১১ অগস্ট বেঙ্গালুরুর ৬০ হাজার লোকের একটি জমায়েত পুলিশের ওপর হিংসাত্মক হামলা চালায় বলে যে রিপোর্ট সংবাদসংস্থা এএনআই প্রকাশ করেছিল, তা একজন ব্যক্তির একটি যাচাই না করা ভিডিওর ভিত্তিতে লেখা।
হিন্দুস্তান টাইমস-এর ওয়েব সংস্করণ এবং দক্ষিণপন্থী পত্রিকা স্বরাজ্য তাদের খবরের শিরোনামে ওই অবাস্তব সংখ্যাটি উদ্ধৃত করে স্রেফ ওই একটি যাচাই-না-হওয়া ভিডিওর সাক্ষ্যের ভিত্তিতে। হিন্দুস্তান টাইমস পরে তার প্রতিবেদন ও শিরোনাম থেকে ওই সংখ্যাটি বাদ দিয়ে একটি সংশোধনী প্রকাশ করলেও স্বরাজ্য পত্রিকা এই লেখার সময় পর্যন্ত তা করেনি।
বেঙ্গালুরু পুলিশের একটি সূত্র বুমকে জানিয়েছে, জড়ো হওয়া বিক্ষুব্ধদের সংখ্যা বড় জোর হাজার দুয়েক ছিল। ঘটনাস্থলে উপস্থিত রাজনৈতিক দল স্বরাজ ইন্ডিয়ার জিয়া নোমানির হিসেবও তাই— দুই থেকে তিন হাজার লোক সেদিন ওখানে জড়ো হয়েছিল।
মঙ্গলবার রাতে কাভাল বাইরাসান্দ্রা অঞ্চলের দুটি মহল্লা কেজে হাল্লি ও ডিজে হাল্লি ব্যাপক হিংসায় কেঁপে ওঠে, যাতে অন্তত তিন জনের মৃত্যু হয় এবং পুলিশ সহ তিনজন আহতও হয়। হিংসার ঢেউ আছড়ে পড়ে পুলকেশিনগর মহল্লাতেও, যেখানে এক কংগ্রেস বিধায়কের বোনপোর সোশাল মিডিয়ায় পয়গম্বর মহম্মদকে উদ্দেশ্য করে লেখা একটি সাম্প্রদায়িক পোস্ট থেকে গণ্ডগোলের সূত্রপাত ঘটে। পুলিশের গাড়ি সহ বহু সরকারি সম্পত্তি জনতা জ্বালিয়ে দেয়।
কাল্পনিক সংখ্যা এবং যেভাবে তা ছড়িয়ে পড়লো
বুম ব্যাঙ্গালোরের এই হিংসা নিয়ে স্বরাজ্য পত্রিকার একটি প্রতিবেদন দেখতে পায়, যার শিরোনাম ছিল: "প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য, ৬০ হাজার লোকের এক জনতা পুলিশ ও থানায় আক্রমণ চালায়।" প্রতিবেদনের একটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
সমবেত জমতার সংখ্যা ৬০ হাজার বলার পিছনে হিন্দুস্তান টাইমস-এর একমাত্র উৎস ছিল এই পত্রিকার প্রতিবেদনটি। তারাও অন্য কোনও তথ্যের সমর্থন ছাড়াই একজনের সাক্ষ্যকেই প্রমাণ হিসাবে উদ্ধৃত করে। প্রতিবেদনটির আর্কাইভ করা আছে এখানে।
কয়েক ঘন্টার মধ্যেই আমরা হিন্দুস্তান টাইমস-এর প্রতিবেদনটিতে পরিবর্তন লক্ষ্য করি, যাতে ওই সংখ্যাটা পুরোপুরি বদলে দেওয়া হয়। প্রথম দিকে কোনও সংশোধনী বা অন্য কোনও ঘোষণা আমাদের নজরে পড়েনি, যা প্রতিবেদনটির আপডেট করা আর্কাইভ বয়ান থেকেও স্পষ্ট।
এরপর আমরা হিন্দুস্তান টাইমস-এর ওয়েব সংস্করণের সম্পাদক প্রসাদ সান্যালের সঙ্গে কথা বলি, যিনি আমাদের জানান, প্রথমে সংবাদসংস্থা এএনআই প্রচারিত এক ব্যক্তির একটি ভিডিও সাক্ষ্যের ভিত্তিতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। "প্রত্যক্ষদর্শীর ওই সাক্ষ্য স্বাধীনভাবে যাচাই করে দেখা হয়নি এবং তাই সর্বত্রই এই ভুলটা ঘটে যায়।"
#WATCH Bengaluru: Sharif, belonging to Civil Defence & an eye-witness to DJ Halli Police Station's vandalisation, comes to record his statement; says, "We're from Civil Defence & had come to protect Police. It was public's fault. This (Police Station) is like my temple,my masjid" pic.twitter.com/XeVyaK5Z1O
— ANI (@ANI) August 12, 2020
এর পর আমরা প্রতিবেদনটির সর্বশেষসংস্করণে চোখ বোলাই এবং দেখি, সেখানে একটি সংশোধনী ছাপা হয়েছে, যেখানে লেখা: "শুরুতে এই প্রতিবেদনটি একজনের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে রচিত হয়েছিল, যে দাবি করেছিল সোমবার রাত্রে ঘটনাস্থলে ৫০ থেকে ৬০ হাজার লোকের সমাবেশের কথা। পরে দেখা যায়, সংখ্যাটি সঠিক নয়, আর তাই সেটি বাদ দিয়ে দেওয়া হয়।"
হিন্দুস্তান টাইমস বাংলাও ৬০,০০০ সংখ্যার উল্লেখ করে তাদের প্রতিবেদনে। পরে প্রতিবেদটিতে কোনও রকম পরিবর্তনেরর ব্যাপারে সম্পাদকীয় নোট ব্যবহার না করেই সংখ্যাটি বদলে দেয়। ইউআরএল-এও সংখ্যাটি ৬০,০০০ রয়েছে এখনও।
কলকাতা ট্রিবিউন সংখ্যাটি ৬০,০০০ রেখেছে তাদের ফেসবুক পোস্টে ও প্রতিবেদনে।
স্বরাজ্যও পরে প্রতিবেদনটিতে ৬০,০০০ লোকের সংখ্যাটি যাচাই করেছে যদিও ইউআরএল-এ ৬০,০০০ রয়ে গেছে এখনও।