ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) দ্বিতীয়বার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার উপলক্ষে বাংলাদেশের (Bangladesh) অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূসের (Muhammad Yunus) তাকে অভিনন্দন জানানোর একটি ভুয়ো বিবৃতি ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ভুয়ো বিবৃতিতে দেখা যায় ডঃ ইউনূস ট্রাম্পকে 'মসীহা' (messiah) বলে সম্বোধন করেছেন।
এই ভাইরাল ভুয়ো নথিতে ট্রাম্পকে 'মসীহা' বলা কেন্দ্র করে সংবাদমাধ্যম রিপাব্লিক টিভি খবর প্রকাশ করে।
বুম দেখে ইউনূস ট্রাম্পের সাফল্য ও মার্কিন রাষ্ট্রপতি হিসাবে তার দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য তার শুভেচ্ছা প্রকাশ করলেও মূল চিঠিতে 'মসীহা' বা অতিরঞ্জিত শ্রদ্ধা প্রকশ করা অন্য কোনও বিশেষ শব্দ ব্যবহার করেননি।
বহু পর্যালোচিত মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ৬ নভেম্বর, ২০২৪-এ অনানুষ্ঠানিক ভাবে সমাপ্ত হয় যখন ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিসকে পিছনে ফেলে ইলেক্টোরাল কলেজে ব্যাপক ব্যবধানে এগিয়ে তার জয় নিশ্চিত করেন। মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়া সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তি হওয়ার পাশাপাশি ট্রাম্প রাষ্ট্রপতি পদে জয়ী প্রথম দোষী সাব্যস্ত অপরাধী যার বিরুদ্ধে তিনটি ফৌজদারি মামলা এখনও বিচারাধীন রয়েছে।
বিশিষ্ট আমেরিকান সংবাদমাধ্যমগুলি মার্কিন নির্বাচনের ফল ঘোষণা করে। তার পরের দিন এই ভুয়ো নথিটি প্রকাশিত হয় যেখানে দাবি করা হয়েছে সেটি ইউনূসের কার্যালয়ের স্বাক্ষরিত এবং প্রকাশিত একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি।
গত ৩১ অক্টোবর ট্রাম্প বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক উত্থানের কথা উল্লেখ করে দেশে হিন্দু, খ্রিস্টান এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার নিন্দা করেন। তিনি আরও বলেন মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে বাংলাদেশে একটি বিশৃঙ্খল পরিবেশ তৈরি হয়ছিল।
ইউনূসের ভুয়ো স্বাক্ষর সমেত ভাইরাল নথিতে ট্রাম্পকে "স্বাধীন বিশ্বের রাষ্ট্রপতি", 'মসীহা' হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়েছে ইউনূস "২০১৬ সাল থেকে ট্রাম্পের গোপন ভক্ত।"
রিপাবলিক টিভি এই ভাইরাল নথিটি তাদের চ্যানেলে উদ্ধৃত করে ব্রেকিং নিউজ হিসাবে প্রচার করে। সংবাদমাধ্যমটির তরফ থেকে ইংরেজিতে লেখা হয়, "মুহম্মদ ইউনূস এখন ট্রাম্পের মধ্যে 'মসীহা' দেখছেন" এবং এটিকে ট্রাম্পের জন্য তার "পরোক্ষ জবাব" বলে জানায়।
আর্কাইভ দেখুন এখানে।
ভাইরাল নথি এক বাংলাদেশী সাংবাদিক তার ফেসবুক পেজে পোস্ট করে ক্যাপশনে লিখেছেন, "বুঝলাম না। এতো তারাহুড়ার দরকার কী? সুদী ইউনুস ট্রাম্প ভাইকে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রেস রিলিজ? ফেক্টচেকার তোমরা কোথায়? তাড়াতাড়ি পাত্তা লাগাও৷"
পোস্টটি দেখুন এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম ইউনূসের কার্যালয়ে দ্বারা পরিচালিত বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টার অফিসিয়াল সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলি পর্যবেক্ষণ করে ভাইরাল বিবৃতির অনুরূপ কোনো নথিসহ পোস্ট খুঁজে পায়নি।
৬ নভেম্বর, ২০২৪-এ বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টার এক্স অ্যাকাউন্ট ইউনূসের তরফ থেকে ট্রাম্পের প্রতি একটি অভিনন্দন পত্র পোস্ট করে যেখানে তিনি নানা ধরণের বিশ্বব্যাপী সমস্যা মোকাবিলায় ট্রাম্পের প্রচেষ্টার আশা করেন যা "সকলের জন্য শান্তি, সম্প্রীতি, স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধি" বহন করবে।
পোস্টটি দেখুন এখানে এবং আর্কাইভ দেখুন এখানে।
আমরা ভাইরাল বিবৃতির পাঠ্যের সঙ্গে ইউনূসের মূল চিঠির তুলনা করে দেখি পাঠ্যটি সম্পূর্ণ আলাদা। মূল চিঠিতে ডঃ ইউনূস ট্রাম্পের প্রতি অতিরঞ্জিত শ্রদ্ধা প্রকাশ করতে কোনও বিশেষ শব্দ বা উপাধি ব্যবহার করেননি, বরং বাংলাদেশ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দীর্ঘ সম্পর্কের কথা বলেছেন।
আমরা ভাইরাল বিবৃতির নকশাতেও কিছু পার্থক্য লক্ষ্য করি যেমন সরকারি প্রতীকের রঙ, ইউনূসের কার্যালয়ের ব্যবহৃত সরকারি স্ট্যাম্প এবং প্রধান উপদেষ্টার স্বাক্ষর।
দুটি বিবৃতির মধ্যে পার্থক্যগুলি নীচের তুলনায় তুলে ধরা হয়েছে।






