একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, বেশ কয়েক জন ব্যক্তি একটি খাবার টেবিলে বসে আছেন। ছবিটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, এই ছবিতে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্য কান্ত (Surya Kant) এবং জে বি পার্দিওয়ালাকে (J B Padriwala) দেখা যাচ্ছে, তাঁরা এনডিটিভির প্রতিষ্ঠাতা প্রণয় রায় (Pronoy Roy) ও রাধিকা রায়, এবং ভারতীয় মার্ক্সবাদী কমিউনিস্ট পার্টির নেত্রী বৃন্দা কারাটের (Vrinda Karat) সঙ্গে খাওয়াদাওয়া করছেন।
বুম যাচাই করে দেখে যে এই দাবিটি মিথ্যে; পার্দিওয়ালা ও কান্ত আদৌ এই ছবিটিতে ছিলেন না। এই ছবিতে যাঁদের দেখা যাচ্ছে, তাঁরা হলেন দ্য হিন্দুর প্রাক্তন মুখ্য সম্পাদক এন রাম, তাঁর স্ত্রী রামিয়ম রাম, তামিলনাড়ুর অর্থমন্ত্রী পি থিয়াগা রাজন, প্রণয় ও রাধিকা রায়, বৃন্দা কারাট এবং তাঁর স্বামী সিপিআইএম নেতা প্রকাশ কারাট, এবং মাইন্ডসএসকেপ ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা দীপালি সিকন্দ। এই ক্লাবেই ছবিটি তোলা হয়েছিল।
আমরা রামের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনিও জানান যে, যে দিন এই ছবিটি তোলা হয়েছিল, সে দিন পার্দিওয়ালা ও কান্ত আদৌ উপস্থিত ছিলেন না। রাম বলেন, "আমি নিশ্চিত ভাবে জানাচ্ছি যে, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্য কান্ত বা জে বি পার্দিওয়ালা এই ছবিতে নেই। আমি আরও জানাচ্ছি যে, আমরা তাঁদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করিনি।"
বিজেপির সাসপেন্ড হওয়া মুখপাত্র নূপুর শর্মার বিরুদ্ধে পয়গম্বর সম্বন্ধে আপত্তিকর মন্তব্য করার জন্য যে এফআইআরগুলি দায়ের করা হয়েছে, সেগুলিকে একত্র করার জন্য সুপ্রিম কোর্টের শুনানি চলার সময় ২০২২ সালের ১ জুলাই বিচারপতি পার্দিওয়ালা ও বিচারপতি সূর্য কান্ত নূপুরকে তাঁর মন্তব্যের জন্য তিরস্কার করেন এবং গোটা দেশে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তৈরিতে তাঁর ভূমিকার দিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করেন। বিচারপতিরা বলেন যে, সেই ঘটনার প্রতিক্রিয়াতেই উদয়পুরে কানহাইয়া লাল নামে দর্জির জীবনহানি হয়েছে। বিচারপতি পার্দিওয়ালা ও বিচারপতি কান্তের এজলাসেই নূপুরের আবেদনটির শুনানি চলছিল।
ছবিটি ফেসবুকে এই ক্যাপশনের সঙ্গে শেয়ার করা হচ্ছে, "যে বিচারপতিরা রায় দিলেন, তাঁরা কাদের সঙ্গে বসে মধ্যাহ্নভোজন সারছেন, দেখুন। রায়ের বাম দিকে যে ভদ্রমহিলা বসে আছেন, তিনি দিল্লিতে বুলডোজ়ার চালানোর উপর স্থগিতাদেশ আদায় করেছেন.. রিনিতা মজুমদার, তার সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি #সূর্য কান্ত ও #পার্দিওয়ালা নকশাল গ্যাঙের সঙ্গে বসে আছেন। প্রণয় রায় আর রাধিকা রায়ও সেখানে আছেন।"
