করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মুরগি পাওয়া যাচ্ছে বলে যে বার্তাটি সোশাল মিডিয়ায় ঘুরছে, সেটিকে সরকারি অফিসাররা ভুয়ো এবং বিভ্রান্তিকর আখ্যা দিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় পোলট্রি উন্নয়ন সংস্থার (সিপিডিও) কর্মকর্তাদের এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তাঁরা বলেন, "এই ভুয়ো বার্তাটি ত্রাস সৃষ্টি করার জন্য ছড়ানো হচ্ছে।"
কিছু দিন আগে একই ধরনের একটি বার্তা ভাইরাল হয়েছিল, যাতে মুম্বইয়ে করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্রয়লার মুরগির কথা প্রচারিত হয়, বুম সেই ভুয়ো বার্তাটির পর্দাফাঁস করেছিল।
করোনাভাইরাসের প্রাদূর্ভাব দেখা দেয় চিনের উহান শহরে, যাতে ইতিমধ্যেই এক হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং ৪৩ হাজারের বেশি সংক্রামিত হয়েছেন। ভারতে এ পর্যন্ত কেবল কেরালা থেকে তিনটি সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে।
বিভিন্ন জায়গাতে মুরগিতে করোনা ছড়িয়েছে বলে একটি ভুয়ো ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করা হচ্ছে।
বুম তার হেল্পলাইন নম্বরেও সত্যতা যাচাই করার অনুরোধ সহ এই বার্তাটি পেয়েছে, সেখানে ব্যাঙ্গালুরুতে মুরগির মাংস খাওয়ার ব্যাপারে উপভোক্তাদের সতর্ক করা হয়েছে।
বার্তায় লেখা: "হুঁশিয়ার ! আজ ব্যাঙ্গালুরুতে করোনাভাইরাস আক্রান্ত মুরগি পাওয়া গেছে। দয়া করে বার্তাটি ছড়িয়ে দিন এবং মুরগির মাংস খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। আপনার প্রিয়জনদের কাছেও বার্তাটি পৌঁছে দিন।"
বার্তাটির সঙ্গে রোগাক্রান্ত ও অসুস্থ মুরগির ছবিও দেওয়া হচ্ছে। ছবিগুলি অস্বস্তিকর বলে বুম সেগুলি প্রতিবেদনের অন্তর্ভুক্ত না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই একই ভিডিও দেখতে পারেন এখানে।
আরও পড়ুন: মিথ্যা: ব্রয়লার মুরগিতে করোনাভাইরাস পাওয়া যাচ্ছে
তথ্য যাচাই
বুম কেন্দ্রীয় কৃষি মন্ত্রকের অধীন পোলট্রি উন্নয়ন সংস্থার ব্যাঙ্গালুরু শাখার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাঁরা এটিকে ভিত্তিহীন গুজব বলে উড়িয়ে দেন এবং এই গুজবে কান না দেওয়ার জন্য জনসাধারণকে সতর্ক করেন।
সংস্থার ডিরেক্টর ডঃ পি এস মহেশ বলেন, তাঁরা বার্তাটি দেখেছেন এবং সকলকে অনুরোধ করেন যাতে কেউ এই বার্তাটি বিশ্বাস না করে। "বার্তাটি মিথ্যা এবং ভুয়ো। ব্যাঙ্গালুরু কেন, ভারতের কোথাও করোনাভাইরাস আক্রান্ত মুরগির খবর নেই।" তিনি আরও জানান—মুরগির পক্ষে এই ভাইরাস বহন করা সম্ভব নয়।
"এই ভাইরাসটি সংক্রামিত ব্যক্তিমানুষ থেকে আর একজন মানুষের শরীরেই সংক্রামিত হতে পারে। অন্যভাবে সংক্রমণের কোনও রিপোর্ট ব্যাঙ্গালুরুতে নেই, তাই এর কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।"
পশু-চিকিৎসক এবং পোলট্রি শিল্পের সংগঠনের সভাপতি ডঃ জি দেবগৌড়াও এ ব্যাপারে একমত যে এই গুজবের কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
দেবগৌড়া বলেন: "করোনাভাইরাস খাবারের মাধ্যমে সংক্রামিত হয় না, তা সে মুরগি হোক বা অন্য কোনও মাংস। মুরগির মাংস কিংবা দুধ থেকে করোনাভাইরাস ছড়াচ্ছে, এমন গুজবের কোনও বিজ্ঞানভিত্তি নেই। সুতরাং উপভোক্তাদের খাবার থেকে এই সংক্রমণের কোনও ভয় নেই, সে-খাবার আমিষ হোক কিংবা নিরামিষ।"
কেন্দ্রীয় মত্স্য, পশুপালন, দুগ্ধ-উত্পাদন মন্ত্রকের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল, মুরগির মাংস থেকে ক্যান্সার বা অন্যান্য রোগের সংক্রমণ ঘটা নিয়ে যে সব গুজব রয়েছে, তা কি সঠিক? জবাবে দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী ডঃ সঞ্জীবকুমার বালিয়ান জানান: "মুরগির মাংস খেলে ক্যান্সার বা অন্য কোনও রোগ হওয়ার ব্যাপারে কোনও রিপোর্ট বা প্রমাণ মন্ত্রকের কাছে নেই। তাই এই মন্ত্রক মুরগির মাংস বিক্রিতে কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি।"
বুম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ, তার প্রতিরোধ বা চিকিৎসা বিষয়ে সেই সব ভুয়ো রিপোর্ট ও গুজবের পর্দাফাঁস করে চলেছে। করোনাভাইরাসের সঙ্গে সম্পর্কহীন বিভিন্ন ছবি, রিপোর্ট শেয়ার করা হচ্ছে, এমনকী যাতে চিনের প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্টকে টেনেও ভুয়ো খবর ছড়ানো হচ্ছে।
আরও পড়ুন: শি জিন পিং-এর মসজিদ সফরের পুরনো ছবিকে করোনাভাইরাসের সঙ্গে জোড়া হচ্ছে