একজন সাংবাদিকের সামনে ক্যামেরায় বক্তব্য রাখার সময় একজন মহিলার উপর লাঠি নিয়ে এক পুরুষের হামলার (Attack On Woman) ভিডিও সাম্প্রতিক সন্দেশখালির (Sandeshkhali) এক দৃশ্য দাবি করে ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
বুম যাচাই করে দেখে ভাইরাল এই ভিডিওটি পুরনো এবং তার সাথে সন্দেশখালির কোনও যোগ নেই। ২০১৮ সালের পশ্চিমবঙ্গের বারাসাতের এই ভিডিওতে আদতে একজন বিজেপি সমর্থক মহিলাকে এক স্থানীয় তৃণমূল নেতার আক্রমণ করার দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়।
সম্প্রতি সন্দেশখালিতে মহিলাদের উপর হওয়া অত্যাচারের অভিযোগে উত্তপ্ত বাংলা তথা দেশের রাজনৈতিক মহল। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সন্দেশখালির মহিলারা সেখানকার তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন। জাতীয় মহিলা কমিশন এবিষয়ে প্রকাশিত তাদের এক রিপোর্টে সন্দেশখালির বিভিন্ন মহিলার বক্তব্যের পাশাপাশি সেখানে ভয় দেখিয়ে মহিলাদের হেনস্থার কথা উল্লেখ করে। তবে গত ১৪ ফেব্রুয়ারির প্রকাশিত এক বক্তব্যে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ জানায় এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তারা সেখানকার কোনও মহিলার ধর্ষণের অভিযোগ পায়নি।
ভিডিওটি পোস্ট করে ক্যাপশন হিসাবে লেখা হয়, "সন্দেশখালির অত্যাচারিত মহিলাদের সত্যিটা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। মুসলমানরা হিন্দু মহিলাদের মারধর করছে, দেখুন"।
সতর্কীকরণ: ভিডিওতে থাকা দৃশ্য অস্বস্তিদায়ক হতে পারে। দেখার সময় সাবধানতা অবলম্বন বাঞ্ছনীয়।
পোস্টটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
পোস্টটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম প্রথমে ভিডিওটিকে বিভিন্ন কিফ্রেমে ভেঙে তাদের রিভার্স সার্চ করে ২০১৮ সালের বেশ কয়েকটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট খুঁজে পায়। এমনই এক পোস্টে এক ব্যবহারকারী ভাইরাল এই ভিডিও আপলোড করে আক্রান্ত মহিলাকে নীলিমা দে সরকার বলে উল্লেখ করেন।
এই তহত্যকে সূত্র হিসাবে গ্রহণ করে আমরা সম্পর্কিত কীওয়ার্ড সার্চ করায় ১ অক্টোবর, ২০১৮ তারিখে প্রকাশিত এনডিটিভির প্রকাশিত এক নিউজ বুলেটিন খুঁজে পাই। ওই নিউজ বুলেটিনের ২৮ সেকেন্ড অংশ থেকে দৃশ্যটি পশ্চিমবঙ্গের ঘটনার বলে উল্লেখ করে ভিডিওটি সম্প্রচার করা হয়।
ভিডিওটি পোস্ট করে তার বিবরণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়, "হিংসার ঘটনাটি ঘটার সময় ক্যামেরা সামনেই ছিল- তাও আবার একবার নয় দুবার। এক প্রতিবাদের ঘটনার সময় একজন বিজেপি সমর্থক মহিলাকে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা নিষ্ঠুরভাবে লাথি মেরে মাটিতে ফেলে দেয় - প্রথমে পুলিশদের উপস্থিতিতে এবং তারপরে টিভি সাংবাদিকদের সামনে।"
এছাড়াও আমরা ভিডিওটির স্পষ্টতর সংস্করণে ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকের হাতে জি সংবাদমাধ্যমের প্রতীক দেখতে পাই। এরপর আমরা ঘটনাটি সম্বন্ধিত বাংলা সংবাদমাধ্যম জি২৪ ঘন্টার প্রকাশিত রিপোর্ট খোঁজার চেষ্টা করলে ১ অক্টোবর, ২০১৮ তারিখে প্রকাশিত ওই সংবাদমাধ্যমের এক প্রতিবেদন খুঁজে পাই।
জি২৪ ঘন্টার প্রকাশিত সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী বিজেপি সমর্থক ওই মহিলা হলেন বারাসতের বাসিন্দা নীলিমা দে সরকার। ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে বিজেপির ডাকা ১২ ঘণ্টা বনধে পীরগাছা রেলগেট অবরোধে সামিল হয়েছিলেন তিনি। ওই সময় তৃণমূল কর্মীরা তাদের অবরোধ তুলতে গেলে স্থানীয় তৃণমূল নেতা আশারাদুজ্জামান পুলিসের সামনেই লাথি মারেন নীলিমাকে।
ওই প্রতিবেদনে জানান হয়, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগেই সেসময় বিজেপিতে যোগ দেন নীলিমা দে সরকার। ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় নীলিমার স্বামী জানান পুলিশের সামনেই তার স্ত্রীকে লাথি মারা হয়। গোটা ঘটনায় বিচারের দাবিতে ওই বিজেপি সমর্থক মহিলা আদালতের দ্বারস্থ হতে চলেছেন বলেও উল্লেখ করে হয় রিপোর্টটিতে।