আমরা এই ক্যাপশনের প্রথম বাক্যটি দিয়ে সোশাল মিডিয়ায় সার্চ করি, এবং দেখতে পাই যে, ছবিটি ফেসবুক ও টুইটারে একই দাবির সঙ্গে ভাইরাল হয়েছে।
আরও পড়ুন: সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে প্রাক্তন মুখ্য-বিচারপতি বালাকৃষ্ণনের ছবি পার্দিওয়ালা বলে ছড়াল
তথ্য যাচাই
বুম ছবিটিকে খুঁটিয়ে দেখে, কিন্তু তাতে বিচারপতি কান্ত বা বিচারপতি পার্দিওয়ালাকে দেখতে পাওয়া যায়নি।
তার বদলে আমরা ছবিতে দ্য হিন্দুর প্রাক্তন মুখ্য সম্পাদক এন রামকে দেখতে পাই। আমরা রামের টুইটার টাইমলাইনে দেখতে পাই যে, তিনি এই ভাইরাল ছবিটির দাবিকে অস্বীকার করে একটি বিবৃতি টুইট করেছেন।
ফেসবুকের একটি স্ক্রিনশট পোস্ট করে তিনি লিখেছেন যে, ভাইরাল হওয়া পোস্টে যে দুই ব্যক্তিকে পার্দিওয়ালা ও কান্ত বলে দাবি করা হয়েছে, তাঁদের এক জন স্বয়ং তিনি, এবং অন্য জন তামিলনাড়ুর অর্থমন্ত্রী পি থিয়াগা রাজন(পিটিআর)।
বুমের সঙ্গে কথা বলার সময়ও তিনি একই তথ্য নিশ্চিত করেন।
রাম জানান, "আমাদের অনুমতিক্রমে ১ জুলাই ২০২২ তারিখে এই ছবিটি তোলা হয়। তখন আমরা (উটির কাছে) মাইন্ডএসকেপস নামে এক রেস্তোরাঁয় মধ্যাহ্নভোজন সারছিলাম (পিটিআর-এর সঙ্গে শেফস টেবল সেশন চলছিল)। এই রেস্তোরাঁ থেকে কেটি ভ্যালির চমৎকার ভিউ পাওয়া যায়। অর্থমন্ত্রী পিটিআর কোয়েম্বাত্তুর থেকে থেকে ওয়েলিংটনে ডিফেন্স সার্ভিস স্টাফ কলেজে (ডিএসএসসি) যাচ্ছিলেন, সেখানে তিনি একটি বক্তৃতা দিতে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। আমার স্ত্রী মারিয়ম এবং আমি তাঁর সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজন সারার জন্য পথেই মাইন্ডএসকেপস-এ দেখা করার ব্যবস্থা করি। আমাদের বন্ধু প্রকাশ ও বৃন্দা কারাট, এবং প্রণয় ও রাধিকা রায়কেও নিমন্ত্রণ জানাই অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার জন্য। সে সময় তাঁরা সবাই নীলগিরিতে ছিলেন।"
এ ছাড়াও আমরা ভাইরাল ছবিটিকে রিভার্স ইমেজ সার্চ করি, এবং ৩ জুলাই ২০২২ তারিখে মাইন্ডএসকেপস-এর করা একটি টুইটের সন্ধান পাই। রাম এই ক্লাবটির কথাই উল্লেখ করেছেন। সেই পোস্ট ভাইরাল ছবিটি রয়েছে। যে ক্যাপশনের সঙ্গে ছবিটি শেয়ার করা হয়েছে, তাতে এই ছবিতে উপস্থিত ব্যক্তিদের নাম উল্লেখ করা রয়েছে, এবং রাম যা বলেছেন, এই ক্যাপশনটিতেও সেই তথ্যই রয়েছে।
"তামিলনাড়ুর অর্থমন্ত্রী শ্রী পি থিয়াগা রাজন, ডক্টর প্রণয় রায় ও শ্রীমতী রাধিকা রায়, শ্রীমতী বৃন্দা কারাট ও শ্রী প্রকাশ কারাট, শ্রীমতী ও শ্রী এন রাম, এবং দীপালি সিকন্দের সঙ্গে একটি শেফস টেবল সেশনে।"