বাংলাদেশের কক্সবাজারে (Cox's Bazar) নীতি পুলিশির নামে রূপান্তরকামী মহিলাদের (transwomen) সাথে হেনস্থা ও শারীরিক নির্যাতনের তিনটি বিব্রতকর ভাইরাল ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভারতীয় ব্যবহারকারীদের একাংশ ভুয়ো সাম্প্রদায়িক দাবিসহ শেয়ার করছে সম্প্রতি।
একটি ভিডিওতে একজন রূপান্তরকামী মহিলাকে তার ফোন ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করতে দেখা যায় যা একজন স্থানীয় বাসিন্দা বাজেয়াপ্ত করেন। ওই ব্যক্তি নীতি পুলিশির নামে তাকে হেনস্থাও করেছিল। অন্য দুটি ভিডিওতে একই ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে মহিলাদের মারধর করতে দেখা যায়।
অগাস্ট মাসে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে নীতি পুলিশির নামে যৌনকর্মী এবং অন্যান্য প্রান্তিক গোষ্ঠীর উপর রক্ষণশীল মুসলমানদের নিষ্ঠুর নজরদারি ও আক্রমণের ঘটনা ঘটে চলেছে। এই ঘটনাগুলির ভিডিওই ভারতে সাম্প্রদায়িক ভুয়ো তথ্য ছড়ানোর জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।
বাংলাদেশের বাজার-হাটে হিজাব এবং বোরখা না পরার জন্য হিন্দু মহিলাদের মারধর করা হয় ভুয়ো দাবি করে ভিডিওগুলি হোয়াটসঅ্যাপ এবং এক্স সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
দক্ষিণপন্থী এক্স অ্যাকাউন্ট পাঞ্চজন্য (@epanchjanya) ভিডিও ক্লিপ তিনটি শেয়ার করে হিন্দিতে লেখে, "হিজাব বা বোরকা পরুন অথবা বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যান!" বাংলাদেশের বাজারে হিন্দু মেয়েদের প্রকাশ্যে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। হিন্দু মেয়েদের স্বাভাবিক জামা পরার জন্য লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। জামাত-ই-ইসলামের রক্ষণশীলরা হিন্দু মেয়েদের প্রকাশ্যে হুমকি দিচ্ছে।"
ভিডিওগুলি বিব্রতকর।
তথ্য যাচাই
বুম ভাইরাল ভিডিওগুলির কিফ্রেমের রিভ্রস ইমেজ সার্চ করে বাংলাদেশী সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বেশ কয়েকটি সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পায়। একটি ভিডিওতে, নির্যাতিতা নিজেকে আরোহী ইসলাম বলে পরিচয় দিয়ে বলে তিনি মুসলিম ধর্মাবলম্বী।
ঢাকা ট্রিবিউনের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায় ঘটনাটি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলবর্তী শহর কক্সবাজারে ঘটে। প্রতিবেদনটি হামলাকারীকে মহম্মদ ফারকুল ইসলাম বলে চিহ্নিত করেছে।
প্রতিবেদনে ভিডিওগুলির বর্ণনা করে লেখা হয়, "একটি ভিডিওতে, ফারুকুল একটি লাঠি নিয়ে একজন মহিলাকে তার কান ধরে ওঠ-বস করতে বাধ্য করে এবং সেই পুরো সময় তাকে গালিগালাজ করে। আরেকটি ভিডিওতে সুগন্ধা সৈকতের কাছে অন্য এক মহিলাকে পুলিশ কর্মীদের কাছে তার মোবাইল ফোনটি পুনরুদ্ধার করার জন্য অনুরোধ করতে দেখা যায় যেটি ওই দলটি চুরি করেছিল। অন্য একটি ঘটনায়, ফারকুলকে বারবার লাঠি দিয়ে এক মহিলাকে মারধর করতে দেখা যায় তাকে থামতে অনুরোধ করা সত্ত্বেও।
প্রতিবেদনটি থেকে আরও জানা যায়, হামলাকারীরা তাদের কাজের গর্ব করে ফেসবুকে ভিডিওগুলি পোস্ট করেছিল।
পরে শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ফারুকুলকে গ্রেফতার করা হয় ও কক্সবাজার সদর মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।
আজকের পত্রিকার প্রতিবেদন অনুসারে আরোহী ইসলাম নামে এক রূপান্তরকামী মহিলা ফারকুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। কক্সবাজারের ওসি মোচিউর রহমানও বিষয়টি নিশ্চিত করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে ইসলাম ছাড়াও আরও ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়। আরোহী ইসলাম (২০) নামে এক রূপান্তরকামী মহিলা ২০২৪ সালের ১১ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের সুগন্ধা সৈকতে বেড়াতে গিয়েছিলেন, তখন ইসলাম ও অন্যান্যরা তাদের পথ আটকায় ও হেনস্থা করে। ফারুকুল ইসলাম নিজেকে ছাত্র সমন্বয়কারী বলে পরিচয় দেন এবং আরোহীদের দলের উপর আক্রমণ করেন।
দৈনিক আজাদি জানায়, ১১ সেপ্টেম্বর একদল ছাত্র যখন মহিলা ও রূপান্তরকামী মহিলাদের কক্সবাজারে সৈকত ছেড়ে চলে যেতে বলে, তখন কয়েকজন দ্বিমত পোষণ করে। তাদের মধ্যে একজনকে জনসাধারণের সামনে ওঠ-বস করতে বাধ্য করা হয়।
বুম ইন্ডিপেন্ডেন্ট টিভির কক্সবাজারের সংবাদদাতা তৌফীকুল ইসলাম লিপুর সঙ্গে যোগাযোগ করে, যিনি ঘটনাটি সম্পর্কে নিশ্চিত করেন।
লিপু বুমকে বলেন, "ভিডিওতে যাদের দেখা যাচ্ছে তারা সবাই মুসলিম পর্যটক। ঘটনার কোনও সাম্প্রদায়িক দিক নেই এবং অভিযুক্তরা তাদের আক্রমণ করে তাদের নৈতিকভাবে শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করে। রাতে সৈকতে ঘোরার করার জন্য দলটি মহিলা এবং রূপান্তরকামীদের (মহিলাদের) মারধর করে।"
গ্রেফতার হওয়ার পর ফারকুলকে কক্সবাজার কারাগারে পাঠানো হয়েছে।