সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে হিজাব (HIjab) পরিহিত কিছু ছাত্রীকে জোর করে টেনে নিয়ে যাচ্ছে মহিলা পুলিশ। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে যে হিজাব পরে বিশ্ববিদ্যালয় (University) আসার জন্য ভারতে ছাত্রীদের এমন নিপীড়ন সহ্য করতে হচ্ছে।
বুম যাচাই করে দেখে দাবিটি বিভ্রান্তিকর। ভাইরাল ভিডিওতে দিল্লি ইউনিভার্সিটির ঘটনা দেখা যাচ্ছে যেখানে ছাত্রীদের হিজাব পরার জন্য নয়, বরং সিএএ বিরোধী প্রতিবাদ করার জন্য পুলিশ ওই ছাত্রীদের আটক করে।
ভাইরাল ভিডিওটির ফ্রেমের উপরে লেখা যায়, "হিজাব পড়াকে কেন্দ্র করে ভারতের বিশ্ব-বিদ্যালয়ে চলছে দমন-পীড়ন!!" এই ভিডিওটি শেয়ার করে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী শেয়ার করে ক্যাপশনে লিখেছেন, "ইন্ডিয়াতে হিজাব পরাকে কেন্দ্র করে বিশ্ব বিদ্যালয়ে চলছে দমন পীড়ন।"
ভিডিওটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
আরও একজন ব্যবহারকারী একই ভিডিও শেয়ার করেছেন।
ভিডিওটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম দাবিটির সত্যতা যাচাই করতে ভিডিওটির কিফ্রেমের রিভার্স ইমেজ সার্চ করে ১৩ মার্চ ২০২৪ তারিখের একটি ইনস্টাগ্রাম পোস্টে ভাইরাল ভিডিওর অনুরূপ দৃশ্য দেখতে পায়।
ডিইউ আপডেটস নামক ওই ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টের পোস্টটির ক্যাপশন থেকে আমরা জানতে পারি সিএএ-র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য দিল্লি ইউনিভার্সিটির ৬০ জনেরও বেশি পড়ুয়াকে পুলিশ আটক করে।
পোস্টটি দেখুন এখানে।
এরপর, আমরা ইউটিউবে দিল্লি ইউনিভার্সিটিতে হওয়া সিএএ বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সংক্রান্ত কিওয়ার্ড সার্চ করে ইন্ড টুডের ইউটিউবে চ্যানেলে একটি ৩:৫৪ মিনিটের নিউজ বুলেটিন দেখতে পাই। ভিডিওটি থেকে আমরা জানতে পারি ৬০ জনেরও বেশি দিল্লি ইউনিভার্সিটির পড়ুয়াকে দিল্লি পুলিশ আটক করে সিএএ-র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য।
ভিডিওটি দেখুন এখানে।
ভিডিওটিতে ১:০৮ মিনিট থেকে ভাইরাল ভিডিওর অনুরূপ দৃশ্য দেখা যায়। ভাইরাল ভিডিও ও প্রতিবেদনের দৃশ্যের তুলনা নীচে দেওয়া হল।
আমরা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে ১৩ মার্চ ২০২৪ তারিখে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাই। প্রতিবেদনটি থেকে আমরা জানতে পারি ১২ মার্চ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের ২০১৯ নাগরিকত্ব আইনের বিধি সারা দেশে চালু হওয়ার নোটিশকে কেন্দ্র করে দিল্লি ইউনিভার্সিটির অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্ট এসোসিয়েশনের (এআইএসএ) সঙ্গে যুক্ত পড়ুয়ারা প্রতিবাদ করে। দিল্লি ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস থেকে আর্টস বিভাগের ৬০-৭০ জন পড়ুয়াকে আটক করে দিল্লি পুলিশ কারণ তারা নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদ করছিল। ডিসিপি (উত্তর) মনোজ মীনা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানায়, "আটক করা ছাত্রছাত্রীদের বুড়ারি পুলিশ স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরে ছেড়ে দেওয়া হয়— কয়েক মিনিটের মধ্যেই।"
একজন আটক হওয়া ছাত্র বলেন তারা যখন দিল্লি ইউনিভার্সিটিতে এনআরসি ও সিএএ-র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছিল তখন পুলিশ তাদের আটক করে এবং তারা দিল্লি ইউনিভার্সিটির সকল ছাত্র-ছাত্রীকে এনআরসি-সিএএ বিরোধী আন্দোলনে যোগ দিতে অনুরোধ করছে।
প্রতিবেদনটি দেখুন এখানে।
ভারতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের হিজাব পরা নিয়ে আগেও বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে কর্ণাটকের একটি জুনিয়র কলেজে মুসলমান ছাত্রীরা হিজাব পরে ক্লাস করতে চাইলে তাদের বাধা দেওয়া হয়। এই ঘটনা কেন্দ্র করে হিন্দু ও মুসলিম দুই ধর্মের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়। ১৫ মার্চ ২০২২ তারিখে কর্ণাটক হাইকোর্ট রায় দেয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কোনও ধর্মীয় বস্ত্র পরা যাবে না এবং হিজাব পরার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে।