কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি শুক্রবার সংসদে কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনেন যে, রাহুল নাকি ভারতীয় নারীদের ধর্ষণ করার আহ্বান জানিয়েছেন।ইরানি এই অভিযোগ তোলেন রাহুলের একটি সাম্প্রতিক মন্তব্যকে ঘিরে, যেটি তিনি এক প্রকাশ্য জনসভায় নরেন্দ্র মোদী ও বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ করার সময় করেছিলেন।
নির্বাচনের মুখে ঝাড়খণ্ডের এক জনসভায় মোদী সরকারকে আক্রমণ করতে গিয়ে রাহুল ভারতে অনবরত ঘটতে থাকা ধর্ষণের প্রশ্নে মোদী সরকারের তীব্র সমালোচনা করে ব্যঙ্গের ছলে 'ভারতেই ধর্ষণ করো' (Rape In India) এই স্লোগানটি দেন! দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ভারতে বিনিয়োগ বাড়াতে মোদী যে 'ভারতেই নির্মাণ করো' (Make In India) স্লোগান দিয়েছিলেন, তাকেই ব্যঙ্গ করে রাহুলের ওই বক্রোক্তি।
২০১৯ সালের ১২ ডিসেম্বর দেওয়া রাহুলের ওই বক্তৃতা বুম খতিয়ে দেখেছে যে, ইরানি রাহুলের বক্তব্যকে ভুল ভাবে উদ্ধৃত ও ব্যাখ্যা করেছেন।
লোকসভায় ইরানি বলেন: "এই প্রথম দেশের ইতিহাসে এমন ঘটনা ঘটছে, যখন একজন দলীয় নেতা প্রকাশ্যে ভারতীয় নারীদের ধর্ষণ করার আহ্বান জানাচ্ছেন!জাতির ইতিহাসে এটাই প্রথম নজির যখন কংগ্রেস দলের একজন নেতা ধর্ষণের মতো একটি গুরুতর অপরাধকে নিয়ে রাজনৈতিক তামাশা করছেন!এবং এটাও জাতির ইতিহাসে প্রথম ঘটনা যখন গান্ধী পরিবারের এক সন্তান প্রকাশ্যে ভারতে ধর্ষণ করতে বলছেন!"
इतिहास में पहली बार हुआ कि गांधी खानदान का बेटा सरेआम कहता हो, आओ भारत में बलात्कार करो।
— BJP (@BJP4India) December 13, 2019
क्या राहुल गांधी कह रहे हैं कि भारत में हर पुरुष रेप करना चाहता है?
क्या राहुल गांधी का देश की जनता को संदेश है कि महिलाओं का रेप होना चाहिए?: श्रीमती @smritiirani #IndiansAreNotRapists pic.twitter.com/SMDmN8GWHE
এরপর ইরানি বলতে থাকেন: "স্পিকার মহাশয়, আপনার কাছে আমি জানতে চাই, রাহুল গান্ধী তো এই সংসদের একজন সদস্য!তাঁর বক্তব্য, ভারতে প্রতিটি ব্যক্তি মহিলাদের ধর্ষণ করতে চায়!তাঁর এই বক্তব্য কি জনসাধারণের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দেয় না যে, তিনি ভারতীয় মহিলাদের ধর্ষণ করা উচিত বলে প্রকাশ্যে আহ্বান জানাচ্ছেন? স্পিকার মহোদয়, এটা শুধু এই সংসদের পুরুষ ও মহিলা সদস্যদের মর্যাদার প্রশ্ন নয়, এই সভারই এক সদস্যের এত ঔদ্ধত্য যে তিনি ভারতীয় মহিলাদের ধর্ষিত হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করবেন? যে কোনও ভারতীয় মহিলাকে জিজ্ঞাসা করুন, যদি তাকে ধর্ষণ করার আহ্বান জানানো হয়, তাহলে সে তার মুখের মতো জবাব দিতে জানে।"
নীচের ভিডিওটিতে ইরানির বক্তব্য দেখে নেওয়া যেতে পারে:
সংসদের বাইরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময়েও ইরানি এই একই বক্তব্য পুনরুচ্চারণ করেন:
Watch | "Are all men rapists in Rahul Gandhi's opinion?": BJP's Smriti Irani on "Rape in India" remark pic.twitter.com/Gg7YCthU55
— NDTV (@ndtv) December 13, 2019
তথ্য যাচাই
রাহুল গান্ধীর বক্তৃতার ভিডিওর ১ মিনিট ২০ সেকেন্ডের মাথায় তাঁকে বলতে শোনা যাচ্ছে: এখন আপনারা দেশের যেখানেই যান, দেখবেন নরেন্দ্র মোদীর 'মেক ইন ইন্ডিয়া' স্লোগান লেখা রয়েছে! অথচ দেশের যে দিকেই তাকাবেন, দেখবেন চলছে 'রেপ ইন ইন্ডিয়া'।
মোদী সরকারকে আক্রমণ করে রাহুল বলেন: "খবরের কাগজের পাতা খুলুন, দেখবেন আজ ঝাড়খণ্ডে এক মহিলা ধর্ষিতা হয়েছেন! উত্তরপ্রদেশে যান, দেখবেন, নরেন্দ্র মোদীর এক বিধায়ক এক মহিলাকে ধর্ষণ করেছে, তার গাড়ি দুর্ঘটনায় পড়ার পর! অথচ নরেন্দ্র মোদী তা নিয়ে কখনও একটি শব্দও উচ্চারণ করেন না! প্রতিটি রাজ্যে, প্রতিদিন ধর্ষণ হয়ে চলেছে! মোদী বলছেন—বেটি বচাও, বেটি পড়াও, কিন্তু কার কাছ থেকে ওই মেয়েদের বাঁচাতে হবে, তা বলছেন না! বাঁচাতে হবে তাঁরই দল বিজেপির বিধায়কদের হাত থেকে।"
রাহুল গান্ধীর এই বক্তৃতার ভিডিও নীচে দেখুন:
এই কংগ্রেস নেতা তাঁর মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চাইতে দৃঢভাবে অস্বীকার করেছেন! তার পরিবর্তে তিনি নরেন্দ্র মোদীর ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের একটি ভিডিও টুইট করেছেন, যাতে মোদী দিল্লিকে ভারতের "রেপ ক্যাপিটাল" বা ধর্ষণ-রাজধানী আখ্যায় ভূষিত করেছিলেন।
Modi should apologise.
— Rahul Gandhi (@RahulGandhi) December 13, 2019
1. For burning the North East.
2. For destroying India's economy.
3. For this speech, a clip of which I'm attaching. pic.twitter.com/KgPU8dpmrE
২০১৩ সালে মোদী দিল্লিকে ধর্ষণের রাজধানী আখ্যা দিয়েছিলেন এবং ধর্ষণ সহ মহিলাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের জন্য তখনকার কংগ্রেস সরকারকে দায়ী করে ভোটদাতাদের ভোট দেওয়ার সময় কথাটা মনে রাখতে বলেছিলেন।
When you go to vote- think- they made my Delhi a rape capital: Narendra Modi in Delhi http://t.co/vWaAC0xucN
— narendramodi_in (@narendramodi_in) November 23, 2013
হায়দরাবাদ ও উত্তরপ্রদেশের উন্নাওতে পর-পর দুটি নারকীয় ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর ধর্ষণ নিয়ে আলোচনা ও চাপান-উতোর ভারতীয় রাজনীতিতে এক নতুন বিরোধ সৃষ্টি করেছে।২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বর দিল্লিতে 'নির্ভয়া'র গণধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার বার্ষিকীর প্রাক্কালে মহিলাদের নিরাপত্তার বিষয়টি দেশকে আলোড়িত করছে।