অ্যাসিডে পুড়ে যাওয়া একটি অল্পবয়সী ছেলের চিকিৎসার ছবি সাম্প্রদায়িক রঙ চড়িয়ে ভাইরাল করে দাবি করা হচ্ছে যে, ছেলেটি পবিত্র হিন্দু ধর্মীয় উপবীত আয়াপ্পা মালা পরেছিল বলে শাস্তি হিসাবে তাকে তার স্কুলের শৌচালয় পরিষ্কার করতে বলা হয়, আর তাতেই এই বিপত্তি ঘটে।
ছবিটির ক্যাপশনের দাবি, "আয়াপ্পা মালা পরার শাস্তি—স্কুলের শৌচালয় অ্যাসিড দিয়ে পরিষ্কার করা। অ্যাসিড শিশুটির হাতে চলকে পড়ে। ঘটনাটি তামিলনাড়ুর তুতিকোরিন জেলার সরকারি সহায়তাপ্রাপ্ত গুড শেফার্ড আশ্রমিক স্কুলের।"
৬ ডিসেম্বর তামিলনাড়ুরই অন্য একটি সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের প্রধান শিক্ষক সপ্তম শ্রেণির দুই ছাত্রকে স্কুলের ল্যাবরেটরি থেকে অ্যাসিডের বোতল সরাতে নির্দেশ দেওয়ার পর ছেলেদুটির হাত অ্যাসিডে পুড়ে যায়। সেই ঘটনার ঠিক পরেই এই ঘটনাটি ঘটাতেই এটির ফোটো ভাইরাল হয়ে যায়।
টুইটটি দেখা যাবে এখানে। টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
শুধু টুইটারে নয়, একই ক্যাপশন দিয়ে আমরা ফেসবুকেও খোঁজখবর করে দেখতে পাই, সেখানেও পোস্টটি ভাইরাল হয়েছে।
তথ্য যাচাই
রুশ সার্চ ইঞ্জিন ইয়ানডেক্স ব্যবহার করে আমরা ছবিটির তল্লাশ করে দেখি, সেটি একটি সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বেসরকারি উচ্চ-মাধ্যমিক স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রের ছবি।
অ্যাসিডের একটি বোতল পড়ে ভেঙে গেলে ছেলেটির বাঁ হাত অ্যাসিডে পুড়ে যায়। ২০১৯ সালের ৬ ডিসেম্বর ডেকান ক্রনিকল সংবাদপত্র রিপোর্ট করে যে, অ্যাসিড ও রাসায়নিকগুলির ব্যবহারযোগ্যতার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় প্রধান শিক্ষক একদল ছাত্রকে বলেন, বোতলগুলি বাইরে নিয়ে গেয়ে মাটিতে পুঁতে দিতে।
ছেলেগুলির বয়স ১২-১৩ বছরের মধ্যে এবং তারা সকলেই থুটুকুড়ি জেলার ইডাইআরকাডুতে অবস্থিত নাজারেথ সিএসআই ডায়োসিস পরিচালিত টিডিটিএ নালমেইপার উচ্চ-মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্র। ঘটনার পরে-পরেই স্কুল-প্রশাসন ছেলেগুলিকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করান এবং তারপর সেখান থেকে দুজন ছাত্রকে থুথুকুড়ি জিএসআই হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে লরেন্স নামে আহত ছাত্রদের একজনের আত্মীয় আইনজীবী সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
বুম থুথুকুড়ি জেলার মুখ্য শিক্ষা অধিকর্তা জ্ঞান গৌরীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, "এটা সম্পূর্ণ ভুয়ো খবর যে ছেলেগুলিকে অ্যাসিড দিয়ে শৌচালয় পরিষ্কার করতে বলা হয়েছিল, কিংবা আয়াপ্পা মালা পরার অপরাধে তা করা হয়েছিল। এই ঘটনায় কোনও ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক বিষয় জড়িয়ে নেই এবং আহত ৬টি ছাত্রই বিভিন্ন সম্প্রদায় ও জাতের। সবচেয়ে বেশি আহত ছেলেটি তফশিলি সম্প্রদায়ভুক্ত, তবে কোনও ধর্মীয় বিরোধ এতে জড়িয়ে নেই।" তিনি বুমকে আরও জানান, ছেলেদের স্কুলের ল্যাবরেটরি পরিষ্কার করতে বলায় প্রধান শিক্ষককে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
প্রধান শিক্ষকের ভুল হয়েছিল, বাইরের কাউকে এ কাজের জন্য না ডেকে ছাত্রদের ল্যাবরেটরি পরিষ্কার করতে বলা। তিনি তার বদলে সপ্তম শ্রেণির ৬ জন ছাত্রকে এ কাজ করতে বলেন। অ্যাসিডের বোতলগুলি সরানোর সময়েই দুজনের হাত থেকে বোতল পড়ে গিয়ে ভেঙে গেলে এই বিপত্তি ঘটে।
মুখ্য শিক্ষা অধিকর্তা বলেন, যে ছেলেটি সবচেয়ে বেশি আঘাত পেয়েছিল, তার এখনও চিকিৎসা চলছে, অন্যজনকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
এর আগে তামিল তথ্যযাচাই ওয়েবসাইট ইউ-টার্ন এই ভুয়ো খবরটির পর্দাফাঁস করেছে।