পেটিএম তাদের গ্রাহকদের একটি এসএমএস সম্পর্কে সাবধান করে দিয়েছে। ওই এসএমএস-টি দাবি করছে যে সেটি কম্পানির তরফ থেকে পাঠানো হচ্ছে। তাতে গ্রাহকদের সতর্ক করে দিয়ে বলা হচ্ছে যে, তাদের কেওয়াইসি (নো ইয়োর কাস্টমার) সাসপেন্ড বা স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে। এবং তা আবার চালু করানোর জন্য একটি ফোন নম্বরে ফোন করতে বলা হচ্ছে। বেশ কিছু পেটিএম গ্রাহক ওই মেসেজটি ট্যাগ করলে পেটিএম-এর অফিসিয়াল হ্যান্ডল থেকে টুইট করে জানানো হয় যে, মেসেজটি ভুয়ো।
কেওয়াইসি হল একটি কম্পানির পক্ষ থেকে তার গ্রাহকদের পরিচয় যাচাই করার পদ্ধতি। এি প্রক্রিয়ায় নিজেদের পরিচয় পত্রগুলি জমা দিতে হয় গ্রাহকদের—যেমন আধার কার্ড বা প্যান কার্ড। পেটিএম তাদের বার্তায় জানিয়েছে যে, তারা ওই ধরনের এসএমএস পাঠায় না, এবং সেগুলি কেবল জালিয়াতরাই পাঠিয়ে থাকে। ফিশিং হল গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার উপায়—যেমন, ইউজারনেম, পাসওয়ার্ড, এবং ক্রেডিট কার্ডের গোপনীয় তথ্য। ফিশিং যারা করে তারা অনলাইনে নিজেদের কোনও এক বিশ্বাসযোগ্য সংস্থা হিসেবে জাহির করে।
মেসেজটির সত্যতা জানতে চেয়ে সেটি বুমের হেল্পলাইনে(৭৭০০৯০৬১১১) পাঠানো হয়েছিল। পেটিএম ব্যবহারকারীরা যে বার্তাটি পেয়েছিলেন, সেটি ছিল এই রকম: "প্রিয় পেটিএম গ্রাহক, আপনার পেটিএম কেওয়াইসি রদ করে দেওয়া হয়েছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে পেটিএম অফিস ফোন ৬২৯১৬২৮৯৯২ অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দেবে। ধন্যবাদ, পেটিএম টিম।" (ইংরেজিতে মূল লেখা: Dear PAYTM customer your paytm KYC has been suspended, paytm office PH 6291628992 account will block within 24 hrs. THANK YOU PAYTM TEAM.")
পেটিএম হল ডিজিটাল ওয়ালেট যার মাধ্যমে, ডিজিটাল পদ্ধতিতে টাকা দেওয়া-নেওয়া করা যায়। কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠাতা বিজয় শেখর শর্মাও টুইট করে গ্রাহকদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন যে, তার কোম্পানির নামে ভুয়ো বার্তা ছড়ানো হচ্ছে।
These or some SMS with some lucky draw are examples of fraudsters attempting to get your details. Don't fall for them. pic.twitter.com/vyLUn5Z7Z7
— Vijay Shekhar (@vijayshekhar) November 19, 2019
ভুয়ো বার্তার জালিয়াতদের চিনে নিন
দু'টি এসএমএস-এ যে নম্বরগুলি দেওয়া ছিল, বুম সেগুলিতে ফোন করে। প্রথমে করা হয় ৭০৯৮৮৭৯০৯৪ নম্বরটিতে। ফোনটি যিনি ধরেন, তিনি রাহুল কুমার হিসেবে নিজের পরিচয় দেন। তিনি মিথ্যে দাবি করেন যে, তিনি পেটিএম-এর প্রতিনিধি। নয়ডায় অবস্থিত। এবং পেটিএমকে দেওয়া আমাদের কেওয়াইসি আপডেট করা প্রয়োজন।
জালিয়াতটি আমদের 'টিমভিউয়ার' লাগাতে বলে। সেটি হল একটি অ্যাপ, যার সাহায্যে এক ব্যক্তি ইন্টার্নেটের মাধ্যমে অন্য একজনের কম্পিউটারের দখল নিয়ে সেটি চালাতে পারে। তার ফলে, অপর প্রান্তের কম্পিউটারটি, দখল-নেওয়া কম্পিউটার বা মোবাইল ফোন থেকে ইচ্ছেমত ফাইল ও তথ্য তুলে নিতে পারে।
জালিয়াতটির সঙ্গে বুমের কথোপকথনের নির্বাচিত অংশ নীচে দেওয়া হল। উল্লেখ্য যে, আমরা যে ফোন থেকে কথা বলছিলাম, তাতে পেটিএম অ্যাপ ডাইনলোড করা ছিল না।
বুম: আমরা একটা মেসেজ পেলাম যাতে বলা হয়েছে যে, আমাদের কেওয়াইসি রদ করে দেওয়া হয়েছে। ব্যাপারটা কি?
রাহুল (জালিয়াত): নয়ডা থেকে আমি রাহুল কুমার। আপনার কেওয়াইসি কত দিন আগে আপডেট করিয়ে ছিলেন?
বুম: প্রায় পাঁচ-ছ' মাস আগে।
জালিয়াত: আপনি আমাদের পূরনো গ্রাহক। তাই ওই বার্তা পেয়েছেন। এখন আপনি যে লেনদেন করবেন সেগুলি আটকে যাবে। আপনার অ্যাকাউন্টও বন্ধ করে দেওয়া হবে।
বুম: তাহলে কি করতে হবে?
জালিয়াত: কেওয়াইসি কি ভাবে করতে হবে আমি আপনাকে বলে দিচ্ছি। আপনি আপনার প্যান কার্ড আর আধার কার্ডের ডিটেল আমায় দিন। আমি দেখছি যে, আপনার ফোনে পেটিএম অ্যাপ ইনস্টল করা আছে। আমি আপনাকে গাইড করব। কাজটা বেশ সহজ। মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যাপার।
(আমাদের ফোনে পেটিএম অ্যাপ ইনস্টল করা ছিল না।)
বুম: আমাদের ঠিক কি করতে হবে?
জালিয়াত: গুগুল প্লেস্টোরে 'কিউএস' (qs) টাইপ করে টিমভিউয়ার অ্যাপ্লিকেশন ইনস্টল করুন।
বুম: আমরা একটু পরে আবার ফোন করছি। এবং ওটা আমরা পরে করব।
(কথোপকথন শেষ)
বুম আরও একটি নম্বরে ফোন করে (৬২৯১৬২৮৯৯২)। যিনি ফোনটি তোলেন, তিনি রোহিত বলে নিজের পরিচয় দেন। তিনি দাবি করেন যে তিনি পেটিএম-এর একজন কর্মী। নয়ডায় অবস্থিত। রোহিতকে আমরা যখন বলি যে, কোম্পানির তরফ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে যে এসএমএস-টি ভুয়ো, সে বেশ রেগে বলে, "কিসের ভিত্তিতে আমাদের ভুয়ো বলা হচ্ছে? যান, পুলিশে অভিযোগ করুন।"
আগেও বুম ফিশিং এসএমএস খণ্ডন করেছিল। তাতে একটি লিঙ্কে ক্লিক করতে বলা হচ্ছিল। আর তা করলেই, ব্যবহারকারী একটি ভুয়ো আয়কর দপ্তরের ওয়েবসাইটে পৌঁছে যাচ্ছিলেন।
(অতিরিক্ত রিপোর্টিং: শচী সুতরিয়া)