মধ্যপ্রদেশের কটনি (Katni) জেলায়, পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর, বিজয়ী সরপঞ্চ প্রার্থীর স্বামীর সমর্থনে স্লোগান দিতে দেখা যাচ্ছে এক দল ব্যক্তিকে। তাঁরা বলছেন, 'ওয়াজিদ ভাই জিন্দাবাদ'। কিন্তু ভিডিওটি এই মিথ্যে দাবি সমেত শেয়ার করা হচ্ছে যে, 'পাকিস্তান জিন্দাবাদ' (Pro Pakistan Slogan) ধ্বনি দিচ্ছেন তাঁরা।
বুম দেখে, দাবিটি মিথ্যে। ওই ঘটনার ওপর তোলা ভিডিওগুলিতে দেখা যায় যে, দ্বিতীয় দফায় গণনার পর, বিজয়ী সরপঞ্চ (পঞ্চায়েত প্রধান) প্রার্থী রহিসা বেগমের স্বামী শেখ শহিদ ওয়াজিদ-এর সমর্থনে স্লোগান দিচ্ছিলেন তাঁরা। তাঁরা বলছিলেন, 'ওয়াজিদ ভাই, জিন্দাবাদ'।
হিন্দি সংবাদ মাধ্যম দৈনিক ভাস্কর মিথ্যে দাবিটি পুনঃপ্রচার করে ও দক্ষিণপন্থী সমাজ-মাধ্যম ওয়েবসাইট 'ক্রিয়েটলি' সেটির প্রচার বাড়াতে সাহায্য করে।
এবিপি নিউজ-এর সাংবাদিক ব্রজেশ রাজপুত টুইটে লেখেন, "আরও একটি বিতর্ক। মধ্যপ্রদেশের কটনি জেলার চকা গ্রাম পঞ্চায়েত সরপঞ্চ নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীর সমর্থনে পাকিস্তান জিন্দাবাদ স্লোগান। ভাইরাল ভিডিওটি সম্পর্কে তদন্ত করছে পুলিশ।"
কট্টর দক্ষিণপন্থী চ্যানেল সুদর্শন নিউজ-এর ব্যুরো প্রধান যোগেশ মিশ্র টুইট করে বলেন, 'রহিসা ওয়াজিদ খান সরপঞ্চ নির্বাচনে জয়ী হলে, মধ্যপ্রদেশের কটনিতে 'পাকিস্তান জিন্দাবাদ' স্লোগান দেওয়া হয়। তিনি আরও লেখেন যে, ভিডিওটি সম্পর্কে পুলিশ তদন্ত করছে। এবং এও বলেন যে, যারা পাকিস্তানকে সমর্থন করে, তাঁদের বাড়ি বুলডোজার দিয়ে ভেঙ্গে দেওয়া উচিত।
ব্রজেশ রাজপুত ও যোগেশ মিশ্র টুইট দুটি বুম ইংরেজেিতে প্রতিবেদন প্রকাশ করার পর মুছে দেন।
ওই একই মিথ্যে দাবি সমেত ভিডিওটি ফেসবুকেও শেয়ার করা হচ্ছে। সেই ধরনের পোস্ট দেখতে ক্লিক করুন এখানে ও এখানে।
তথ্য যাচাই
রহিসা বেগমের স্বামী শেখ শহিদ ওয়াজিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বুম। তাঁর সমর্থকরা 'পাকিস্তান জিন্দাবাদ' স্লোগান দিয়ে ছিলেন, সেই দাবি নস্যাৎ করেন উনি।
ওয়াজিদ বুমকে বলেন, "কেউ পাকিস্তান জিন্দাবাদ স্লোগান দেয়নি।" ওয়াজিদ বলেন তাঁর স্ত্রী রহিসা বেগম হলেন ভারতীয় জনতা পার্টির একজন সক্রিয় কর্মী। এবং তিনি নির্দল প্রার্থী হিসেবে পঞ্চায়েত নির্বাচনে লড়েন।
ভারতের পঞ্চায়েত নির্বাচনে, অনেক ক্ষেত্রেই মহিলা প্রার্থীরা তাঁদের পুরুষ আত্মীয়দের প্রক্সি হিসেবে দাঁড়ান। বিশেষ করে সেই আত্মীয় যদি একজন প্রাক্তন কর্মকর্তা হন।
১ জুলাই, ২০২২, মাঝ রাতের পর, সরপঞ্চ নির্বাচনের ফল ঘোষণা হওয়ার পরে ঘটনাটি ঘটে।
সেটির ওপর তোলা একটি ৩০ সেকেন্ডের ভিডিও ওয়াজিদ বুমকে পাঠান।
সেই ভিডিওটিতে, তাঁর সমর্থকরা স্লোগান দেন, "জিতে গেছে ভাই...জিতে গেছে। ওয়াজিদ ভাই জিতে গেছে।"
নিউজক্লিক ওয়েবসাইটের সাংবাদিক কাশিফ কাকভি, অন্য দিক থেকে তোলা ওই ঘটনার একটি ভিডিও টুইট করেন। তা থেকে প্রমাণ হয় যে, ওয়াজিদের সমর্থকরা "ওয়াজিদ ভাই জিন্দাবাদ" স্লোগান দিচ্ছিলেন।
ওয়াজিদ বুমকে আরও একটি ভিডিও পাঠান। তাতে তাঁর সমর্থকদের তাঁকে মালা পরাতে দেখা যায়।
ওয়াজিদ অভিযোগ করেন, বিরোধী প্রার্থী সুধা সন্তোষ তিওয়ারি ওই মিথ্যেটি ছড়ান। বুম ওই অভিযোগ সম্পর্কে নিজস্ব উপায়ে নিশ্চিত হতে পারেনি।
জানা গেছে, ১০ ভোটের ব্যবধানে রহিসা বেগমের কাছে হেরে যান তিওয়ারি। ভাইরাল ভিডিওটির বিরুদ্ধে তিওয়ারির সমর্থকরা কুথলা থানার সামনে বিক্ষোভ দেখান।
"কেউ একজন ভিডিওটি হোয়াটসঅ্যাপে শেয়ার করেন। তারপর, মিথ্যে দাবি সমেত সেটি ভাইরাল হয়ে যায়," বলেন ওয়াজিদ।
ইতিমধ্যে, ভিডিওটিতে পাকিস্তানের সমর্থনে স্লোগান দেওয়া হয়েছিল কিনা, তা তদন্ত করে দেখছে মধ্যপ্রদেশ পুলিশ। ২ জুলাই, ২০২২, কটনি জেলার পুলিশ সুপার টুইট করে জানান যে, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কুথলা থানার প্রধান কনস্টেবল সন্দেশ পরতেতি রবিবার বুমকে বলেন, "তদন্তের পর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কোনও এফআইআর জমা পড়েনি এখনও।"
আরও পড়ুন: সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে প্রাক্তন মুখ্য-বিচারপতি বালাকৃষ্ণনের ছবি পার্দিওয়ালা বলে ছড়াল