গুজরাতে একজন মহিলার কাছ থেকে রেল পুলিশ বাহিনীর (আরপিএফ) এক কনস্টেবলের ঘুষ নেওয়ার একটি পুরনো ভিডিও ক্লিপ নতুন করে সোশাল মিডিয়ায় ভেসে উঠেছে, যেটিকে সাম্প্রতিক লকডাউনে সারা দেশব্যাপী চলতে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের ক্ষেত্রে আসা সংকটের সাথে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। ছবিটিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে এমন ক্যাপশনের সাথে পোস্ট করা হচ্ছে যেন, পরিযায়ী শ্রমিক পরিবারগুলি রেললাইন ধরে ঘরে ফেরার সময় রেলপুলিশ তাদের কাছ থেকে ঘুষ নিচ্ছে।
বুম দেখে, ঘটনাটি গুজরাটের সুরাট রেলওয়ে ডিভিসনের, যেখানে রেল পুলিশের এক কনস্টেবল একদল মহিলার কাছ থেকে ঘুষ আদায় করছে। ওই মহিলারা নাকি অবৈধভাবে চোরাই জিনিসপত্র বিক্রি করত। এই ঘটনায় জড়িত থাকা পুলিশ কনস্টেবলকেও বরখাস্ত করা হয়েছিল।
এই ভিডিওটাকে বিভ্রান্তিকর ক্যাপশনের সাথে এমন একটা সময়ে ছড়ান হচ্ছে যখন কোভিড-১৯ এর জন্য দেশব্যাপী লকডাউনের ঘোষণা করা হয়েছে এবং এই লকডাউনে অসংখ্য ভিন রাজ্যে কাজে যাওয়া পরিযায়ী শ্রমিকরা পায়ে হেঁটে নিজেদের ঘরের দিকে পাড়ি দিচ্ছেন শত শত কিলোমিটার পথ।
আরও পড়ুন: করোনা আতঙ্কে নয়া দোসর ফালাকাটার বাঘ, বিভ্রান্তির মূলে পুরনো ছবি-ভিডিও
এক মিনিটের এই দৃশ্যটিতে দেখা যাচ্ছে, উর্দি পরা একজন পুলিশ কনস্টেবল একদল মহিলার কাছে থেকে টাকা দাবি করছে। কিন্তু ভাইরাল এই ফুটেজে কনস্টেবল বা মহিলাদের কাউকেই কিন্তু মুখে মাক্স লাগানো অবস্থায় দেখা যাচ্ছে না।
হিন্দিতে লেখা ক্যাপশনটির বাংলা অনুবাদ: "রেলমন্ত্রীর লোকেরা অসহায় পরিযায়ী শ্রমিকদের রেল লাইন ধরে হাঁটার জন্য ঘুষ দাবি করছে। লজ্জা হওয়া উচিত। মজদুর মানেই অসহায় !"
(মূল হিন্দি ক্যাপশন: देश के रेलवे मंत्री के आदमी मजबूर -मजदुरो से रेलवे की पटरी पे चलने का भाड़ा लेते हुए...।।कुछ तो शर्म करो।।।। मजबूर==मजदूर)
ভাইরাল হওয়া এই ভিডিওটির আর্কাইভ বয়ান দেখুন এখানে এবং এখানে।
নীচে সংযুক্ত করা পোস্টটির ক্যাপশনে বাংলায় বলা হয়েছে, "দেখুন কী ভাবে রেল পুলিশ পরিযায়ী শ্রমিকদের কাছ থেকে বেআইনিভাবে ঘুষ আদায় করছে !"
