দীপাবলি (Diwali) উপলক্ষ্যে উত্তরপ্রদেশের (Uttar Pradesh) অযোধ্যায় (Ayodhya) মাটির প্রদীপ জ্বালানোর অনুষ্ঠান নিয়ে সম্প্রতি এক বিভ্রান্তিকর পরিসংখ্যান ভাইরাল সমাজমাধ্যমে।
নেটিজেনদের অনেকে বিজেপি-শাসিত উত্তরপ্রদেশ সরকারের তত্ত্বাবধানে হওয়া ওই অনুষ্ঠানের বিষয়ে লেখেন, অযোধ্যায় প্রজ্জ্বলিত ৪ লক্ষ প্রদীপের মোট দামের বাজেট হল ১৩৩ কোটি টাকা। উত্তরপ্রদেশ সরকারের তরফে এক একটি মাটির প্রদীপের দাম কিভাবে ৩,৩২৫ টাকা নির্ধারণ করা হল সেই নিয়ে প্রশ্ন তোলেন সমাজমাধ্যম ব্যবহারকারীরা।
বুম দেখে মাটির প্রদীপের দাম নিয়ে বিভ্রান্তিকর এই পরিসংখ্যান সাম্প্রতিক নয়। ২০১৯ সালে কিছু সংবাদমাধ্যম উত্তরপ্রদেশ সরকারের উদ্যোগে দীপাবলিতে প্রদীপ জ্বালানোর অনুষ্ঠানে ১ কোটি ৩২ লক্ষ টাকা বরাদ্দের পরিবর্তে ১৩৩ কোটি টাকা বাজেট রিপোর্ট করলে এই বিভ্রান্তি ছড়ায়।
বিগত কয়েক বছরের মতো গিনেস রেকর্ড ভেঙে এবছরও ধুমধাম করে অযোধ্যায় দীপাবলি উদযাপন করে উত্তরপ্রদেশ সরকার। দ্য হিন্দুর প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ৩০ অক্টোবর ৫৫ টি ঘাটে অনুষ্ঠিত সেই দীপোৎসবে ২৫ লক্ষেরও বেশি মাটির প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের পাশাপাশি ১,১২১ জন বেদাচার্য আরতি সম্পন্ন করেন। সরকারের তরফে গিনেস রেকর্ডের শংসাপত্রটি গ্রহণ করেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।
ফেসবুকের এক পোস্টে একজন ব্যবহারকারীর দাবি, "অসাধারণ হিন্দু রাষ্ট্র বানানো হচ্ছে, অযোধ্যায় ৪লক্ষ প্রদীপের বাজেট ১৩৩কোটি টাকা, অর্থাৎ ৩৩২৫ টাকা একটি প্রদীপের দাম জয় হো বাবাজি"।
পোস্টটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
অন্য এক ফেসবুক ব্যবহারকারীও প্রদীপের সংখ্যা ও তার মোট দামের বিষয়ে একই পরিসংখ্যান পোস্ট করে বর্তমানে ক্ষুধার সূচকে ভারতের ১০৫তম স্থানের সাথে তার তুলনা করেন।
পোস্টটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম দেখে এবছর উত্তরপ্রদেশ সরকারের তরফে ২৮ লক্ষ প্রদীপ জ্বালানোর লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত ২৫,১২,৫৮৫ টি প্রদীপ জ্বালিয়ে নতুন গিনেস রেকর্ড করা হয়।
এই তথ্যের মাধ্যমে আমরা লক্ষ্য করি, ভাইরাল পোস্টগুলিতে উল্লেখিত ৪ লক্ষ প্রদীপের সংখ্যার সাথে এবছরের প্রদীপ জ্বালানোর লক্ষ্যমাত্রা বা প্রজ্জ্বলিত প্রদীপের সংখ্যার বিস্তর তফাৎ রয়েছে।
এরপর আমরা সম্পর্কিত কীওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে উত্তরপ্রদেশে দীপাবলি উদযাপন সংক্রান্ত ২০১৯ সালের বেশ কিছু প্রতিবেদন খুঁজে পাই। ২৬ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে প্রকাশিত দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এক প্রতিবেদনে উত্তরপ্রদেশ সরকারের তথ্য অধিকর্তা শিশিরকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, “গত বছরের (২০১৮) ঘাটে ৩ লক্ষ ১ হাজার ১৮৬ টি ‘প্রদীপ’ জ্বালানোর রেকর্ড ছিল। এইবার ঘাটে ৪ লক্ষ ১০ হাজার 'প্রদীপ' জ্বালানো হয়েছে"।
ওই অধিকর্তা তথ্যটি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের প্রতিনিধির ঘোষণা করা সেসময়ের নতুন এক রেকর্ড বলে জানান। এছাড়াও তিনি ঘাট ছাড়া অন্যত্র দুই লক্ষের বেশি ‘প্রদীপ’ অর্থাৎ সব মিলিয়ে মোট ৬ লক্ষেরও বেশি ‘প্রদীপ’ জ্বালানো হয়েছিল বলে উল্লেখ করেছিলেন।
কীভাবে ছড়াল '১৩৩ কোটি'র বিভ্রান্তি?
কীওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে আমরা দেখতে পাই সমাজমাধ্যম এক্সে সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির সাংবাদিক অলোক পাণ্ডে তৎকালীন ভাইরাল এই বিভ্রান্তির বিষয়ে উত্তরপ্রদেশ সরকারের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির উল্লেখ করে দাবিটি খণ্ডন করেন।
পান্ডে লেখেন, "ব্যাপকভাবে ভাইরাল 'গল্পের' বিষয়ে একটি আপডেট, যাতে দাবি করা হয় উত্তরপ্রদেশ সরকার অযোধ্যায় প্রদীপ আলো জ্বালাতে খরচ করেছে ১৩৩ কোটি টাকা। পরিমাণটি হল ১.৩২ কোটি টাকা! মনে হচ্ছে তাদের গল্পে কেউ (ডট) উল্লেখ করতে ভুলে গেছে! এটা আমি খুব নামী এক পত্রিকায় প্রথম পড়ি!"
পোস্টটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে ও তার আর্কাইভ দেখতে এখানে।
প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য, প্রদীপ প্রজ্জ্বলন অনুষ্ঠানের জন্য উত্তরপ্রদেশ সরকারের ১৩৩ কোটি টাকা বাজেটের পরিসংখ্যানটি দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া-সহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম প্রকাশ করে সেসময়। পরে দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়ার প্রকাশিত সেই প্রতিবেদনটি মুছে ফেলা হয়।
এছাড়াও আমরা এবিষয়ে ২২ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে উত্তরপ্রদেশ সরকারের জারি করা বিজ্ঞপ্তিটি সেরাজ্যের তথ্য বিষয়ক ওয়েবসাইটে খুঁজে পাই।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে উত্তরপ্রদেশ সরকারের তরফে বলা হয়, "মেলার আন্তঃরাজ্য প্রকৃতির পরিপ্রেক্ষিতে, মুখ্যমন্ত্রী তার যথাযথ ও সফল আয়োজনের জন্য সেটির প্রাদেশিকীকরণের ঘোষণা করেছেন। দীপোৎসব মেলার প্রাদেশিকীকরণের পরে তা অযোধ্যার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা পরিচালিত হবে। ২০১৯ সালের অনুষ্ঠানে ব্যয় অনুমান করা হয়েছে প্রায় ১৩২.৭০ লক্ষ টাকা। তহবিলের প্রাপ্যতার ভিত্তিতে সরকার এই মেলা আয়োজনের ব্যয়ভার বহন করবে।"