সম্প্রতি সমাজমাধ্যম ব্যবহারকারীরা মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার ও প্রধান উপদেষ্টা ডঃ মহম্মদ ইউনূস সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদনের ছবি সত্যি দাবিতে শেয়ার করেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।
বুম যাচাই করে দেখে দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনের ভাইরাল ছবিটি ভুয়ো। মার্কিন ওই সংবাদমাধ্যম এবং বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস শাখা উভয়ের তরফেই এবিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।
ভাইরাল প্রতিবেদনের ছবি অনুযায়ী, দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের এক রিপোর্টে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশ সেনা প্রধান ওয়াকার-উজ-জামান সহ ৬৭ জন সিনিয়র আর্মি অফিসার ও ৩৮৭২ জন মিলিটারি অফিসারকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়। এছাড়াও, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মহম্মদ শাহবুদ্দিনকে জোর করে অপসারণের উল্লেখও করা হয়েছে।
এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ছবিটি পোস্ট করে ক্যাপশনে দাবি করেছেন, "সুদখোর ইউনুসের বিষয়ে আমেরিকার ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা ভয়াবহ নিউজ প্রকাশ করেছে৷ ইউনূস সরকারের ছাত্র গ্রুপ যে জঙ্গিবাদের সাথে যুক্ত সেটা স্পষ্ট উল্লেখ করেছে পত্রিকাটি। শুধু তাই নয়, মহামান্য রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পুকে অপসারণের পরিকল্পনা করা হয়েছিলো ছাত্রদের দ্বারা মব জাস্টিস ঘটিয়ে। তারপর সেনাপ্রধান ওয়াকার, ৬৭ জন সিনিয়র আর্মি অফিসার, ৩৮৭২ জন মিলিটারি অফিসারকে বরখাস্ত করার পরিকল্পনা ছিলো ইউনূসের। এসবই বিশ্বস্ত সূত্র থেকে জেনেছে পত্রিকাটি।আমেরিকা যে পল্টি মেরেছে এটা জেনেই ড. ইউনূস অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এতো দ্রুত তার ভাগ্যলিপি বদলে যাবে তিনি ধারণা করতে পারেননি।"
পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম দাবিটির সত্যতা যাচাই করতে প্রথমে ওয়াশিংটন পোস্ট এই ধরণের কোনও প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে কিনা খতিয়ে দেখতে গুগলে কিওয়ার্ড সার্চ করে। তবে, সেই সার্চের মাধ্যমে আমরা উক্ত তথ্য সমেত দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের এমন কোনও প্রতিবেদন খুঁজে পাইনি।
আমরা দেখি ছবিটিতে সাংবাদিকের নাম জ্যাকি আলেমানি হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এরপর আমরা দ্য ওয়াশিংটন পোস্টের রাজনৈতিক সাংবাদিক জ্যাকলিন আলেমানির লেখক প্রোফাইল খুঁজে সেখানে উপস্থিত তার লেখা প্রতিবেদনগুলি পর্যবেক্ষণ করি। কিন্তু, ২০২৪ সালের অক্টোবর ২১ তার লেখা অন্য একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত দেখতে পাই, যা ভাইরাল প্রতিবেদন নয়।
আমরা তার প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলিতে লক্ষ্য করি সাংবাদিকের নামের জায়গায় জ্যাকি আলেমানি নয়, বরং তার পুরো নাম 'জ্যাকলিন আলেমানি' লেখা হয়েছে।
এরপর, আমরা দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট পিআর এক্স অ্যাকাউন্টে ২৫ অক্টোবর, ২০২৪-এর একটি পোস্টে ভাইরাল প্রতিবেদনের ছবিটি দেখতে পাই যেখানে তারা ভাইরাল ছবিটি ভুয়ো বলে এক স্পষ্টীকরণ প্রকাশ করে।
পোস্টটি দেখুন এখানে।
এছাড়াও, বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস শাখার তথ্য যাচাইয়ের একটি ফেসবুক পেজ দেখতে পাই। ওই পেজে ২৪ অক্টোবর, ২০২৪-এ ভাইরাল ছবিটি শেয়ার করে জানানো হয়েছে প্রতিবেদনের ছবিটি ভুয়ো।
ওই পোস্টটিতে লেখা হয়, "সম্প্রতি জনসাধারণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টায় একটি কুচক্রী মহল ওয়াশিংটন পোস্টের নামে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে একটি ভুয়া প্রতিবেদন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে। ওয়াশিংটন পোস্ট প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংকে নিশ্চিত করেছে যে প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট । সকলকে কোনো ধরনের গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানানো হচ্ছে।"
পোস্টটি দেখুন এখানে।