বন্দুক (guns) হাতে দুই গোষ্ঠীর লোকেদের একটি ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল করে মিথ্যে দাবি করা হচ্ছে, উত্তরপ্রদেশের কানপুরে (Kanpur) সম্প্রতি ঘটে-যাওয়া সাম্প্রদায়িক (violence) সংঘর্ষের দৃশ্য সেটি।
বুম যাচাই করে দেখে ভিডিওটি উত্তরপ্রদেশের বরেলীতে একটি ঘটনার। মাংসের দাম নিয়ে একই সম্প্রদায়ের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বচসা হয় সে সময়।
নবী মহম্মদ সম্পর্কে ভারতীয় জনতা পার্টির সাসপেন্ড হওয়া মুখপাত্র নূপুর শর্মার বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য, তাঁর গ্রেফতারি দাবি করছেন ভারতের মুসলমানরা।
১০ জুন, ২০২২-এ, শুক্রবারের নামাজের পর, পশ্চিমবঙ্গ ও ঝাড়খণ্ডের কিছু অঞ্চলে বিক্ষোভ হিংসাত্মক হয়ে ওঠে। খবরে প্রকাশ, নবী মহম্মদ সম্পর্কে মন্তব্যকে কেন্দ্র করে অশান্তির সময়, রাঁচিতে গুলিবিদ্ধ হয়ে দু'জন মারা যান।
৩ জুন, একই ধরনের বিক্ষোভ উত্তরপ্রদেশের কানপুরেও ছড়ায়। ওই ঘটনার পটভূমিতেই এই ভিডিওটি শেয়ার করা হচ্ছে।
১৪ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে, ঝগড়ার সময় লোকজনকে বন্দুক প্রদর্শন করতে দেখা যাচ্ছে।
ভিডিওটি হিন্দি ক্যাপশন সহ ফেসবুকে শেয়ার করা হচ্ছে। তাতে বলা হয়েছে: "এরা কানপুরের জিহাদি। তারা আধুনিক অস্ত্র থেকে গুলি করছিল। আর পুলিশ ব্যবহার করছিল কাঁদানে গ্যাস। সরাসরি গুলি করাই হল তাদের অসুখ সারানোর উপায়। দশ কুড়ি জনকে গুলি করা হলে, তারা আর সাহস পাবে না।"
(মূল হিন্দিতে: ये हैं कानपुर के जिहादी जो खुल्लम खुल्ला अत्याधुनिक हथियारों से कर रहे था अंधाधुंध फायरिंग और पुलिस सिर्फ आंसू गैस के ही गोले छोड़ रहीं थी, इनका इलाज हैं सीधी गोली एक बार अगर दस बीस उड़ गए तो फिर ये लोग जल्दी से हिमाकत नहीं करेंगे)
ভিডিওটির আর্কাইভ দেখুন এখানে।
একই দাবি সমেত ভিডিওটি ফেসবুকে ব্যাপক ভাবে শেয়ার করা হচ্ছে। পোস্টগুলি দেখুন এখানে ও এখানে।
আরও পড়ুন: জ্বলন্ত রেল কামরার ছবিটি অগ্নিপথ প্রকল্প নিয়ে বিক্ষোভের সঙ্গে সম্পর্কহীন
তথ্য যাচাই
ভাইরাল ভিডিওটির একটি প্রধান ফ্রেম নিয়ে, ও কি-ওয়ার্ডের সাহায্যে, বুম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে। তার ফলে, ২০২১-এ করা একটি টুইট সামনে আসে, যেটিতে ওই একই ভিডিও পোস্ট করা হয়।
৯ মে, ২০২১, ফার্স্ট ইন্ডিয়া নিউজ টুইটার হ্যান্ডেল থেকে ভিডিওটি পোস্ট করা হয়েছিল। হিন্দিতে লেখা টুইটটিতে বলা হয়, "বরেলীতে, মাস্ক কেনাকে কেন্দ্র করে একই সম্প্রদায়ের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে গুলি বিনিময়। বেআইনি অস্ত্র প্রদর্শনে এলাকায় আতঙ্ক। ভোজিপুরা স্টেশন থানা এলাকায় ধৌরটান্ডা টাউনে গুলি চলে। এলাকায় বিশৃঙ্খলা।"
কিন্তু অন্যান্য সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে, হিন্দিতে 'মাঁস' বা মাংস শব্দটিকে ভুল করে 'মাস্ক' লেখা হয়েছে টুইটটিতে।
৯ মে, ২০২১, 'জন টিভি বরেইলী'র ফেসবুক পেজেও ভিডিওটি শেয়ার করা হয়।
ঘটনাটি কি ছিল?
ওই টুইট ও ফেসবুক পেজের সূত্র ধরে, বুম হিন্দি কি-ওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করে। দেখা যায়, একাধিক সংবাদ মাধ্যমে ওই ঘটনাটি সম্পর্কে খবর বেরয়।
২০২১ সালে, 'ভাস্করে প্রকাশিত খবরে বলা হয়, উত্তরপ্রদেশের বরেইলিতে ভোজিপুরা নামের এক জায়গায় অবস্থিত টান্ডা গ্রাম। সেই গ্রামের বাসিন্দা সলিম কুরেশি ও জলীস বাঞ্জারা'র মধ্যে বচসা বাধে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, সলিম কুরেশি জলীস বাঞ্জারার একটি দোকান ভাড়া নেয়। বলা হয়, জলীস বাঞ্জারা কুরেশির বিরুদ্ধে গোমাংস বিক্রি করার অভিযোগ তোলেন। কুরেশি অভিযোগ অস্বীকার করলে বচসা বাধে। আর তার ফলে বন্দুক প্রদর্শন করা হয় ও গুলিও চলে।
অন্যদিকে, পুলিশ সুপার (গ্রামীন) রাজকুমার 'ভাস্কর'কে বলেন যে, মাংসের দাম নিয়ে একই সম্প্রদায়ের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বচসা বাধে। ভোজিপুরা থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
২০২১ সালের মে মাসে, ঘটনাটি সংক্রান্ত খবর ইটিভি ভারত ও অমর উজালাতে প্রকাশিত হয়। আজ তক-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন পড়ুন এখানে।
আরও পড়ুন: নূপুর শর্মার বাড়িতে তাণ্ডব দাবিতে ছড়াল ওড়িশার ভদ্রকের পুরনো ভিডিও