সিরিয়ায় (Syria) এক ঘৃণ্য গণহত্যার (mass murder) পুরনো ভিডিও সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হচ্ছে। আর সেটির ক্যাপশনে এই মিথ্যে দাবি করা হচ্ছে যে, সে দেশে রামজানের (Ramzan) সময় উপবাস না করার জন্য লোকজনকে গুলি (Shot) করে মেরে ফেলা হচ্ছে।
বুম দেখে ভিডিওটি সিরিয়ায় তোলা। সেটি বেশ পুরনো এবং তাতে একটি যুদ্ধ অপরাধের দৃশ্য ধরা আছে।
ছ'মিনিটের ওই ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, সেনারা চোখ-বাঁধা মানুষদের একটি বড় গর্ত বা বধ্যভূমির দিকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে, যার মধ্যে পড়ে আছে বেশ কিছু মৃত দেহ। সেই গর্তটির মধ্যে গিয়ে তারা দাঁড়ালে, তাদের গুলি করে মারা হয়।
ভিডিওটির দৃশ্যগুলি ভয়ঙ্কর। তাই বুম সেটি এখানে দেয়নি।
ভাইরাল ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়েছে, "ইসলামীয় দেশ সিরিয়ায় এই ঘটনা ঘটেছে...যাঁদের গুলি করে হত্যা করা হল, তাঁরা হলেন কাফের, যাঁরা রামজানের সময় উপবাস করেননি...একটি গণকবর খোঁড়া হয়েছে...যাঁরা উপবাস করেন নি, তাঁদের চোখ বেঁধে গুলি করে মারা হয়...এবং গণকবর দেওয়া হয়...মহান ইসলাম।"
ভিডিওটি স্পর্শকাতর। বিবেচনা করে দেখুন।
পোস্টটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
পোস্টটি দেখুন এখানে।
বুম যাচাই করে অনুরোধ সহ ভিডিওটি বুমের টিপলাইনেও আসে।
তথ্য যাচাই
ভিডিওটির একটি প্রধান ফ্রেম নিয়ে বুম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে। দেখা যায়, অ্যানাডোলু এজেন্সির যাচাই-করা টুইটার হ্যান্ডেল থেকে সেটি ২৮ এপ্রিল টুইট করা হয়।
সেই টুইটে একই দৃশ্য দেখা যায়। সেটির ক্যাপশনে বলা হয়, "নতুন ফুটেজে আসাদ সরকারকে সিরিয়ায় কয়েক ডজন বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করতে দেখা যাচ্ছে। দ্য গার্ডিয়ানের এক তদন্ত অনুযায়ী, ২০১৩ সালে দামাস্কাসের কাছে টাডামোন-এ, বাশার আল-আসাদ সরকারের সেনারা অন্তত ৪১ জন নাগরিককে হত্যা করে।"
টুইটটি দেখুন এখানে।
এই সূত্র ধরে আমরা ইউটিউব ও গুগলে কি-ওয়ার্ড সার্চ করি। তার ফলে, ওই ঘটনাটি সম্পর্কে, ২২ এপ্রিল, ২০২২, দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত একটি তদন্ত রিপোর্ট দেখতে পাই।
ওই রিপোর্টে বলা হয়, সদ্য মুক্তি-পাওয়া ওই ফুটেজে ২০১৩'য় সিরিয়ায় সংঘটিত একটি যুদ্ধ অপরাধের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। দামাস্কাসের দক্ষিণ শহরতলিতে ওই ঘটনা ঘটে। রিপোর্টটিতে আরও বলা হয় যে, একটি বধ্যভূমির মধ্যে মানুষজনকে ঠেলে দিয়ে ৪১ জন নাগরিককে গুলি করে হত্যা করা হয়।
নৃশংস হত্যাকাণ্ড
২৭ এপ্রিল, ২০২২ সালে দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত অন্য একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ভাইরাল ভিডিওটির সময়চিহ্নে লেখা আছে ১৬ এপিল, ২০১৩।
রিপোর্টিতে বলা হয়, "নাগরিকদের এই দলটিকে কেন প্রাণদণ্ডের জন্য বেছে নেওয়া হল, তা নিশ্চিত করে বলা মুশ্কিল। এ বিষয়ে নানা মতের একটি হল, সরকার বিরোধী গোষ্ঠীর ওপর ওই ধরনের যৌথ শাস্তি চাপিয়ে দেওয়া হয়। সেই সময়, টাডামোন-এর উল্টো দিকে, সিরিয়ায় সরকার-বিরোধীরা অবস্থান করছিল। আর দুই যুদ্ধরত শিবিরের মধ্যবর্তী সীমান্ত রেখাটি ছিল খুবই অস্থির। ওই ভয়ঙ্কর ঘটনার মাধ্যমে, সেখানকার নাগরিকদের কাছে এক মারাত্মক বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়: 'আনুগত্য বদল করার চেষ্টা কর না'।"
রামজান সংক্রান্ত ভাইরাল দাবিটি যাচাই করার জন্য, ২০১৩ সালে কখন রামজান পালিত হয়, তা অনুসন্ধান করে বুম। আমরা দেখি, ২০১৩ সালে ৯ জুলাই ও ৭ অগস্টের মধ্যে তা অনুষ্ঠিত হয়। তা থেকে এটাই প্রতিষ্ঠিত হয় যে, 'রামজানের সময় উপবাসের' সঙ্গে ওই হত্যাকাণ্ডের কোনওই সম্পর্ক নেই।
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ সম্পর্কে কাউনসিল অন ফরেন রিলেশন-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, "২০১৩ সালের গ্রীষ্মে, আসাদ সরকার রাসায়নিক অস্ত্র ব্যবহার করে। ফলে প্রায় ১,৪০০ নাগরিকের মৃত্যু হলে, বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলি সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্র ভাণ্ডার নষ্ট করার ব্যাপারে তৎপর হয়। কিন্তু তার পরের বছরগুলিতে, সিরিয়ার সরকার প্রচলিত বিধ্বংসী অস্ত্র ব্যবহার করে বিপুল সংখ্যক নাগরিকের প্রাণহানি ঘটায়।"
আরও পড়ুন: না, ভাইরাল ছবি পৃথিবীর সবচেয়ে বয়স্ক জীবিত প্রাণী ১৯০ বছরের জোনাথন নয়