সোশাল মিডিয়ায় পার্বত্য উপত্যকা এলাকায় দুপ্রান্তের সেনাদের মুখোমুখি বিরোধের ভিডিও বিভ্রান্তিকর দাবি সহ শেয়ার করা হচ্ছে। ফেসবুক পোস্টে দাবি করা হচ্ছে, এটিই নাকি ভারত ও চিনের সীমান্তে দু'পক্ষের সেনাদের উত্তেজনা। ভিডিওটি ১৫ জুন সোমবার লাদাখের গালওয়ানে চিন ও ভারতের সেনাদের সংঘর্ষে ২০ জন ভারতীয় সেনা মারা যাওয়ার প্রেক্ষিতে সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হচ্ছে।
১৯ মিনিট ৫৪ সেকেন্ড সময়ের এই ভিডিওটিতে দেখা যায় দু'পক্ষের সেনাদের মধ্যে পাথরের টুকরো দিয়ে তৈরি দেওয়াল নিয়ে বিরোধ। ওই অস্থায়ী সীমানা দেওয়াল থেকে পাথর সরিয়ে ফেলে দিতে দেখা যায়। শিরশিরে হাওয়ার পাশে ইংরেজিতে কথপকথন শোনা যায়। সম্ভবত মোবাইলে রেকর্ড করা হয়েছিল দৃশ্যটি।
ফেসবুকে ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশন লেখা হয়, "লাদাখে ভারত-চীনের বর্ডারে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। সেখানে উভয় দেশের সৈন্যরা"
ভিডিওটি গত মাসেও হিন্দি বয়ানে ভাইরাল হয়েছিল, ''চিন ভারতকে যুদ্ধের জন্য উস্কানি দিচ্ছে। লাদাখ সীমান্তে। সমস্ত জাতীয়তাবাদী ভাইদের অনুরোধ করা হচ্ছে চিনের জিনিস সত্ত্বর বয়কট করা শুরু করতে।
(মূল হিন্দিতে ক্যাপশন: "चीन भारत को युद्ध के लिए उकसा रहा है। लद्दाख बॉर्डर पर तनाव शुरू। सभी राष्ट्रवादी भाइयों से आग्रह चीनी सामानों का बहिष्कार अभी तुरंत से शुरू करें।")
আরও পড়ুন: পুরনো ভিডিও লাদাখের গালওয়ানে ভারত-চিন সংঘর্ষের বলে ভাইরাল হয়েছে
তথ্য যাচাই
বুম ইউটিউবে 'ইন্ডিয়া চাইনা ফেসঅফ' কিওয়ার্ড সার্চ করে দেখে ভিডিওটি ২০১৪ সালের অগস্ট মাস থেকে অনলাইনে রয়েছে।
জি নিউজের আগে সম্প্রচার করা ভিডিওটি ২০১৪ সালের ২৫ অগস্ট তাদের ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করা হয়েছিল। ভিডিওটির শিরোনাম লেখা হয়, ''অরুনাচলপ্রদেশ: চিনের সেনাদের সীমান্তের দেওয়াল ভাঙার চেষ্টা।''
(ইংরেজিতে মূল শিরোনাম: "Arunachal Pradesh: Chinese troopers try to destroy border wall.") ওই রিপোর্টে ভিডিওটিকে অবশ্য জি নিউজ অসমর্থিত সূত্র ও যাচাই করা নয় বলে দাবি করে।
একই ভিডিও 'ব্রেকিংসর্টস' নামে এক ইউটিউব ব্যবহারকারী ২০১৪ সালের ২৯ অগস্ট আপলোড করে শিরোনাম লেখে, ''সম্পূর্ণ সীমান্তে লড়াই! অরুনাচলপ্রদেশে ভারত ও চিনের সেনাদের মুখোমুখি সংঘর্ষ।'' (ইংরেজিতে মূল শিরোনাম: "Full border Fight! Indian and Chinese Soldiers Faceoff in Arunachal Pradesh.")
বুম জি নিউজের ২ মিনিট ৫১ সেকেন্ড সময় ভাইরাল ভিডিওটির সঙ্গে তুলনা করেছে। ভাইরাল ভিডিওর ৭ মিনিট ৩১ সময়ের পর একই ব্যক্তিদের একই ভঙ্গিমায় দেখা যায়। ভিডিও দুটি আসলে একই।
২০১৪ সালের অগস্টে অসমর্থিত সূত্র হিসেবে প্রকাশিত দ্য হিন্দুর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যে চিনের পিপিলস লিবারেশন আর্মি লাদাখের বার্টসি এলাকায় লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল এলাকায় ভারতের সীমান্তে ঢুকে পড়েছিল। যদিও তৎকালীন সেনা মুখপাত্র কর্নেল এসডি গোস্বামী বিষয়টি অস্বীকার করেন। সেবছরে অরুনাচলপ্রদেশে সীমা লঙ্ঘনের কোনও প্রতিবেদন খুঁজে পায়নি বুম।
বুম নিশ্চিত হতে পেরেছে ভিডিওটি পুরনো এবং সাম্প্রতিক ভারত ও চিনের সেনা সংঘর্ষের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। তবে বুমের পক্ষে স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি ভিডিওটি অরুনাচলপ্রদেশের নাকি লাদাখের বার্টসি বা অন্য কোনও এলাকার।
বুম গালওয়ানে ভারত ও চিনের সেনাদের সংঘর্ষ নিয়ে একাধিক ভুয়ো ভিডিও, ছবি ও তথ্য যাচাই করেছে। ফলো করুন নীচের টুইটার থ্রেড।
#Thread লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় ভারত ও চিনের সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষের পর বিষয়টি নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া বেশ কিছু ভুয়ো দাবি, ছবি ও ভিডিও বুম তথ্যযাচাই করেছে। বুমের তথ্যযাচাইগুলি পড়ুন 👇 #FakeNews #GalwanValley #LadakhTension #IndiaChinaFaceOff
— BOOMBangla (@BOOMLiveBangla) June 22, 2020