সোশাল মিডিয়ায় বিচারপতি দলবীর ভাণ্ডারি (Dalveer Bhandari) আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের (ICJ) প্রধান বিচারপতি হয়েছেন বলে যে দাবি উঠেছে, তা মিথ্যা। কেননা ভাণ্ডারি যে-আদালতের বিচারপতি, সেখানে সভাপতি ও উপ-সভাপতির পদ থাকলেও প্রধান বিচারপতির কোনও পদ নেই।
দাবিটিতে এমনও মিথ্যা ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, দলবীর ভাণ্ডারি এতদ্বারা ওই পদটিতে ব্রিটেনের বিগত ৭১ বছরের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ভেঙে দিয়েছেন।
আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের পরিসংখ্যান বলছে, ভারত সহ বিশ্বের যে-কোনও দেশ থেকেই কেউ ওই আদালতের সভাপতি হতে পারেনl তবে তথ্য বলছে, গত ৭১ বছরে যে ২৬ জন ওই পদটি অলংকৃত করেছেন, তাঁদের মধ্যে ৪ জনই ব্রিটেনের, যা যে-কোনও দেশের পক্ষে সর্বাধিক।
দলবীর ভাণ্ডারি ছাড়াও আরও ৩ জন ভারতীয় আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের বিচারপতির পদে থেকেছেনl তাঁদের মধ্যে নগেন্দ্র সিং ১৯৮৫ সাল থেকে ১৯৮৮ সালের ১১ ডিসেম্বর তাঁর মৃত্যুর আগে পর্যন্ত ওই আদালতের সভাপতিও ছিলেন।
এই আদালতের বর্তমান সভাপতি হলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন ই ডোনাহিউ।
ভুয়ো দাবিটি নীচে দেখুন:
"বিচারপতি দলবীর ভাণ্ডারি আগামী ৯ বছরের জন্য আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের প্রধান বিচারপতি নির্বাচিত হয়েছেন l তিনি ১৯৩টির মধ্যে ১৮৩টি ভোট পান l তার আগে পর্যন্ত গত ৭১ বছর ধরে ব্রিটেনই একচেটিয়া এই পদটি দখলে রেখেছিল l
ভারতের পক্ষে এটা একটা গর্বের মুহূর্ত l"
হিন্দিতেও এই ভুয়ো দাবিটি তোলা হচ্ছে।
বুম-এর হোয়াট্স্যাপ হেল্পলাইন নম্বরে (৭৭০০৬০৬৫৮৮) এর সত্যতা যাচাইয়ের অনুরোধ জানিয়ে বার্তাও এসেছে।
সোশাল মিডিয়ায় (ফেসবুক ও টুইটারে) এই ভুয়ো দাবিগুলি তোলা হয়েছে:
আর পড়ুন: ফের বিভ্রান্তি সহ ছড়াল কলকাতা পুলিশের পুরনো সচেতনতার উর্দু ফ্লেক্স
তথ্য যাচাই
১) আই সি জে কী?
আই সি জে হল রাষ্ট্রপুঞ্জের ৬টি মুখ্য সংস্থার একটি, যার কাজ হল রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রের আইনগত বিরোধের নিষ্পত্তি করা এবং রাষ্ট্রপুঞ্জকে পরামর্শ দেওয়াl
এই আদালতে মোট ১৫ জন বিচারপতি থাকেন, যাঁদের প্রত্যেকে ৯ বছরের জন্য নির্বাচিত হনl এই বিচারপতিদের একই সঙ্গে নির্বাচিত করা হয় রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভা এবং নিরাপত্তা পরিষদ, উভয় সমিতিতেl
২) দলবীর ভাণ্ডারি কি আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের প্রধান বিচারপতি?
না, তিনি এই আদালতের ১৫ জন বিচারপতিদের একজন, কিন্তু প্রধান বিচারপতি নন, কারণ ওই রকম কোনও পদও নেইl
এই আদালতের বিধি অনুসারে আদালতের প্রধান হচ্ছেন এর সভাপতি বা প্রেসিডেন্ট (এবং উপ-সভাপতিও), যাঁকে ৩ বছরের মেয়াদে নির্বাচিত করা হয়ে থাকেl
দলবীর ভাণ্ডারি ২০১২ সাল থেকে আই সি জে-তে বিচারপতি রয়েছেন, তবে ২০১৭ সালে তিনি আরও ৯ বছরের জন্য বিচারপতি নিযুক্ত হন (যা ২০১৮ সাল থেকে কার্যকর হয়ে ২০২৭ পর্যন্ত চলবে)l তিনি আগে দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি ছিলেন, তারপর মুম্বই হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি হন, এবং সবশেষে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিও নিয়ুক্ত হনl ওঁর সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে এখানে ক্লিক করুনl
তাঁর আগে আরও তিনজন ভারতীয় আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতের বিচারপতি থেকেছেন- স্যর বেনেগাল রাউ (১৯৫২-৫৩), নগেন্দ্র সিং (১৯৭৩-১৯৮৮) এবং রঘুনন্দন স্বরূপ পাঠক (১৯৮৯-১৯৯১)l
৩) কেবল ব্রিটিশরাই কি আই সি জে-র প্রধানের পদ আঁকড়ে থেকেছেন?
না, বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা এই আদালতের সভাপতির পদে থেকেছেন, যাঁদের মধ্যে ভারতীয় বিচারপতি নগেন্দ্র সিংও (১৯৮৫-৮৮) রয়েছেনl তবে ২৬ জন সভাপতির মধ্যে ৪ জনই থেকেছেন ব্রিটিশ, আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সের ৩ জন করে বিচারপতি সভাপতি হয়েছেন।
আন্তর্জাতিক আদালতের সভাপতি বা প্রেসিডেন্টদের তালিকাটি দেখুন নীচে:
৪) ভাণ্ডারি কি ১৯৩টির মধ্যে ১৮৩টি ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন?
হ্যাঁ l ভাণ্ডারি যখন ২০ নভেম্বর ২০১৭ সালে ৯ বছরের জন্য সভাপতির পদে নির্বাচিত হন, তখন রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদে তিনি ১৯৩টি রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের মধ্যে ১৮৩টি দেশের ভোটই পেয়েছিলেন।
ভারতীয় বিদেশ মন্ত্র কেবল ভাণ্ডারির প্রার্থীপদ সমর্থনই করেনি, তিনি যাতে জিততে পারেন, সে জন্য সাধারণ পরিষদ ও নিরাপত্তা পরিষদে কূটনৈতিক তত্পরতাও চালিয়েছিল।
ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক জানায়: "রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভা ও নিরাপত্তা পরিষদে ভোটাভুটিতে ভাণ্ডারি বিপুল ব্যবধানে জয়লাভ করেন l নিরাপত্তা পরিষদের ১৫টি ভোটের সবকটিই তিনি পান আর সাধারণ সভার ১৯৩টি সদস্যরাষ্ট্রের মধ্যে ১৮৩টিই তাঁকে নির্বাচিত করে l"
২০১৭ সালে ভাণ্ডারির নির্বাচিত হওয়া সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রকের এখানে পাওয়া যাবে।
আর পড়ুন: ২০১৫ সালে ইয়েমেনে সুরক্ষা যাচাই আফগানিস্তান বিমানবন্দরের ছবি বলে ছড়াল