কলকাতায় নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন-এর (সিএএ (CAA) বিরুদ্ধে এক বিক্ষোভকারীর হাতের প্লাকার্ডে (Placard) লেখা ছিল যে তিনি বিবস্ত্রও হবেন না, কোনও নথিও দেবেন না। ওই প্রতিবাদী ব্যক্তিটি হলেন একজন লিঙ্গ সাম্য অধিকার আন্দোলনের কর্মী (gender rights)। কিন্ত তাঁর প্লাকার্ডের লেখাটিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে বদলে দিয়ে, ছবিটি নতুন করে শেয়ার করা হচ্ছে।
সম্পাদনা করে বদলে-দেওয়া ছবিটিতে বিক্ষোভকারীর গলায় ঝোলান প্লাকার্ডে বাংলায় লেখা, "শাড়ি কাপড় খুলে দেব তাও Documents দেবো না, NONRCCAANPR)। এখন সেই কারিকুরি করা ছবি শেয়ার করা হচ্ছে। এবং প্লাকার্ডটিকে কদর্য বলে সমালোচনা করছেন নেটিজেনরা।
লিঙ্গ অধিকার আন্দোলনের ওই কর্মীকে বুম শনাক্ত করতে সক্ষম হয়। এবং দেখা যায় যে, আসল ছবিতে তাঁর ব্যানারে লেখা ছিল, "আমি বিবস্ত্র হব না; কোনও নথি দেব না।"।
বদলে-দেওয়া ছবিটি ফেসবুকে শেয়ার করা হচ্ছে। সঙ্গে বাংলায় লেখা ক্যাপশনে বলা হয়েছে, "কবি বলে গিয়েছেন, যৌনবিকৃত ব্যক্তিরাই বামপন্থীতে উপযুক্ত। লেনিন বোঝা বুঝি তাদের আসল উদ্দেশ্য, কখনও দেখেছেন বামপন্থীরা দেশের হিতে গলা ফাটাচ্ছে। দেখবেনও না। কারণ ওদের বাবার থেকে, পাশের বাড়ির আব্দুল আপন বেশি। এরা দেশের খাবে চিন পাকিস্তানের গুণ গাইবে। সময় এসেছে এদের ঝেঁটিয়ে বিদেয় করুন।"
ওই বদলে-দেওয়া ছবিটিকে ভিত্তি করে, অন্য একটি পোস্টে সিএএ-বিরোধী বিক্ষোভকারীদের বামপন্থী মানসিকতার সমালোচনা করা হয়।
ওই সম্পাদনা-করা ছবিটি টুইটারেও শেয়ার করা হচ্ছে। সেটির বয়ানে বলা হয়েছ্, "শাড়ি কাপড় খুলে দেবে তবুও এরা নিজের পরিচয়ের বৈধ কাগজপত্র দেখাবে না!! তবে কি এরা অবৈধ বাপের সন্তান তাই এত ভয়? আগেও বলেছি, আবারও বলছি কমরেড বামপন্থী মানেই হল সাইকোপ্যাথ। সোজা কথায় সাইকো ও বিকৃতমনষ্ক, বিকৃতকামী না হলে বামপন্থী মাকু হওয়া যায় না।"
আরও পড়ুন: বার্লিনের অচল চরবৃত্তি কেন্দ্রকে মিথ্যে করে বলা হল তুরস্কের মসজিদ
তথ্য যাচাই
বুম দেখে যে, আসল ছবির লেখাটি বদলে দিয়ে এ কথাই বোঝানোর চেষ্টা হয়েছে যে, বিক্ষোভকারীটি বিবস্ত্র হতে রাজি আছেন।
আমরা ছবিটির রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে, দীপান্বিতা পালের একটি পোস্ট দেখতে পাই। দীপান্বিতা পাল কলকাতার লিঙ্গ সাম্য অধিকার আন্দোলনের একজন কর্মী। তিনি আসল ছবিটি তাঁর ফেসবুক অ্যাকাউন্টে শেয়ার করেছিলেন এবং বলেন যে সেটিকে কদর্যভাবে বদলে দেওয়া হয়েছে।
