'বন্ধ করো জেএনএউ, সাট জেএনইউ' নামে ফেসবুকের একটি পাবলিক গ্রুপ জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-বিক্ষোভের বিরোধীদের জন্য একটা বড় জায়গা হয়ে উঠেছে। তারা নিজেদের আপত্তির কথা উগরে দিচ্ছে ভুয়ো খবর ছড়িয়ে, প্রবল নারীবিদ্বেষী মিথ্যে প্রচার করে।
২০১৯ সালের ১৭ নভেম্বর অনিল শ্রীবাস্তব নামে এক জন গ্রুপটি তৈরি করেন। এই প্রতিবেদনটি লেখার সময় গ্রুপটির সদস্য সংখ্যা ২৫৮ জন, যাদের বেশির ভাগই পুরুষ। গত ৩০ দিনে এই গ্রুপের সদস্যরা প্রায় ৪৪৪টি ছাত্রবিরোধী পোস্ট তৈরি করেছে।
এই গ্রুপে মূলত অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের চুম্বন করার ছবি, প্রতিবাদীদের মার খাওয়ার ছবি, কন্ডোম হাতে মদের বোতল হাতে মহিলাদের ছবি, ছাত্রদের বয়স সংক্রান্ত মিথ্যে তথ্য ইত্যাদিই পোস্ট করা হয়। এর সঙ্গে অ্যাডমিন নানান পোস্টে মনের বিদ্বেষ উজাড় করে দেয়।
অক্টোবরের শেষ থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা খসড়া হস্টেল ম্যানুয়াল প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন করছেন। হস্টেল ম্যানুয়ালে হস্টেলের ফি বাড়ানো হয়েছে, এবং সেই সঙ্গে ছাত্রদের পোশাকবিধি চালু করা হয়েছে ও রাতে হস্টেলে ফেরার সময়সীমা ধার্য করা হয়েছে। এই প্রতিবাদ সম্পর্কে জানতে দেখুন এখানে।
এই প্রতিবাদ ইন্টারনেটে ব্যপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। উদার বামপন্থী চিন্তার প্রসার ঘটানোর জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতি আছে। নোবেলজয়ী অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সিতারামন, নীতি আয়োগ সিইও অমিতাভ কান্ত, তরুণ রাজনীতিক কানহাইয়া কুমার ও শেহলা রশিদের মত ব্যক্তিত্বরা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমালোচক, যারা মূলত দক্ষিণপন্থী হিন্দুত্ববাদী, তারা এই বিশ্ববিদ্যালয়কে কমিউনিস্ট এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আঁতুড়ঘর বলে মনে করেন। তারা প্রায়ই ছাত্রদের 'টুকড়ে টুকড়ে গ্যাং' বা 'আরবান নকশাল' নাম দিয়ে থাকেন। স্বামী বিবেকানান্দের মূর্তি ভাঙার ঘটনার পর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। ২০১৯ সালের ১৮ নভেম্বর তাদের দাবি নিয়ে পার্লামেন্টের দিকে মিছিল করে যাওয়া ছাত্রদের উপর যখন দিল্লি পুলিশ লাঠি চার্জ করে তখন এই সব মিথ্যে তথ্য আরও ছড়িয়ে পড়ে।
এই সব মিথ্যে তথ্য ছড়িয়ে জেএনইউ-এর ছাত্রছাত্রীদের চরিত্রহীন, সরকারি খরচে ফুর্তি করা লোকজন প্রমাণ করার চেষ্টা চলছে। কুৎসিততম আক্রমণের শিকার ছাত্রীরা।
'বন্ধ করো জেএনইউ শাট জেএনইউ' গ্রুপের সব পোস্টের মূল কথা কার্যত এটি।
এক জন মহিলা একটা হার্ট শেপ স্ট্র দিয়ে কন্ডোম থেকে কিছু পান করছে, এমন একটি উস্কানিমূলকছবি পোস্ট করা হয়েছে। সঙ্গে আছে অবমাননাকর ক্যাপশন। সার্চ করে দেখা গেছে যে এই ছবি জেএনইউ-এর নয় এবং বিভিন্ন যৌনগন্ধী ওয়েবসাইটে ছবিটি আগেও দেখা গিয়েছে।
আর একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে একজন মহিলা হাতে মদ এবং সিগারেট ধরে আছেন। ছবিটিতে কোনও ক্যপশন নেই। রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখা যায় এই ছবিটি ইন্টারনেটে ২০১৫ সাল থেকে আছে। তা ছাড়া ছবিটিতে এমন কিছুই নেই যা থেকে মনে হতে পারে যে এটি জেএনইউ-র ছবি। এই ছবিটি সম্পর্কে আরও পড়া যবে এখানে।
নারীবিদ্বেষ থেকে তৈরি মিথ্যে তথ্য
২০১৯ সালের মে মাসে মহিলা অধিকার কমী সিপিআই নেত্রী অ্যানি রাজার গ্রেফতার হওয়ার একটি ছবিকে পুলিশ এক ছাত্রীকে গ্রেফতার করছে বলে মিথ্যে তথ্য দিয়ে শেয়ার করা হয়। অ্যানি রাজা সে সময় প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ-এর বিরুদ্ধে আনা যৌন কেলেঙ্কারির প্রতিবাদ করে গ্রেফতার হন। বুমের তথ্য যাচাই পড়তে পারেন এখানে।