২০২৩ সালে দাদাসাহেব ফালকে (Dadasaheb Phalke Awards) অ্যাওয়ার্ডস তারঁ ছবি দ্য কাশ্মীর ফাইলস (The Kashmir Files) শ্রেষ্ঠ ছবির পুরস্কার পেয়েছে, এই মর্মে চিত্রপরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী’র (Vivek Agnihotri) টুইট গত মঙ্গলবার বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। অনেকেই ধারণা করেন একই নামে ভারত সরকারের যে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারটি রয়েছে, ছবিটি সেই পুরস্কার পেয়েছে।
নম্বই এর দশকে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের দুর্দশার ওপর তৈরি বিতর্কিত দ্য কাশ্মীর ফাইলস ছবিটি ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ দাদাসাহেব ফালকে ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে (ডিপিআইএফএফ) শ্রেষ্ঠ ছবির পুরস্কার পায়।
বুম নিশ্চিত হয় যে, ডিপিআইএফএফ আর দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার এক নয়। প্রথমটি হল একটি বেসরকারি চলচ্চিত্র উৎসব। দ্বিতীয়টি হল ডিরেক্টোরেট অফ ফিল্ম ফেস্টিভ্যালস আয়োজিত উৎসবে দেওয়া একটি পুরস্কার। ডিরেক্টোরেট অফ ফিল্ম ফেস্টিভ্যালস কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের অধীনে একটি বিভাগ। সেটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও প্রদান করে। দাদাসাহেব ফাল্কে পুরস্কার চলচিত্রের ক্ষেত্রে হল ভারতের সর্বোচ্চ সম্মান। “ভারতীয় সিনেমার প্রসার ও বিকাশের ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখার জন্য” কোনও একজন ব্যক্তিকে দেওয়া হয় ওই পুরস্কার।
এর পর, মঙ্গলবার, একাধিক ফেসবুক পোস্টে অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার পাওয়ার জন্য অগ্নিহোত্রীকে অভিনন্দন জানানো হয়।
সেই রকম একটি পোস্টে বলা হয়, “কাশ্মীর ফাইলস মর্যাদাপূর্ণ দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার পেয়েছে। বিবেক অগ্নিহোত্রীজিকে অভিনন্দন।”
ট্রেন্ড হল #দাদাসাহেবফালকেঅ্যাওয়ার্ডস্২০২৩
অগ্নিহোত্রীর টুইটের কিছু ক্ষণ পর থেকেই চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কার পাওয়ার জন্য অগ্নিহোত্রী ও কাশ্মীর ফাইলস্-এর কলাকুশলীদের অভিনন্দন জানাতে #দাদাসাহেবফালকেঅ্যাওয়ার্ডস্২০২৩ হ্যাসটাগটি ব্যবহার করা হয়।
ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) জতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাশ বিজয়বর্গীয় ওই হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে দাবি করেন যে, দাদাসাহেব ফালকে অ্যাওয়ার্ডস, ২০২৩ সালে দ্য কাশ্মীর ফাইলস শ্রেষ্ঠ ছবির পুরস্কার পেয়েছে। বিজয়বর্গীয়’র টুইটের আর্কাইভ দেখুন এখানে।
ভারতীয় সিনেমায়, সর্ব্বোচ্চ সম্মান পাওয়ার জন্য ছবিটিকে ও সেটির অভিনেতা অভিনেত্রীদের অভিনন্দন জানাতে ওই একই হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে বেশ কিছু যাচাই করা হ্যান্ডেল।
টু্ইটগুলির আর্কাইভ সংস্করণ দেখতে ক্লিক করুন এখানে ও এখানে।
এরই মধ্যে কয়েকটি কংগ্রেস হ্যান্ডেল বিভ্রান্ত হয়ে অভিযোগ করে যে, ওই সম্মানজনক পুরস্কারটি এখন পক্ষপাতমূলক হয়ে গেছে।
অগ্নিহোত্রীর ফিল্ম দ্য কাশ্মীর ফাইলস এর আগেও বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে। সেই সময়, তিনি বিভ্রান্তিকর দাবি করে বলেন, ২০২২-এর অস্কার-এর জন্য অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডস কমিটি ছবিটিকে সংক্ষিপ্ত তালিকায় রাখে। কিন্তু ছবিটি আসলে আরও ৩০০টি ফিল্মের সঙ্গে ‘রিমাইন্ডারস লিস্ট’-এ স্থান পায়। এই লিস্টটি হল সেই তালিকা, যেটি থেকে পুরস্কারের জন্য একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করা হয়।
১৯৯০ সালে, কাশ্মীর উপত্যকা ছেড়ে কাম্মীরি পন্ডিতদের চলে যাওয়ার কাহিনির ওপর ভিত্তি করেই তৈরি হয়েছে দ্য কাশ্মীর ফাইলস। গত বছর, ভারতে বিপুল ব্যবসায়িক সাফল্য অর্জন করা ছবিগুলির মধ্যে এটি ছিল একটি। ছবিটিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অনুমোদন করেন। এবং বিভিন্ন বিজেপি শাসিত রাজ্যে সেটিকে কর-মুক্ত করে দেওয়া হয়।
দাদাসাহেব ফালকে ন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল কি?