আসল প্লাকার্ডটিতে বাংলায় লেখা ছিল, "শাড়ি কাপড় খুলবো না, Documents দেবো না, NONRCCAANPR, NOTGBILL)"। দেখা যাচ্ছে, আসল প্লাকার্ডের 'খুলব না' কে বদলে দিয়ে লেখা হয়েছে, 'খুলে দেব তাও'।
তাঁর ফেসবুক পোস্টে, দীপান্বিতা জানান যে, দেশের তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সমর্থনে উনি পোস্টারটি তৈরি করেছিলেন। পোস্টে উনি লেখেন, "আসলে ধর্ষকদের চোখ তো, স্বাভাবিকভাবেই 'না' কে 'হ্যাঁ' দেখেছে। ভারতে CAA-NCR-NPR বিরেধী আন্দোলনের অনেক আগে থেকেই এ দেশের রূপান্তরকামী মানুষজন তৎকালীন Transgender Bill এর বিরুদ্ধে লাগাতার আন্দোলন করে চলেছেন। অধুনা Transgender Bill জানায় রূপান্তরকামী মানুষজনদের সরকারি প্রতিনিধি ও ডাক্তারদের সামনে কাপড় খুলে খুলে প্রমাণ করতে হবে যে তাঁরা Transgender। ভাবতে পারবেন আমি বা আপনি এক দল লোকের সামনে নগ্ন অবস্থায় অবনত হয়ে দাঁড়িয়ে আছি যাতে তাঁরা শরীর ছুঁয়ে যাচাই করে নিতে পারেন আমরা "ভান" করছি কিনা? পারবেন না, কারণ আপনাদের শরীর দামি, রাষ্ট্রের হাতের খেলনা নয় (এখনও অবধি)। প্রথমত যে রাষ্ট্র মনে করে তার নাগরিকদের উলঙ্গ করে, তাঁর শরীর ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে তাকে তাঁর লিঙ্গপরিচয় নির্ধারণ করে দেবে, সেই রাষ্ট্র ফ্যাসিবাদী ও ধর্ষকামী। দ্বিতীয়ত Transgender মানুষ মাত্রই তার শরীরে কোনও পরিচায়ক চিহ্ন থাকবে এরকম ধারণা সম্পূর্ণ ভুয়ো ও অবৈজ্ঞানিক। এহেন আপামর মূর্খ ও ট্রান্সফোবিক রাষ্ট্রের প্রান্তিক ও অত্যাচারিত Transpersons স্বাভাবিকভাবেই CAA-NRC-NPR এর মত একটি আদ্যন্ত সংখ্যালঘু নির্মূলকারী আইনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। Detention Camp এ যে সবার আগে তাঁরাই পৌঁছাবেন এবং পাশবিক নির্যাতনের শিকার হবেন তা আসামের হালহকিকত জানলেই টের পাবেন। আমি তাঁদের রুখে দাঁড়ানোর বার্তার বাহকটুকু হয়ে এই পোস্টারটি বানিয়ে গেছিলাম। সেই ছবিটি চাড্ডী আইটি সেলের ভাইটিরা B612 এ কাঁচাহাতে নিজেদের ধর্ষক মনের চূড়ান্ত ফ্যান্টাসির বাস্তবায়ন করেছে। দেখে অবাক হলাম না, হাসি পেল। তাই ভাইটিদের বলে রাখছি যে হ্যাঁ, প্রাণটুকু নিয়ে নিলেও, কাগজ দেখাবো না। ইনকিলাব জিন্দাবাদ! #NoNRC #NoTGAct"
একই পোস্টার হাতে, দীপান্বিতা অন্য একটি পদযাত্রাতেও অংশ নিয়ে ছিলেন।
বুম দীপান্বিতা সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তাঁর প্রতিক্রিয়া পেলে এই প্রতিবেদনটি সংস্করণ করা হবে।
আরও পড়ুন: সিএএ-বিরোধীদের সমালোচনা করে হরিশ সালভে কোনও অডিও ক্লিপ রেকর্ড করেননি