তাইল্যান্ডের (Thailand) পাটায়ায় একটি দু'বছরের শিশুর উপর একটি কুকুরের আক্রমণের মর্মান্তিক ভিডিও শেয়ার করে মিথ্যা দাবি করা হয়েছে যে ঘটনাটি মহারাষ্ট্রের (Maharashtra) পুণেতে ঘটেছে।
পাঁচ মিনিট দীর্ঘ ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে যে, একটি দু'বছরের শিশুর উপর একটি বকলসহীন পিটবুল ঝাঁপিয়ে পড়ছে, এবং তার ভয়ঙ্কর আক্রমণে শিশিটি মারাত্মক রকম জখম হচ্ছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে যে, শিশুটি এক মহিলা এবং অন্য একটি শিশুর সঙ্গে হাঁটতে বেরিয়েছে।
আচমকাই পিটবুলটি শিশুটিকে তাড়া করে। কুকুরটির মালিক একটি গেট খোলা রেখেছিলেন, সেই গেট দিয়েই কুকুরটি বেরিয়ে আসে। শিশুটির সঙ্গে যে মহিলা ছিলেন, তিনি এবং অন্য এক মহিলাও ক্রমাগত কুকুরটিকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন, কিন্তু তা সত্ত্বেও কুকুরটি বার বার শিশুটির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ছিল।
ভিডিওটি অস্বস্তিকর বলে বুম সেটি এখানে দেয়নি।
ভিডিওটির সঙ্গে যে দাবি করা হয়েছে তাতে লেখা, "উপরের ঘটনাটি গতকাল সকালে পুণের হাদাপসার অঞ্চলে ঘটে।"
আরও পড়ুন: জি নিউজে মিথ্যে খবর উদয়পুরের অভিযুক্তদের রাহুল গাঁধী 'বাচ্চা' বলেছেন
তথ্য যাচাই
বুম অনুসন্ধান করে দেখতে পায় যে, ভিডিওটি আদৌ ভারতের নয়, এটি তাইল্যান্ডের পাটায়ার ঘটনা, এবং শিশুটি প্রাণে বেঁচে গেলেও তার মাথায় এবং গালে গভীর ক্ষত হয়েছে।
প্রথমে টুইটারে এক জন ভিডিওটি শেয়ার করলে তা আমাদের চোখে পড়ে, কিন্তু তখন একে ভারতের ঘটনা বলে দাবি করা হয়নি। ভিডিওটি টুইটারের নিয়ম উল্লঙ্ঘন করছে বলে পরে তা মুছে দেওয়া হয়। ওই টুইটে এক জন একটি সংবাদ প্রতিবেদনের লিঙ্ক দিয়ে জানান যে, ঘটনাটি তাইল্যান্ডের।
'তাইল্যান্ডে শিশুর উপর কুকুরের আক্রমণ' এই শব্দগুলি দিয়ে গুগলে সার্চ করি। তাতে আমরা বিভিন্ন থাই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত অনেকগুলি সংবাদ প্রতিবেদন দেখতে পাই। সেই প্রতিবেদনগুলিতে উল্লেখ করা হয় যে, ঘটনাটি তাইল্যান্ডের দক্ষিণ পাটায়ার চোনবুরি প্রদেশের বাং লামুং জেলায় ঘটেছিল।
পাটায়া নিউজ নামে একটি স্থানীয় সংবাদমাধ্যম দু'জন প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলেন, যাঁরা ওই সময় শিশুটিকে উদ্ধার করায় সাহায্যও করেছিলেন। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, "প্রত্যক্ষদর্শীদের নাম ফাদার সমকিয়াত (৬৭) এবং জেট (৩৯)। তাঁরা জানান যে, চার এবং দুই বছর বয়সি দু'টি বিদেশি শিশুকে নিয়ে তাদের আয়া যখন একটি গ্রামের বাড়ির খোলা দরজার সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখনই ঘটনাটি ঘটে। সিসিটিভিতে দেখা গিয়েছে যে, একটি বড় কালো রঙের কুকুর বাড়িটির ভিতর থেকে সেই আয়া এবং বাচ্চা দু'টিকে দেখে চিৎকার করতে থাকে, এবং চার বছরের শিশুটি তাতে থমকে যায়। আবর্জনা বার করে দেওয়ার পর নাকি দরজাটি ভুল করে খোলা থেকে গিয়েছিল।
বর্তমানে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটির স্ক্রিনশট ওই প্রতিবেদনেও দেওয়া হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, "…ফাদার সমকিয়াত এবং জেটসহ যাঁরা ওই ঘটনা দেখে এগিয়ে আসেন, তাঁদের সবার সাহায্য নিয়ে ন্যানি এবং অন্য এক পরিচারিকার প্রায় চার মিনিট সময় লেগেছিল কুকুরটিকে বাচ্চাটির উপর ভয়ঙ্কর আক্রমণ করা থেকে আটকাতে।"
দ্য ব্যাংকক পোস্ট নামের অন্য একটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, শিশুটির চোয়াল ভেঙ্গে গিয়েছে, এবং তার গালে ও মাথায় ক্ষত হয়েছে। তার শরীরে মোট ২০০টি সেলাই দিতে হয়েছে। তবে, সে আপাতত বিপন্মুক্ত।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, শিশুটির বাবা-মা পাটায়ার স্থানীয় থানায় কুকুরটিকে যথাযথ ভাবে বেঁধে না রাখা, এবং সুরক্ষিত না রাখার জন্য মালিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন।
আমরা বিভিন্ন থাই সংবাদমাধ্যমে এই ঘটনার উপর আরও বিশদ সংবাদ দেখতে পাই, যেখানে বলা হয়েছে যে, ঘটনাটি ২০২২ সালের ২০ জুন ঘটে। ডেলি নিউজ নামে একটি স্থানীয় সংবাদপত্রে প্রকাশিত এরকমই একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে, ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর কুকুরটির মালিক বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছেন, এবং তাঁদের আর দেখা যায়নি।
আরও পড়ুন: অর্ণব গোস্বামীর নাচের ভিডিও উদ্ধব ঠাকরের ইস্তফার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়