যবসা করে চলেছে।
পবিত্র কুমারের বই অনুযায়ী হলদিরামের অন্যতম নাতি শিব কিষেণ অগ্রবাল পুণেতে সংস্থার শাখাটি পরিচালনা করেন, যেটি 'হলদিরামস সুইটস প্রাইভেট লিমিটেড' নামে পরিচিত। অন্য দুই নাতি মনোহরলাল এবং মধুসূদন অগ্রবাল দিল্লিতে সংস্থার ব্যবসা পরিচালনা করেন, যার নাম 'হলদিরামস প্রডাক্টস প্রাইভেট লিমিটেড'। আর কলকাতার সংস্থাটি 'প্রভুজি' নাম দিয়ে রকমারি স্ন্যাকস বাজারজাত করে 'হলদিরামস ভুজিয়াওয়ালা প্রাইভেট লিমিটেড'-এর নামে।
এর মধ্যে পবিত্র কুমারের মতে দিল্লির শাখাটিই বৃহত্তম।
পবিত্র কুমার ফর্বস পত্রিকায় 'হলদিরামস'-কে নিয়ে লেখা তাঁর প্রতিবেদনে পরিবারের শাখা-প্রশাখারও বিবরণ দিয়েছেনl সেখানে কোথাও হলদিরামের ছেলে হিসাবে ঘসিলাল কিংবা নাতি হিসাবে যোগেশ বা নরেশের উল্লেখ নেই, যেমনটা ভাইরাল পোস্টে দাবি করা হয়েছে।
কুমারের লেখা ফর্বস-এর প্রতিবেদনে পড়তে পারেন।
৩. সরকারি তথ্য
কেন্দ্রীয় কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রকের সরবরাহ করা তথ্যেও হলদিরামসের সঙ্গে মুসলিমদের যুক্ত থাকার কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কলকাতার শাখাটিতে যেমন ৬ জন ডিরেক্টরের উল্লেখ রয়েছে, যাঁদের কেউই মুসলিম নন। সেই তালিকাটি ডাউনলোড করতে পারেন এখানে।
দিল্লিতে হলদিরামসের শাখাটিতেও ৪ জন ডিরেক্টর রয়েছেন, যার মধ্যে মনোহরলাল অগ্রবাল এবং মধুসূদন অগ্রবালের নামও আছে। সেই তালিকা দেখে নিন এখানে।
আর সংস্থার নাগপুর শাখার ডিরেক্টরদের মধ্যেও যে একজনও মুসলিম নেই, সেটাও এই তালিকা থেকে দেখে নিতে পারেন।
কেন্দ্রীয় সরকারের র্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রকের ওয়েবসাইটেও এ সম্পর্কে বিস্তারিত প্রামাণ্য তথ্য পেতে পারেন। উৎসাহীদের ওয়েবসাইটে গিয়ে সংস্থার নামটি টাইপ করতে হবে, তারপর 'হলদিরাম' এই মূল শব্দটি বসাতে হবে।
তবে এই প্রথম যে হলদিরামসের খাবার নিয়ে এ ধরনের ভুয়ো খবর প্রচার হচ্ছে, এমনও নয়। বুম অতীতেও এ নিয়ে ভুয়ো পোস্টের পর্দাফাঁস করেছে, বিশেষত আরবি ভাষায় লেখা মোড়ক এবং 'ফলাহারি মিশ্রণ'-এ মাংস মেশানো নিয়ে।
আরও পড়ুন: তথ্য যাচাই: সবচেয়ে বেশিদিন একটানা মহাকাশে কাটিয়েছেন নসার নভশ্চর ক্রিস্টিনা কোচ?