দিল্লিতে কৃষকদের ট্র্যাক্টর র্যালি ও লাল কেল্লায় হাঙ্গামার পটভূমিতে ভারতীয় কিসান ইউনিয়নের নেতা রাকেশ টিকায়েতের (Rakesh Tikait) নামে একাধিক ভুয়ো টুইটার (Fake Account) অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে।
টিকায়েতের সোশাল মিডিয়া টিমের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁরা বলেন, কৃষক নেতার আসল টুইটার অ্যাকাউন্ট হল @RakeshTikaitBKU। বিতর্কিত কৃষি আইনের বিরুদ্ধে কয়েক হাজার বিকেইউ সমর্থক দিল্লির সীমান্তে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন।
বিক্ষোভের জায়গা খালি করে দেওয়ার প্রশাসনিক নির্দেশ সত্ত্বেও, ২৮ জানুয়ারি, টিকায়েত সেখান থেকে সরতে রাজি হননি। গাজিপুর থেকে এক আবেগি ভাষণে টিকায়েত বলেন যে, উনি গ্রেফতার বরণ করতে রাজি আছেন। আর সেইভাবে বিক্ষোভকারীদের আবার সঙ্গবদ্ধ করেন। সেই সঙ্গে তাঁর নামে একাধিক ছদ্ম টুইটার অ্যাকাউন্ট খোলা হয়।
টিকায়েতের টুইটার অ্যাকাউন্ট যাচাই-করা না হওয়ার ফলে, তাঁর ভাষণ ভাইরাল হওয়ার পর, বেশ কয়েকটি ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলা হয় তাঁর নামে।
আমরা অন্তত ছ'টি সেই রকম ভুয়ো অ্যাকাউন্টের সন্ধান পাই। প্রত্যেকটিই দাবি করে যে সেটি টিকায়েতের আসল টুইটার অ্যাকাউন্ট। এবং তারা টিকায়েতের হয়েই টুইট করছে। ওই নেতা খবরের শিরোনামে আসার পর বুম দেখে যে, প্রতিটি হ্যান্ডেলই তাদের ইউজার নামটি রাকেশ টিকায়েত করে নিয়েছে।
@rkeshtikait
এই প্রতিবেদন লেখার সময় @rkeshtikait টুইটারের ৩৯,০০০ অনুগামী ছিল। সেটির পরিচিতিতে বলা হয়েছে সেটি টিকায়েতের অফিসিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্ট। কংগ্রেস নেত্রী অলকা লাম্বা, সমাজবাদী পার্টির সদস্য অনিল যাদব, ও সমাজ কর্মী মোনা আম্বাগাঁওকর-এর যাচাই-করা টুইটার হ্যান্ডেল সেটিকে ফলো করে।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালও সেখান থেকে করা একটি টুইট পড়ে বিভ্রান্ত হয়ে জানান যে, বিক্ষোভরত কৃষকদের তিনি সমর্থন করছেন। ওই টুইটার থেকে এও দাবি করা হয় যে, কেজরিওয়াল সরকার গাজিপুর সীমান্তে জল সরবরাহ করার ব্যবস্থা করেছে। কেজরিওয়াল আবার সেই টুইটটি রিটুইট করে কৃষকদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ বানচাল করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনা করেন। টুইটটির আর্কাইভ করা আছে এখানে।
বুম দেখে যে, আগে টুইটার হ্যান্ডেলটির নাম ছিল @Kiransingh_077। আমরা @rkeshtikait টুইটার হ্যান্ডেলটির আইডি বার করি। দেখা যায় সেটি হল @rkeshtikait – 1334728554437701634। এবার গুগল সার্চের সাহায্যে আমরা সেটির সন্ধান করি। তার ফলে, @Kiransingh_077 থেকে করা আগের টুইটগুলি বেরিয়ে আসে।
@Rakesh_Tikait1
@Rakesh_Tikait1 হ্যান্ডেলটি সম্পর্কে কয়েকটি রেড ফ্ল্যাগ বা সতর্ক সঙ্কেত দেওয়া আছে। তা থেকে বোঝা যায় যে সেটি একটি ভুয়ো অ্যাকাউন্ট। তাতে 'অফিসিয়াল' শব্দটির বানান ভুল লেখা হয়েছে। হ্যান্ডেলটির পরিচিতির জায়গায় লেখা হয়েছে, 'কিষাণ একতা জিন্দাবাদ'। সেটির ১,৮০০ ফলোয়ার আছে এবং দাবি করা হয়েছে যে, সেটি কৃষক নেতার অফিসিয়াল অ্যাকাউন্ট। বুম সেটির আইডি বার করে গুগুল দিয়ে সার্চ করে। দেখা যায়, হ্যান্ডেলটির আগের নাম ছিল, @Bhaskar_36। ২৭ ডিসেম্বর ২০২০তে সেটির প্রোফাইল ছবিও পাল্টানো হয়।
@OfficeOfTikait
@OfficeOfTikait টুইটার হ্যান্ডেলটির ৪,০০০ অনুগামী আছে। সেটির পরিচিতিতে লেখা হয়েছে, 'হিন্দুস্থান অগর দিল হ্যায় তো কিষাণ উসকি ধড়কন। ভারতমাতা কি সুপুত্র'। এই হ্যান্ডেল থেকে করা টুইটগুলি ব্যঙ্গাত্মক ধরনের। দেখা যায়, সেটির আগের নাম ছিল @Trollkamalnath।
@Rakeshtikait0
এটির ৬,০০০ ফলোয়ার রয়েছে। @Rakeshtikait0 থেকে করা টুইট একাধিকবার রিটুইট করা হয়েছে ও বেশ কিছু লাইকও পেয়েছে। টুইটার হ্যান্ডেলটির আইডি বার করে বুম। সেটি হল 1305235949958213632। গুগুল সার্চ করলে দেখা যায়, সেটি আগে অভিনেতা দিলজিৎ দোসাঞ্জ-এর প্যারডি অ্যাকাউন্ট হিসেবে ব্যবহার হত (@diljitdosanjh)।
@Rakesh_tikait4
এই হ্যান্ডেলে যে সব উত্তর এসেছিল, আমরা সেগুলি খুঁটিয়ে দেখি। দেখা যায়, @Rakesh_tikait4 একটি টুইট রিটুইট করেছিল। তাতে @Yvishesh হ্যান্ডেলটি ফলো করার জন্য অনুরোধ করা হয়। তার বিনিময়ে ৫০০ সক্রিয় টুইটার ব্যবহারকারীদের ফলো করার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় সেটিতে।
এর পর আমরা টুইটারে @Yvishesh সার্চ করি। তার ফলে, আমাদের সামনে @Rakesh_tikait4 হ্যান্ডেলটি খুলে যায়। তা থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, ওই হ্যান্ডেলটির নাম বদলে @Rakesh_tikait4 করা হয়েছে।
@Rakesh_Tikeit
@Rakesh_Tikeit হ্যান্ডেলটির পরিচিতিতে লেখা হয়েছে: অফিসিয়াল টুইটার হ্যান্ডেল, কৃষক নেতা ও ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের (বিকেইউ) জাতীয় মুখপাত্র @officialBKU। বুম সেই টুইটার হ্যান্ডেলের আইডি বারকরে দেখেযে, সেটি আগে @TanzeemNizam3 নামে চালানো হচ্ছিল। টুইটারে @TanzeemNizam3 দিয়ে সার্চ করলে হ্যান্ডেলটি বেরিয়ে আসে।
আরও পড়ুন: ভারতের পতাকা অবমাননার ভাইরাল ভিডিওটি অ্যামেরিকায় তোলা