সোশ্যাল মিডিয়ায় একজন ব্যক্তির হিন্দু দেবদেবীর (Hindu idols) মূর্তি ভাঙচুর করার একটি ভিডিও সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে। সমাজমাধ্যম ব্যবহারকারীদের একাংশের বিভ্রান্তিকর দাবি ভাইরাল ভিডিওটিতে বাংলাদেশে (Bangladesh) মূর্তি ভাঙচুরের একটি সাম্প্রতিক ঘটনা দেখা যাচ্ছে।
বুম দেখে ঘটনাটি ২০২৩ সালের জুন মাসে বাংলাদেশের ঢাকা জেলার দোহার উপজেলার দাসপাড়া একতা যুব সংঘের দক্ষিণ জয়পাড়ার দুর্গা মন্দিরে ঘটে।
চলতি বছরের অগাস্ট মাসে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগে সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর একাধিক হামলার খবর পাওয়া যায়। সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস জানায় এই বছরের দুর্গাপূজা উৎসবের সময় দেশের বিভিন্ন জায়গায় মূর্তির উপর সাম্প্রদায়িক কারণে হামলা হওয়ায় বাংলাদেশের হিন্দুরা আতঙ্ক প্রকাশ করেছে।
ভাইরাল ভিডিওতে, এক ব্যক্তিকে একটি মন্দিরের ভিতরে লাঠি দিয়ে একাধিক হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি ধ্বংস করতে এবং মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে বেরিয়ে আসার সময় গালিগালাজ করতে দেখা যায়।
এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশনে দাবি করেন,"#বাংলাদেশ ঢাকার দোহার উপজেলার জয়পাড়া দুর্গা মন্দিরে হামলা চালিয়েছে "#মোহাম্মদ_সিদ্দিকী" নামের এক মৌলবাদী।মন্দিরে হামলার পর মাদ্রাসার লুঙ্গিবাহীনি হিন্দুদের হত্যার হুমকিও দেয়।"
পোস্টটি দেখুন এখানে এবং আর্কাইভ দেখুন এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম সম্পর্কিত কিওয়ার্ড সার্চ করে দেখে ২০২৩ সালে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশী ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি পোস্ট করেছেন।
এমনই একজন ব্যবহারকারী ২২ জুন, ২০২৩-এ ফেসবুকে ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশনে হামলাকারী মহম্মদ সিদ্দিক হিসাবে চিহ্নিত করে, যিনি বাংলাদেশের ঢাকা জেলার দোহার উপজেলার দক্ষিণ জয়পাড়া দাশপাড়া একতা যুব সংঘ দুর্গা মন্দিরে দুর্গার মূর্তি ভাঙচুর করেন।
পোস্টটি দেখুন এখানে এবং আর্কাইভ দেখুন এখানে।
বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমগুলি গত বছরের জুন মাসে এই ঘটনা সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
২৩ জুন, ২০২৩-এ প্রকাশিত ডেইলি আমার সময়ের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ঘটনাটি ঘটে ২২ জুন দক্ষিণ জয়পাড়া দাসপাড়া একতা যুবসংঘের দুর্গা মন্দিরে বিকেল ৪:৩০ টার দিকে এবং সেসময় প্রধান দুর্গার মূর্তি সহ ছয়টি মূর্তি ভাঙচুর করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বাটিয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. সিদ্দিক এই হামলা করে। ভাঙচুরের পর লোকজন তাকে ধাওয়া করে ধরে ফেলে।
প্রতিবেদনে দক্ষিণ জয়পাড়া দাসপাড়া একতা যুবসংঘের সভাপতি নিতাই কর্মকারের একটি বিবৃতিও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যিনি এই ঘটনার পিছনে কোনও সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্য অস্বীকার করেন এবং হামলাকারীকে মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী হিসাবে বর্ণনা করেন।
চ্যানেল এস নিউজের একটি নিউজ বুলেটিন অনুসারে, ঢাকার দোহার এলাকায় দক্ষিণ জয়পাড়া দুর্গাপূজা প্যান্ডেল ভাঙচুরের গুজব ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পরার পর স্থানীয় পুলিশ মন্দিরটি পরিদর্শন করে এবং মন্দির সদস্যদের সাথে একটি সংবাদ সম্মেলন করে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে যে দোহারের পূজা প্যান্ডেলে হামলার বিষয়ে ফেসবুকে শেয়ার করা একটি ভিডিওর কারণে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছিল।
সম্প্রতি ভিডিওটি পুনরুজ্জীবিত হওয়ার পর, দোহার সার্কেলের পুলিশ সুপার আশরফুল আলম স্পষ্ট করে জানান মূর্তি ভাঙচুরের ভিডিওটি গত বছরের এবং নিশ্চিত করেন এই বছর বাংলাদেশের ঢাকা জেলার দোহার মহকুমায় মূর্তি ভাঙচুরের কোনও অভিযোগ করা হয়নি।
দোহার পূজা কমিটির সভাপতি অমিতাভ পালও জানান, "ভিডিওটি গত বছরের এবং এ বছর এ ধরনের কোনও ঘটনা ঘটেনি। আসলে, আগের বছরের তুলনায়, এবছর খুব শান্তিপূর্ণ এবং এই বছর পূজা প্যান্ডেলে পুলিশের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা রয়েছে। "