সম্প্রতি "রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ" নামক এক সংগঠনের একটি সাংবাদিক সম্মেলনের ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়ো দাবি সহ শেয়ার করে বলা হয় মোহন ভাগবতের নেতৃত্বাধীন আরএসএস (RSS) শাসকদল ভারতীয় জনতা পার্টির (BJP) বিরুদ্ধে গিয়ে বিরোধী জোট 'ইন্ডিয়া' ও কংগ্রেস পার্টিকে (Congress) সমর্থন করছে।
বুম যাচাই করে দেখে আরএসএস নামক এই গোষ্ঠীর সাথে মোহন ভাগবতের আরএসএসের কোনওভাবে যুক্ত নয়।
মোহন ভাগবতের নেতৃত্বাধীন আরএসএসকে আদর্শগত দিক থেকে বিজেপির অভিভাবক বলা হয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ছাড়াও বেশ কয়েকজন বিজেপি মন্ত্রী তাঁদের গঠনমূলক বছরগুলিতে আরএসএসের কর্মী ছিলেন।
২ মিনিট ২০ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে সংগঠনটির সভাপতি জনার্দন মুন নামক এক ব্যক্তি সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন তারা লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে 'ইন্ডিয়া' জোটকে সমর্থন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ফেসবুকে ভিডিওটি পোস্ট করে এক ফেসবুক ব্যাবহারকারী ক্যাপশনে লেখে, “বড় খবর.. দয়া করে ভাইরাল করুন আরএসএস (রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ) সারা দেশে INDIA জোটকে সমর্থন করেছিল, INDIA জোটের পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য সারা দেশের সংঘীদের কাছে আবেদন করা হয়েছে। সঙ্ঘ চিৎকার করে বলছেন, মোদী সরকারকে হটাও।”
পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
ফেসবুকে আরও একজন ব্যবহারকারী একই ভিডিও শেয়ার করে ক্যাপশন হিসেবে লেখেন, "আরএসএস (রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ) সারা দেশে INDIA জোটকে সমর্থন করেছিল, INDIA জোটের পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য সারা দেশের সংঘীদের কাছে আবেদন করা হয়েছে। সঙ্ঘ চিৎকার করে বলছেন, মোদী সরকারকে হটাও।"
পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম দেখে যে ভাইরাল ভিডিওতে যে সংগঠনটিকে সাংবাদিক সম্মেলন করে 'ইন্ডিয়া' জোটকে সমর্থন করতে দেখা গেছে তা মোহন ভাগবতের নেতৃত্বাধীন আরএসএসের সাথে কোনওভাবে সম্পর্কিত নয়।
ভাইরাল ভিডিওটিতে দেখতে পাওয়া আরএসএস নামক সংগঠনটির সভাপতির নাম জনার্দন মুন, যিনি সাংবাদিক সম্মেলনটি করছেন। এই সুত্র ধরে আমরা জনার্দন মুন নামটি সার্চ করায় কতগুলি সংবাদ প্রতিবেদন খুঁজে পাই। সেখান থেকে আমরা জানতে পারি যে মুন নাগপুরে আরএসএস নামক আরেকটি সংগঠন চালাচ্ছেন এবং সেই নামে নিজের সংগঠনকে নথিবদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন।
আমরা দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়ার ২০১৯ সালের একটি প্রতিবেদন থেকে জানতে পারি বম্বে হাইকোর্ট মুনের সংগঠনকে আরএসএস নামে নথিবদ্ধ করার আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে।
প্রতিবেদনটি থেকে আমরা আরও জানতে পারি হাইকোর্ট জানিয়েছে যে একই নামে আরও এক সমিতি আগে থেকেই রয়েছে। মুন বলেছিলেন ওই আরএসএস চ্যারিটি কমিশনারের কাছে নথিভুক্ত করা নয় এবং এই নামটি তার সংগঠনকে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিল।
প্রতিবেদনটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
এছাড়াও আমরা আওয়াজ ইন্ডিয়ার ইউটিউব চ্যানেলে ২৪ মার্চ ২০২৪ তারিখে আপলোড করা আসল ভিডিওটি দেখতে পাই। ভিডিওতির শিরোনাম, "আরএসএস-এর কংগ্রেসকে সমর্থন সারা দেশে ঝড় তুলেছে। আরএসএস প্রধান জনার্দন মুনের পিসি, আবদুল পাশা"।
ভিডিওটির নিচে দেওয়া ক্যাপশনে লেখা, "যাঁরা ভাবছেন যে কীভাবে আরএসএস 'ইন্ডিয়া' জোটকে সমর্থন করেছে, আপনাদের আমরা জানিয়ে রাখি যে দেশে দুটি আরএসএস আছে, একটি হল অনলাইনে নথিভুক্ত করা, যা কংগ্রেসকে সমর্থন করেছে এবং অন্যটি হল নথিবদ্ধ করা নয়, যার সরসংঘচালক হলেন মোহন ভাগবত। দয়া করে বিভ্রান্ত হবেন না, খেয়াল রাখবেন। নাগপুর; 'ইন্ডিয়া' জোটকে নিঃশর্ত সমর্থন দিল আরএসএস।”
ভাইরাল ভিডিওটি দেখে আমরা লক্ষ্য করি মুনের সংগঠনের প্রতীক মোহন ভাগবতের আরএসএসের থেকে আলাদা।
বুম মুনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনিও ভাইরাল দাবিটি খারিজ করে আমাদের নিশ্চিতভাবে জানান তার সংগঠন মোহন ভাগবতের নেতৃত্বাধীন আরএসএস-এর সঙ্গে যুক্ত নয়। তিনি বলেন, “আমাদের সংগঠন মোহন ভাগবতের নেতৃত্বাধীন আরএসএস সংগঠনের থেকে আলাদা।”
রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের আধিকারিক মুখপাত্র অর্গানাইজার উইকলি ২৬ মার্চ ২০২৪ তারিখে একটি এক্স পোস্টে মুনের আরএসএসকে ভুয়ো বলে অভিহিত করে।
পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
অতিরিক্ত রিপোর্টিং: রোহিত কুমার