বুম দেখে একটি সংবাদপত্রের শিরোনামের ক্লিপিংয়ে এই মর্মে একটি বিশেষ বিয়ের ক্ষেত্রে এই নিষেধমূলক মন্তব্য জারি করা হয়েছিল, সাধারণভাবে কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি, যা অন্য সব হিন্দু-মুসলিম বিবাহের বিবাহের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
এবং এটা ছিল ২০১৯ সালের একটি নির্দিষ্ট মামলার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আদালতের রায়, যেখানে এক হিন্দু মহিলাকে এক মুসলিম পুরুষ 'অনিয়মিতভাবে' বিবাহ করেছিল, এবং সেক্ষেত্রেও এই বিবাহের সন্তানদের 'বৈধ'-ই বলা হয় এবং পিতার সম্পত্তির উত্তরাধিকার পেতে তাদের কোনও বাধা থাকেনি।
ভাইরাল হওয়া পোস্টে একটি খবরের কাগজের হেডিং-এর ক্লিপিং উদ্ধৃত করা হয়েছে, যাতে লেখাঃ "হিন্দু নারীর সঙ্গে মুসলিম পুরুষের বিয়ে অবৈধঃ সুপ্রিম কোর্ট"। বুম-এর হোয়াট্স্যাপ হেল্পলাইন নম্বরেও (৭৭০০৯০৬৫৮৮) এই পোস্টটি পাঠানো হয়েছে। ভাইরাল পোস্টে শিরোনামটি স্পষ্টভাবে লেখা হলেও ক্লিপিং-এর অবশিষ্ট অংশ আবছা করে দেওয়া হয়েছে। ক্লিপিংয়ে একটি লাইন জুড়ে দিয়ে লেখা—'হিন্দু মেয়েরা যেন বিষয়টা বিবেচনা করে দেখে।'
তথ্য যাচাই
বুম এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছে যে, পত্রিকার প্রতিবেদনটি "অমর উজালা"য় প্রকাশিত হয়। অনুসন্ধান করে আমরা দেখি, ২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি প্রতিবেদনটি পত্রিকার ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছিল। প্রতিবেদনটি ছিল হিন্দু-মুসলিম বিবাহের জাতক শামসুদ্দিন নামক এক ব্যক্তির একটি মামলাকে নিয়ে, যে তার বাবা-মায়ের সম্পত্তির অংশীদারি চেয়ে মামলা করেছিল।
মামলার বিষয় কী ছিল?
শামসুদ্দিন ছিল হিন্দু মা ভালিয়াম্মা এবং মুসলিম পিতা মহম্মদ ইলিয়াসের সন্তান, যে পৈতৃক সম্পত্তির উত্তরাধিকার দাবি করছিল।
সম্পত্তির অন্য দাবিদারদের যুক্তি ছিল, যেহেতু শামসুদ্দিনের মা বিয়ের আগে ইসলাম ধর্মোন্তরিত হয়নি, তাই তাদের এই বিয়ে অবৈধ এবং সন্তান হিসাবে শামসুদ্দিনেরও পৈতৃক সম্পত্তিতে কোনও অংশীদারি থাকতে পারে না।
সুপ্রিম কোর্ট কী রায় দিয়েছিল?
সুপ্রিম কোর্ট রায় দেন, শামসুদ্দিনের বাবা-মার বিয়েটা 'বৈধ' বা 'অবৈধ' নয়, 'অনিয়মিত'। এই ধরনের বিয়ে এর আগেও এ ভাবেই গণ্য হয়ে এসেছে বলে শীর্ষ আদালত জানায়।
বিচারপতি এন রামান্না এবং বিচারপতি সান্ত্বনাগৌড়ার বেঞ্চ তাঁদের রায়ে জানান—যেহেতু হিন্দুরা মূর্তিপূজক, যারা ফুল-মালা-গয়নাগাটি দিয়ে দেবদেবীদের ছবি বা মূর্তিকে অর্চনা করে, তাই হিন্দু মহিলার সঙ্গে মুসলিম পুরুষের বিবাহ ঠিক 'সঠিক' নয়, যাকে বলে "অনিয়মিত"।
এই রায়টি
ইন্ডিয়া কানুন ওয়েবসাইটে দেখে নিতে পারেন। এই রায়ে কখনওই হিন্দু মহিলার সঙ্গে মুসলিম পুরুষের বিবাহকে সাধারণভাবে 'অবৈধ' বলে শনাক্ত করা হয়নি।
সুপ্রিম কোর্ট এই রায়ও দেন যে, এ ধরনের বিয়ে থেকে জাত সন্তানদের পৈতৃক সম্পত্তির উত্তরাধিকার প্রাপ্য এবং শামসুদ্দিনও তাই তার বাবার সম্পত্তি পেতে পারে।
"এই ধরনের বিবাহ থেকে উৎপন্ন যে কোনও জাতকই তার পিতার সম্পদের উত্তরাধিকারের দাবিদার।"
উপরন্তু হিন্দু নারীর সঙ্গে মুসলিম পুরুষের বিয়ে নিষিদ্ধ করার কিংবা অবৈধ ঘোষণা করার কোনও রায় আদালত দিয়েছে বলে বুম জানতে পারেনি।
এ সংক্রান্ত রিপোর্ট দ্য প্রিন্ট পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে
এখানে। টাইমস অফ ইন্ডিয়ায় সংশ্লিষ্ট প্রতিবোদনটি দেখতে পারেন
এখানে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখা যাবে
এখানে।