মধ্যপ্রদেশের (Madhya Pradesh) খোলা একটি মাঠে অনেক মানুষের সাথে এক চিতাবাঘের (Leopard) ধীর গতিতে হেঁটে যাওয়ার ভিডিও সম্প্রতি পোস্ট করে দাবি করা হয় দেশি মদ খেয়ে নেশাগ্রস্ত (Drunk) হয়ে পরে মাংসাশী ওই প্রাণী।
ভাইরাল ওই ভিডিওতে চিতাবাঘের সাথে থাকা লোকজনকে প্রাণীটির সাথে নিজস্বী ও পোষ্য হিসেবে গ্রহণ করার চেষ্টা করতে লক্ষ্য করা যায়।
বুম যাচাই করে দেখে ভিডিওর সাথে করা দাবিটি অপ্রাসঙ্গিক। ভিডিওটি তোলার সময় চিতাবাঘটি গুরুতর অসুস্থ ও দুর্বল ছিল যার কারণে তাকে ধীরে ধীরে হাঁটতে দেখতে পাওয়া যায়।
মধ্যপ্রদেশের দেওয়াস জেলার ইকলেরা গ্রামের এই ঘটনায় বেশ কিছু গ্রামবাসীকে চিতাবাঘের পিছনে হাঁটতে, হয়রানির চেষ্টা করতে, এমনকি একজনকে তার পিঠে চড়ে বসতেও দেখা যায়।
একজন এক্স (প্রাক্তন টুইটার) ব্যবহারকারী ভিডিওটি পোস্ট করে ক্যাপশন হিসাবে লেখেন, "চিতাবাঘটি দেশি দারুর এক ভাট্টি থেকে দেশি মদ পান করেছিল.. গ্রামবাসীরা তাকে তার জায়গায় নিয়ে যেতে বাধ্য হয়..মদ সবাইকে একইভাবে প্রভাবিত করে।"
পোস্টটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন ও তার আর্কাইভ এখানে দেখা যাবে।
পোস্টটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে। তার আর্কাইভ দেখা যাবে এখানে।
একই দাবি করে ভিডিওটি বাংলা ক্যাপশনসমেতও পোস্ট করা হয়। ভিডিওটি পোস্ট করে লেখা হয়, "চোলাই মদ গিলে মানুষের বন্ধু হল চিতাবাঘ!"
পোস্টটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে এবং তার আর্কাইভ দেখতে এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম যাচাই করে দেখে ভাইরাল দাবিগুলি মিথ্যা। আমরা ইন্দোর চিড়িয়াখানার তত্ত্বাবধায়কের সাথে কথা বলে জানতে পারি সেখানে চিতাবাঘটি বর্তমানে চিকিৎসা গ্রহণ করছে ও প্রাণীটি ক্যানাইন ডিস্টেম্পার রোগে ভুগছে।
ঘটনাটি সম্পর্কিত এক কীওয়ার্ড সার্চ করায় আমরা ২০২৩ সালের ৩১ আগস্ট প্রকাশিত টাইমস অফ ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদন খুঁজে পাই। প্রতিবেদনটি অনুসারে, ২৯ আগস্ট চিতাবাঘটি ইন্দোর থেকে প্রায় ১৭০ কিলোমিটার দূরে ইকলেরাতে ঘোরাফেরা করার সময় ঘটনাটি ঘটে।
ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, চিতাবাঘটিকে দেওয়াস ও উজ্জয়নের বন কর্মকর্তারা উদ্ধার করে ইন্দোর চিড়িয়াখানায় স্থানান্তরিত করেছিলেন, যা কমলা নেহেরু চিড়িয়াখানা নামেও পরিচিত। বুম ইন্দোর চিড়িয়াখানার তত্ত্বাবধায়ক নিহার পারুলেকরের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি আমাদের চিতাবাঘের অবস্থা ব্যাখ্যা করে জানান সে ক্যানাইন ডিস্টেম্পার রোগে ভুগছে।
আমেরিকান ভেটেরিনারি মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের মতে, ক্যানাইন ডিস্টেম্পার প্রধানত কুকুরছানা, কুকুরের শ্বাসযন্ত্র, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল এবং স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করে। কিন্তু, মঙ্গাবের প্রতিবেদন অনুযায়ী, যেহেতু চিতাবাঘ কুকুর শিকার করে, তাই ভাইরাসের সংক্রামক প্রকৃতি তাদেরও প্রভাবিত করতে পারে।
পারুলেকর বলেন, "এর অর্থ, প্রাণীটি স্নায়বিক খিঁচ ও উচ্চ জ্বরে ভুগছে এবং তার নিজের শরীরের উপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। ক্যানাইন ডিস্টেম্পার একেবারে সারানো যায় না, শুধুমাত্র প্রতিরোধমূলক ওষুধই এর সমাধান। আমরা চিতাবাঘের শরীরের তাপমাত্রা কম রাখার চেষ্টা করি।" তিনি চিতাবাঘটিকে স্যালাইন দেওয়া হয়েছিল বলেও জানান।
চিতাবাঘটির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, প্রাণীটির বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই কম। পারুলেকর বলেন, "এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা-- চিতাবাঘটির বেঁচে থাকা খুবই কঠিন।"