পোস্টটির আর্কাইভ করা আছে এখানে।
আম আদমি পার্টির সোশাল মিডিয়া ও তথ্য-প্রযুক্তি কুশলী অঙ্কিত লাল এই পোস্টটি রিটুইট করেন এবং ক্যাপশন দেন—"গুজরাত মডেল"। টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
অন্য কয়েকটি টুইটার হ্যান্ডেল থেকেও এই ভিডিওটি টুইট করা হয়, যদিও টুইটগুলি পরে ডিলিট করে দেওয়া হয়েছে।
এই ভিডিও-র হিন্দি ক্যাপশনটিও টুইটারে ভাইরাল হয়, যার বাংলা অনুবাদ করলে দাঁড়ায়: "# লকডাউন ফ্যাসিবাদ: চোরের দল, অন্তত শ্রমিকদের রেহাই দে! দেশে এখন কী চলছে !"
রেলওয়ের আইজিপি ডি. রূপাও ভিডিওটি টুইট করেছিলেন, পরে এটি পুরনো ঘটনার ছবি জানতে পেরে তিনি টুইটটি মুছে দেন।
This is an old video where action seems to have been done against the culprit. I'm deleting my tweet based on this. https://t.co/WIsLrCbRAV
— D Roopa IPS (@D_Roopa_IPS) May 10, 2020
বুম ভিডিওটিকে কয়েকটি মূল ফ্রেমে ভেঙে ইন্টারনেটে অনুসন্ধান চালিয়েছে এবং দেখেছে, ২০১৯ সালের জুলাই মাসে ভিটিওটি টুইটারে পোস্ট করা হয়েছিল। টুইটটিতে সে সময় ক্যাপশন লেখা হয়েছিল: "চোরাপাচারে লিপ্ত মহিলাদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়ার ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর আরপিএফ-এর এক জওয়ানকে বরখাস্ত করা হয়েছে।"
RPF jawans in Surat dismissed from service after his video taking bribe from bootlegger women goes viral https://t.co/C3uiWC3gu6 pic.twitter.com/t9kaBiixSb
— DeshGujarat (@DeshGujarat) July 13, 2019
টুইটটির সূত্র অনুসরণ করে বুম আরও খোঁজখবর চালিয়ে দেখে যে, গত বছরের ১৮ জুলাই একটি ওয়েবসাইটেও ভিডিওটি ছাপা হয় আরও বিশদ বিবরণ সহ। ওয়েবসাইটের রিপোর্ট অনুযায়ী ভিডিওটি তোলা হয় গুজরাতে পশ্চিম রেলওয়ের সুরাত শাখায় এবং তার কয়েক মাস পরে সেটি প্রকাশ্যে আসার পর ভাইরাল হয়। ভিডিওতে যে কনস্টেবলকে ঘুষ নিতে দেখা যাচ্ছে, সেই জয়কান্ত'কে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয় ভিডিওটি ইন্টারনেটে শোরগল তুললে।
প্রতিবেদনের একাংশে লেখা হয়: "পশ্চিম রেলওয়ের সুরাত শাখায় এই ভিডিওটি রেকর্ড করা হয়, যদিও ভিডিওটি কয়েকমাস পুরনো, তবে সোশাল মিডিয়ায় এটি আত্মপ্রকাশ করে মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে। আর তার পরেই পশ্চিম রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ওই আরপিএফ কনস্টেবলকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে। ছোট্ট এই ভিডিও ক্লিপটিতে দেখা যাচ্ছে, মহিলারা পুলিশের সঙ্গে তর্ক করছেন এই বলে যে, একটু আগেই তাঁরা অন্য একজন পুলিশকে ৫০০ টাকা দিয়েছেন। কনস্টেবল তখন তাঁদের বোঝাতে চেষ্টা করে যে, ওটা জিআরপি-র পুলিশরা নিয়েছে, আরপিএফ-এর ওরা কেউ নয় l তখন অগত্যা মহিলাটি তাঁর সঙ্গীদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে দাবিমতো ঘুষের টাকা তাকে দিয়ে দেন এবং বলেন, কয়েকদিন পরে তাঁরা আবার ফিরে আসবেন।"
আরও পড়ুন: ভাইজ্যাক গ্যাস দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ালো ফেসবুকে