নিজস্ব ওয়েবসাইটে ডিপিআইএফএফ 'সম্পর্কে' বলা হয়েছে, চলচিত্র উৎসবটি ২০১২ সালে সংঘটিত হয় এবং প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৬ সালে। “প্রয়াত শ্রী ধুন্দিরাজ গোবিন্দ ফালকে, যাঁকে ভালবেসে বলা হয় ‘দাদাসাহেব ফালকে – ভারতীয় সিনেমার জনক – তাঁর উত্তরাধিকার এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই এই উৎসবের লক্ষ্য।”
বুম ডিপিআইএফএফ-এর অ্যাডভাইসারি বোর্ডের সদস্য বাদল সাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করে। তিনি বলেন, “ডিপিআইএফএফ অ্যাওয়ার্ড ২০২৩, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩-এ তাজ ল্যান্ডস এন্ড হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়।” আলিয়া ভট্ট, রেখা, বিদ্যা বালান, অনুপম খের ও শীবা চাডহা সহ অনেক অভিনেতা অভিনেত্রী ডিপিআইএফএফ-এর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
আমরা ডিপিআইএফএফ-এর প্রধান কর্মকর্তা অভিষেক মিশ্র’র সঙ্গেও যোগাযোগ করি। তিনি বলেন, ডিপিআইএফএফ একটি বেসরকারি চলচিত্র উৎসব। সেটির সঙ্গে জাতীয় পুরস্কারের কোনও সম্পর্ক নেই।
মিশ্র বুমকে আরও বলেন, “ডিপিআইএফএফ ৩০টি বিভাগে ব্যক্তি ও ছবিকে পুরস্কৃত করে। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর অসাধারণ অবদানের জন্য প্রবীণ অভিনেত্রী রেখাকে পুরস্কৃত করা হয়। ‘সঙ্গীত শিল্পে তাঁর অসাধারণ অবদানের জন্য হরিহরণকে পুরস্কৃত করা হয়। ওই উৎসবের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, ডিপিআইএফএফ বিনোদন শিল্পকে সম্মান জানায় ও সৃজনশীল সিনেমার তারিফ করে।
ওয়েবসাইটটিতে কিন্তু দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার বা জাতীয় পুরস্কারের সঙ্গে ওই চলচ্চিত্র উৎসবের কোনও সম্পর্কের কথা উল্লেখ করা হয়নি।
দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার
প্রতি বছর, ভারতীয় সিনেমার প্রসার ও বিকাশের ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদান রাখার জন্য, ভারতীয় সিনেমার ব্যক্তিত্বদের দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার দেওয়া হয়। জাতীয় পুরস্কার প্রদানের অনুষ্ঠানে এই পুরস্কার দেওয়া হয়।
ভারত সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের অধীনে, ডিরেক্টোরেট অফ ফিল্ম ফেস্টিভ্যালস-এর ওয়েবসাইটে বলা আছে, “সর্বোচ্চ সম্মান প্রদানের মধ্যে দিয়ে, ভারতীয় সিনেমার প্রসার ও বিকাশের ক্ষেত্রে প্রাপকদের অসামান্য অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।” পুরস্কারে মধ্যে থাকে একটি স্বর্ণ কমল মেডেল, একটি শাল ও ১০ লক্ষ টাকা।
অমিতাভ বচ্চন, শ্যাম বেনেগল, আশা পারেখ, লতা মঙ্গেশকর, আদুর গোপালকৃষ্ণ ও গুলজার অতীতে ওই পুরস্কার পান।