জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ বিলের মতো (Population Control Bill) গুরুত্বপূর্ণ আইন পাশ হলে দেশে গৃহযুদ্ধ বেঁধে যেতে পারে, এই মর্মে সুপ্রিম কোর্টের বরিষ্ঠ আইনজীবী হরিশ সালভের (Harish Salve) নামে যে হুঁশিয়ারি ছড়ানো হয়েছে, তা ভিত্তিহীন এবং ভুয়ো।
সালভের দফতরে যোগাযোগ করে বুম জানতে পেরেছে, যে, এই সংক্রান্ত বার্তাটি সম্পূর্ণ ভুয়ো। বরং বুম জেনেছে যে, এর ঠিক বিপরীতটাই সত্য।
হিন্দিতে ভাইরাল হওয়া ওই বার্তাটি ফেসবুক-এর দক্ষিণপন্থী কিছু পোস্ট থেকে ছড়ানো হয়েছে। তাতে দাবি করা হয়েছে, আগামী নভেম্বর মাসের মধ্যেই বিজেপি রাজ্যসভাতেও সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে যাবে, আর তার পরেই তারা ২৫টি বিল এক-এক করে পাশ করিয়ে নেবে, যার মধ্যে একটি হল—জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ আইন।
বার্তায় এর পরেই হুঁশিয়ার করা হয়েছে যে, এর পরেই দেশে হিন্দু-মুসলিম ধর্মীয় আনুগত্যের ভিত্তিতে রীতিমত গৃহযুদ্ধ বেধে যাবে। তখন রাস্তায়-রাস্তায়, মহল্লায়-মহল্লায় হিন্দু সংগঠনগুলিকে প্রতিরোধে নামার ডাক দেওয়া হবে, যাতে ভবিষ্যতে হিন্দুদের অস্তিত্ব বিপন্ন না হয়ে পড়ে।
বার্তাটি আদিতে হিন্দি ভাষায় ছড়ানো হলেও বুম-এর হোয়াটসঅ্যাপ হেল্পলাইন নম্বরে (৭৭০০৯০৬৫৮৮) তার একটি ইংরাজি অনুবাদও এসে পৌঁছেছে। বার্তাটি নিচে দেখুন।
আরও পড়ুন: ভুয়ো দাবিতে ছড়াল বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষের কাশীপুরের ঘাটে তর্পণের ছবি
তথ্য যাচাই
হরিশ সালভে তো তাঁর নামে ভাইরাল করা এই ভুয়ো বার্তাটির সত্যতা অস্বীকার করেছেনই। তা ছাড়াও বুম এ বিষয়ে যেটুকু জানতে পেরেছে, তা থেকে বার্তাটির অসত্যতা স্পষ্ট হয়।
১. রাজ্যসভায় বিজেপির গরিষ্ঠতা অর্জন
রাজ্যসভা হল সংসদের উচ্চতর কক্ষ। যদিও নিম্নতর কক্ষ লোকসভায় বিজেপির গরিষ্ঠতা রয়েছে, তথাপি রাজ্যসভায় এখনও তার প্রয়োজনীয় সংশ্যক সদস্য নেই, যদিও দলের সদস্যসংখ্যা ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই সংসদের রাজ্যসভায় কোনও আইন পাশ করতে গেলে বিজেপিকে এখনও এনডিএ-তে তার সহযোগী দলগুলির উপর নির্ভর করতে হয়। রাজ্যসভার সদস্যসংখ্যা ২৪৫, আর গরিষ্ঠতার জন্য ১২৩ জন সদস্যের অনুমোদন প্রয়োজন।
কিন্তু, ৩০ এপ্রিল, ২০২২ পর্যন্ত, রাজ্যসভায় বিজেপির সাংসদ সংখ্যা মাত্রই ৯৬ বলে দেখানো হচ্ছে।
গত মার্চ মাসে সর্বশেষ দফার শূন্য আসনগুলির নির্বাচনের পর একটি সমীক্ষায় দেখানো হয়েছে, রাজ্যসভায় বিজেপি সাংসদদের সংখ্যা ১০১। আর এই হিসাব অনুসারেই বিজেপি জোট এনডিএ-র রাজ্যসভার শক্তি ১১৭, যা গরিষ্ঠতার চেয়ে অনেক পিছনে।
এই সংখ্যাহ্রাসের কারণ অবশ্য মার্চ ও এপ্রিল মাসে বেশ কয়েকজন সভাসদের অবসরগ্রহণ। এই মুহূর্তে যেমন রাজ্যসভায় ১৫টি আসন শূন্য হয়ে রয়েছে। সুতরাং এই যে দাবি করা হচ্ছে যে, নভেম্বরের মধ্যে বিজেপি রাজ্যসভায় ১২৩টি আসনের অধিকারী হয়ে গরি্ষ্ঠতা অর্জন করে ফেলবে, অর্থাত্ আরও ১৭টি আসন দখল করে নেবে, সেটা ভুয়ো দাবি। অন্তত ২০২৪ সাল পর্যন্ত এ ধরনের হঠাৎ স্ফীতির কোনও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। আর সেটাও নির্ভর করছে এ বছরের শেষে গুজরাত ও হিমাচল প্রদেশে এবং আগামী বছরে কর্নাটক, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও ছত্তিশগড়ের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের উপর।
২. জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ আইন চালু হবে?
এই ধরনের একটি আইনের দাবির উত্স কী, সেটা নিশ্চিত নয়। কেননা সরকার নিজেই জানিয়েছে যে, যেহেতু দেশের ঊর্বরতা ও জন্মহার ক্রমশই পড়তির দিকে, তাই এখানে জনসংখ্যার উপর কোনও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করার প্রশ্ন নেই।
তবে উত্তরপ্রদেশ কিংবা মহারাষ্ট্রের মতো রাজ্যে অবশ্য কোনও-না-কোনও প্রকরণে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের বিল চালু রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার মনে করে, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করার আইনের বিপরীত পরিণাম হতে পারে। কেরল, পশ্চিমবঙ্গ এবং তামিলনাড়ুর মতো রাজ্যে জনসংখ্যার হার কোনও আইন ছাড়াই নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
দক্ষিণপন্থীদের প্রচার করা একটি ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব বলে, মুসলিমরা নাকি এ দেশে বেশি-বেশি করে সন্তান উৎপাদনের উপর জোর দিচ্ছে, যাতে একদিন এই দেশে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়ে যেতে পারে। আর এই তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে তারা মাঝে-মধ্যেই জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে আইন আনার দাবি তোলে।
আরও পড়ুন: ভুয়ো দাবি: টাইগার শ্রফ ও তারা সুতারিয়া ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন