জি নিউজ,  টিভি নাইন এবং এবিএন তেলেগু হায়দরাবাদে পশুচিকিৎসকের ৪ অভিযুক্তদের এনকাউন্টারের  ছবি হিসেবে পুরনো ছবি ভুলভাবে খবরে দেখিয়েছে। ছবিটি ২০১৫ সালের, যখন চোরাচালানকারী  সন্দেহে কাঠুরিয়াদের এনকাউন্টার করা হয়েছিল। বুম খুঁজে পেয়েছে ভাইরাল হওয়া মূল  ছবিটি অন্ধ্রপ্রদেশের একটি ঘটনার যেখানে পুলিশ ২০ জন কাঠুরিয়াকে হত্যা করেছিল।
ছবিটিতে দেখা যায় খোলা মাঠে পুলিশ দাঁড়িয়ে ৩ টে মৃতদেহকে দেখছে। সঙ্গে ২৬ বছর বয়সী পশুচিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনে অভিযুক্তদের এনকাউন্টার করার জন্য পুলিশ বাহিনীকে স্তুতি করে লেখা হয়েছে 'হায়দরাবাদ এনকাউন্টার' এবং 'অভিনন্দন তেলেঙ্গানা পুলিশ'।
ছবিটি ঘন্টাখানেকের মধ্যেই ভাইরাল হয়ে যায়, যখন সাইবরাবাদের পুলিশ প্রকাশ করে যে, শুক্রবার কাকভোরে ওই এনকাউন্টারে ৪ অভিযুক্ত, মহম্মদ আরিফ, জলু শিবা, জলু নবীন, চিন্তাকুন্তা চেন্নাকেশাভুলু মারা গেছে। তেলেঙ্গানায় ২৯ নভেম্বর এক পশুচিকিৎসককে গণধর্ষণ ও পুড়িয়ে মারার অভিযোগে ৪ অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়। ডিসিপি প্রকাশ রেড্ডি নিউজ মিনিটকে বলেন যে পুলিশের থেকে অভিযুক্তরা অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে পুলিশের সঙ্গে গুলি বিনিময়ে মারা পরে।
টুইটারে ভাইরাল
ভারতীয় জনতা দলের মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন সোশাল মিডিয়া প্রধান আশিষ মেরখেড ভাইরাল ছবিটি তেলেঙ্গানা পুলিশকে অভিনন্দন জানিয়ে টুইট করেন।
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
তামিল অভিনেত্রী ইন্দুজা রবিচন্দ্রন ভাইরাল ছবিটি পুলিশকে বাহবা জানিয়ে টুইট করেন এই ক্যাপশন সহ, ''বিচার শেষ পর্যন্ত তার দায়িত্বমতো পরিবেশিত হল!!! ভালোবাসা তোমাদের ''সাহসী হায়দরাবাদ সরকার'' এখন শান্তিতে শয়ান।''
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
ইন্ডিয়া গ্লিটজ নামে একটি বিনোদন খবরের পোর্টাল জনগণের মতামত জানতে চেয়ে ভাইরাল ছবিটি শেয়ার করেছে উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিক সাইবরাবাদের ভিসি প্রধান ভিসি সজ্জনারের ছবির সঙ্গে যিনি হায়দরাবাদের তরুনী পশু চিকিৎসকের ধর্ষণের ঘটনাটির তদন্তের মূল দায়িত্বে ছিলেন।
টুইটটি  আর্কাইভ করা আছে এখানে।
খবরের চ্যানেলগুলির ত্রুটিপূর্ণ খবর
জি নিউজ, টিভি নাইন ভারতবর্ষ, টিনাইন গুজরাটি এবং এবিএন তেলেগু প্রভৃতি গণমাধ্যম ২০১৫ সালের অন্য সম্পর্কহীন একটি পুলিশি এনকাউন্টারের ঘটনাকে হায়দরাবাদে তরুনী পশুচিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যায় ৪ অভিযুক্তের এনকাউন্টারের ঘটনা বলে খবরে দেখায়।
জি নিউজ ভাইরাল হওয়া ছবিটিকে তাদের খবরে পুলিশের ওই এনকাউন্টারের ছবিকে ''প্রথম জি নিউজে'' বলে জল ছাপ দিয়ে দেখায়। একই ছবি ৪:৫০ সময়ে জি নিউজের খবরে দেখা যাবে।
ভিডিওটি  দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
গুজরাটি ভাষায় একটি খবরের চ্যানেল টিভিনাইন গুজরাটি এবং এরই সংস্থা টিভিনাইন ভারতবর্ষ নামের হিন্দি চ্যানেল একই পুরনো ছবি ব্যবহার করে দাবি করে, এটি হায়দরাবাদ ধর্ষণ কাণ্ডে অভিযুক্ত চারজনের পুলিশি এনকাউন্টারের প্রথম ছবি।
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
টুইটটি  আর্কাইভ করা আছে এখানে।
তেলেগু খবরের চ্যানেল এবিএন তেলেগু একই পুরনো ছবি একটি খবরে ব্যবহার করে দাবি করে এটি হায়দরাবাদে ধর্ষণে অভিযুক্তদের এনকাউন্টারের ছবি। ভিডিওটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
 তথ্য  যাচাই
বুম খুঁজে পেয়েছে ছবিটি ২০১৫ সালের। ওই ঘটনায় চন্দন কাঠ চোরাচালানকারী সন্দেহে অন্ধ্রপ্রদেশের পুলিশ গুলি করে ২০ জন কাঠুরিয়াকে হত্যা করে এবং ছবিটি কোনওভাবেই হায়দরাবাদে পশু চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যায় অভিযুক্তদের এনকাউন্টারের ছবি নয়।
রিভার্স সার্চ করে খুঁজে আমরা খুঁজে পাই ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে দ্য হিন্দুতে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ওই একই ছবি ব্যবহার করা হয়েছিল। প্রতিবেদনটিতে শিরোনাম লেখা হয়েছিল, ''২০ জন তামিলনাড়ুর কাঠুরিয়া অন্ধ্রপ্রদেশ পুলিশের গুলিতে মৃত।'' ২০১৫ সালের ৭ এপ্রিল প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে লেখা হয়, তামিলনাড়ুর পুলিশ ২০ জন কাঠুরিয়াকে বিপন্ন প্রজাতির রক্ত চন্দনের গাছ কেটে ফেলছে ভেবে বিচার বহির্ভূতভাবে হত্যা করে।
প্রতিবেদনটিতে  বলা হয়, চোরাচালান রোধে গড়া টাস্ক ফোর্স ধারণা করে শতাধিক কাঠুরিয়া তিরুমালা  পাহাড়ের পাদদেশে শিশাচালাম অরণ্যে রক্ত চন্দনের গুড়ি নিয়ে পালাচ্ছে। পুলিশ তাদের  ধরা দিতে বললে, কাঠুরিয়ারারা নাকি তাদের দিকে পাথর ও কাস্তে ছোঁড়ে বলে অভিযোগ।  তাতে আহতও হয় বেশ কয়েকজন।
বুম আগে ২৬ বছর বয়সী ওই পশু চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যা নিয়ে সোশাল মিডিয়ায় ছড়ানো ভুয়ো খবরগুলি খণ্ডন করেছে। প্রতিবেদনটি পড়তে ক্লিক করুন এখানে।






 
                               
                               
                               
                               
                              
