একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যেটি দেখে মনে হচ্ছে ১৯৫৬ সালে তৈরি এবং ভিডিওটিতে সাম্প্রতিক কোভিড-১৯ অতিমারি বিষয়ে আগে থেকে জানানো হয়েছে। এই দাবি একেবারেই মিথ্যে।
বুম দেখেছে 'ভবিষ্যতের প্লেগ এড়িয়ে চলা' শিরোনামের ভিডিওটি মোটেই ১৯৫৬ সালে তৈরি নয়। ২০২০ সালেই ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। ক্লিপটিতে আর্কাইভ থেকে নেওয়া বিভিন্ন পুরানো ফুটেজ এক সঙ্গে করে দেখানো হয়েছে, সঙ্গে আলাদা করে একটি বক্তব্য ঢোকানো হয়েছে যাতে অতিমারি সম্পর্কে বলা হয়েছে। এই বছরের গোড়ার দিকে যখন সারা বিশ্বে রোগটি ছড়িয়ে পড়ে, বক্তব্যটি তখন রেকর্ড করা হয়েছিল।
এই দু'মিনিট লম্বা জনস্বার্থে প্রচারিত ভিডিওটি যাচাই করার অনুরোধ সমেত আমরা আমাদের হেল্পলাইন নম্বরে অনেক বার পেয়েছি।
ফেসবুকে ও টুইটারে কিওয়ার্ড সার্চ করে আমরা দেখতে পাই অগস্ট মাস থেকেই বহু ইউজার ভিডিওটি আপলোড করেছেন। আমরা আরও দেখি গত সপ্তাহে ভিডিওটি ব্যাপক ভাবে শেয়ার করা হয়েছে।
'ভবিষ্যতের জন্য সতর্কতাবাণী' হিসাবে বিভিন্ন প্রযুক্তি সংক্রান্ত ফুটেজ ভিডিওটিতে দেখানো হয়েছে। ভিডিওর সঙ্গে যে বিবিরণী আছে তাতে পরে প্রযুক্তির বিষয় থেকে সরে গিয়ে সম্ভাব্য রোগ বিষয়ে বলা হয়েছে এবং তারপর ২০২০ সালের অতিমারি বিষয়ে বলা হয়েছে।
ভিডিওটির শেষের দিকে যখন বক্তা কী ভাবে 'ভবিষ্যতের প্লেগ এড়িয়ে চলা' যাবে সেই বিষয়ে বলা শুরু করছেন, তখনই ভিডিওটির স্ক্রিনে "মিসিং ফুটেজ' কথাটি লেখা দেখাচ্ছে এবং তার পরই জনস্বার্থে প্রচারিত ভিডিওটি শেষ হয়ে যায়।
আরও পড়ুন: নিট পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর দু'জনের, কিন্তু তাঁদের র্যাঙ্ক হল আলাদা
তথ্য যাচাই
জনস্বার্থে প্রচারিত ভিডিওটি থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে বুম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে এবং দেখতে পায় যে ভিডিওটিতে অনেকগুলি পুরানো শর্ট ফিল্মের ফুটেজ ব্যবহার করা হয়েছে।
ভিডিওটির যে ছবিটি নীচে দেখা যাচ্ছে সেটি ১৯৪০ সালের স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি 'লিভ ইট টু রোল-ওহ' থেকে নেওয়া হয়েছে।
আবার ভদ্রমহিলার কফি খাওয়ার দৃশ্যটি ১৯৫৬ সালের জনস্বার্থে তৈরি গ্যাস কর্পোরেশন অ্যান্ড দ্য টেক্সাস ট্রান্সমিশনকর্পোরেশনের তৈরি সিনেমা টর্নেডো থেকে নেওয়া হয়েছে।
বুম আরও দেখতে পায় যে ভিডিওটির প্রথম দিকের ঘটনাগুলি ২০২০ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে রমেশদ্যপিজিওন নামে একজন ইউজারের আপলোড করা ইউটিউবের একটি ভিডিওতে দেখতে পাওয়া গেছে। ওই ব্যক্তি জানিয়েছেন যে তিনি ভিডিওটি তৈরি করেছেন।
ভিডিওটির ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "১৯৫০ সালের মানুষের ভবিষ্যতের পৃথিবী কেমন হবে সে বিষয়ে যে ধারণা ছিল, তা খুব মজার। আর্কাইভ.অরগ থেকে কিছু ফুটেজ পাওয়া গেছে, যেগুলিকে আমি শুধু এক সঙ্গে জুড়ে দিয়েছি কারণ আমি ২৯ ফেব্রুয়ারি ভিডিওটা আপলোড করতে চাইছিলাম।" ক্যাপশনে ইউজার স্বীকার করেছেন যে যে তিনি আর্কাইভের ফুটেজ ব্যবহার করেছেন এবং তিনি জানিয়েছেন, '২৯ ফেব্রুয়ারি আপলোড করতে চান বলে তিনি এগুলিকে এক সঙ্গে করে জুড়ে দিয়েছেন।'
রমেশদ্যপিজিওন এই জনস্বার্থে প্রচারিত ভিডিওটি বানিয়েছেন কি না, বুম তা স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি।
যেহেতু জনস্বার্থে করা এই ভিডিওটিতে বিভিন্ন শর্ট ফিল্মের ক্লিপ ব্যবহার করা হয়েছে তার ফলে আমাদের মনে হয়েছে যে "ভবিষ্যতের প্লেগ এড়িয়ে চলা" ১৯৫০ সালের কোনো জনস্বার্থে প্রচারিত ফিল্ম নয় বরং এটি বিভিন্ন পুরানো ক্লিপ ব্যবহার করে সম্প্রতি বানানো হয়েছে।
স্নুপস আগেই এই দাবিটির সত্যতা যাচাই করেছে।
আরও পড়ুন: হিমাচলে স্থানীয় রাস্তা বিবাদ সাম্প্রদায়িক ভাবে ছড়াল উত্তরপ্রদেশের বলে