কলকাতার আরজি কর (RG Kar) মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ধর্ষণের মামলায় অভিযুক্তের মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে ভুয়ো অডিও ব্যবহার করে তৈরি ক্রিকেটার বিরাট কোহলির (Virat Kohli) এক ভিডিও সম্প্রতি ভাইরাল সমাজমাধ্যমে।
বুম যাচাই করে দেখে আসল ভিডিওটি কোহলির পুরনো এক ইন্টারভিউ থেকে নেওয়া এবং তাতে ভুয়ো এক অডিও বসিয়ে ভাইরাল এই ভিডিও তৈরি করা হয়েছে।
২০২৪ সালের ৯ অগাস্ট কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে রাতের শিফটে ডিউটি করার সময় ৩১ বছর বয়সী একজন শিক্ষানবিশ চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুন করা হয়। চেস্ট মেডিসিন বিভাগের এমডি দ্বিতীয় বর্ষের সেই ছাত্রীকে হাসপাতালের সেমিনার হলে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। মর্মান্তিক এই ঘটনায় ভারতে মহিলাদের জন্য নিরাপত্তার দাবিতে চিকিৎসক সম্প্রদায় থেকে শুরু করে সারা দেশজুড়ে সমাজের বিভিন্ন অংশে ওঠে প্রতিবাদের ঝড়। অন্যদিকে এই ঘটনায় নাগরিক সমাজের ক্ষোভের পাশাপাশি ছড়ায় গুজব এবং ভুয়ো খবরও।
মৃত ডাক্তারের ছবিসমেত থাকা সাদা-কালো রঙের সেই ভাইরাল ভিডিওতে কোহলিকে বলতে শোনা যায়, "ডাক্তারের (তার নাম) সাথে যা ঘটেছে তা খুবই ভুল, আমি চাই যে সমস্ত ধর্ষককে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেওয়া হোক, যাতে কোনও ধর্ষক এমন কাজ আরেকবার করার আগে ১০০০ বার চিন্তা করে।"
নয় সেকেন্ডের ভিডিওটি ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করে তার ক্যাপশন হিসেবে ইংরেজিতে লেখা হয়, "এমনকি বিরাট স্যারও এটিকে সমর্থন করেছেন।"
তথ্য যাচাই: ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ডের দাবি করা বিরাট কোহলির ভিডিও সম্পাদিত
বুম দেখে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের মামলায় মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে বিরাট কোহলির ভাইরাল ভিডিওটি কারচুপি করে তৈরি করা হয়েছে। ভিডিওটি তার এক পুরনো ইন্টারভিউয়ের অংশ এবং সেখানে থাকা অডিওটি সম্ভবতঃ একটি এআই ভয়েস ক্লোনিং টুলের সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে।
আসল ভিডিও ২০২২ সালের আরসিবি পডকাস্টের
বুম ভিডিওটিকে কী-ফ্রেমে বিভক্ত করে গুগল লেন্স ব্যবহার করে তাদের রিভার্স সার্চ করে দেখতে পায় ভিডিওটি আদতে ২০২২ সালের। আমরা ওই সাক্ষাৎকারের একটি অংশসহ রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর (@RCBTweets) এক পোস্ট পাই যা ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে আপলোড করা হয়।
এরপর আমরা ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২২ তারিখে আরসিবির ইউটিউব চ্যানেলে পোস্ট করা সম্পূর্ণ সাক্ষাৎকারটি শুনে দেখি, ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ কীভাবে তার জীবনকে বদলে দিয়েছে সে সম্পর্কে কথা বলেছেন কোহলি।
ভিডিওটি আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ধর্ষণ ও হত্যা মামলার আগে রেকর্ড করা হয়। নীচের মূল ভিডিওতে আমরা ভাইরাল ভিডিওর মতো একই দৃশ্য দেখতে পাই।
অডিও সম্ভবতঃ এআই ভয়েস জেনারেটর ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে: ডিপফেক শনাক্তকরণ টুল বিশ্লেষণ
তারপরে আমরা অলাভজনক এক সংস্থা TrueMedia.org -এর তৈরি একটি ডিপফেক শনাক্তকরণ টুলের ব্যবহার করে অডিওটির বিশ্লেষণ করি।
TrueMedia.org-এর টুল, বর্তমানে সাংবাদিক ও অলাভজনক দ্বারা অনুমোদিত ফ্যাক্ট-চেকারদের জন্য উপলব্ধ, শনাক্ত করে দেখে অডিওটিতে "কারচুপির যথেষ্ট প্রমাণ" রয়েছে। প্রাপ্ত সেই ফলাফলে অডিওটি এক এআই অডিও জেনারেটরের সাহায্যে তৈরি করার প্রমাণ রয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়।
কোহলি এখনও পর্যন্ত কলকাতা ধর্ষণ ও হত্যা মামলা নিয়ে কথা বলেননি
এখনও পর্যন্ত এই মামলা নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করেননি এই ক্রিকেটার। বুম এর আগে ২০১৭ সালে নববর্ষের প্রাক্কালে বেঙ্গালুরুতে হওয়া গণ-শ্লীলতাহানির ঘটনার নিন্দা করা কোহলির এক ভিডিও সাম্প্রতিক কলকাতার ঘটনার প্রতিক্রিয়া দাবিতে ভাইরাল হলে তার তথ্য যাচাই করে।