জিনঘটিত বিরল চর্ম রোগ হারলেকুইন ইচথিয়োসিসে আক্রান্ত সদ্যোজাতের বেদনাদায়ক ভিডিও শেয়ার করা হয়েছে—এই দাবির সঙ্গে যে, অসমে একটি 'দানব শিশু' জন্ম নিয়েছে।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিতে এক সদ্যোজাতকে দেখা যাচ্ছে, যার গায়ের চামড়া পুরু ফ্যাকাসে আঁশাকার। শিশুটির চোখ ঠিকরে বেরিয়ে আসছে আর তার ঠোঁট ফোলা। মেঝেতে বিছানো চাদরের উপর শুয়ে শিশুটি কাঁদছে আর কিছু লোকজন তার চারপাশে জড়ো হয়ে তাকে দেখছে।
ভিডিওটির সঙ্গে মালায়লম ভাষায় লেখা একটি অডিও ক্লিপও আছে। তাতে এক জনকে বলতে শোনা যাচ্ছে, "এগারো মাস গর্ভাবস্থার পর শিশুটির জন্ম হয় এবং সে তার মায়ের পাকস্থলি এবং অন্ত্র খেয়ে ফেলেছে। শিশুটির জন্ম দেওয়ার সময় মায়ের মৃত্যু হয়। স্বাভাবিক ভাবে শিশুটির জন্ম হয়নি, অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাকে মাতৃজঠর থেকে বার করা হয়। শিশুটির মা খুবই গরিব পরিবারের। একজন নার্স অস্ত্রোপচারের সময় শিশুটিকে কোলে নিয়েছিল। তিনি তিন ঘণ্টার মধ্যে মারা যান।
হোয়াটসঅ্যাপে আসা অডিওটি।
মেসজটিতে আরও দাবি করা হয়েছে, "আট মাসের মাথায় শিশুটির ওজন ছিল আট কেজি। তারপর ২৪ ঘন্টার মধ্যে তার ওজন বেড়ে হয় ১৩ কেজি। ইঞ্জেকশন দিয়ে শিশুটিকে মেরে ফেলা হয়। অসমের একটি জেলা হাসপাতালে গত শুক্রবার ঘটনাটি ঘটে। শিশুটির দেহ এখন পরবর্তী গবেষণার জন্য সংরক্ষণ করা হয়েছে।
একই ভিডিও ইউটিউবে ভাইরাল হয়েছে মিথ্যে ক্যাপশনের সঙ্গে "পরিত্যাক্ত অবস্থায় পাওয়া গেল বিচিত্র শিশুকে।"
ভিডিওটি খুবই পীড়াদায়ক বলে বুম এখানে সেটি না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তথ্য যাচাই
আমরা ভিডিওটিকে কয়েকটি কি-ফ্রেমে ভেঙ্গে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখতে পাই যে ভিডিওটি ২০১৯ সালের জুলাই মাস থেকে ভাইরাল হয়েছে।
ভিডিওটি কোথায় তোলা হয়েছে সে ব্যাপারে বুম নিশ্চিত হতে পারেনি। তবে আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে ভিডিওতে যে শিশুটিকে দেখা যাচ্ছে, তার হারলেকুইন ইচথিয়োসিস নামে চামড়ার একটি বিরল অসুখ হয়েছে।
হারলেকুইন ইকথাইসিস আসলে যারা শুষ্ক আঁশাকার 'মাছ'-এর মত ত্বক নিয়ে জন্মায়।
যে সব সদ্যোজাতদের এই অসুখ থাকে, তাদের শরীরের বেশির ভাগ অংশের ত্বক খুব শক্ত এবং মোটা হয়। তাদের মুখ, নাক বা কানের গঠনেও ত্রুটি থাকে।
এর আগে ২০১৮ সালে দিল্লিতে উত্তরপ্রদেশের এক মহিলা হারলেকুইন ইচথিয়োসিসে আক্রান্ত শিশুর জন্ম দেন। তার আগে ২০১৬ সালে নাগপুরে এক কৃষক পরিবারে হারলেকুইন ইচথিয়োসিস আক্রান্ত একটি শিশুর জন্ম হয়।
এই রোগে আল্রান্ত শিশুদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুব কম। তারা জন্মের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মারা যায়। আগে উল্লেখ করা ঘটনাগুলিতেও শিশুগুলি জন্মানোর কয়েক ঘন্টার মধ্যেই মারা গিয়েছে।
হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে এই রোগ কখনও প্রতিকার নেই, তবে চিকিৎসার মাধ্যমে কিছুটা নিরাময় সম্ভব।
বার্টস হেলথ ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস ট্রাস্টের দুই চর্মরোগ-গবেষক আহমেদ এইচ এবং ও' টুল ইএ-র ২০১৪ সালের গবেষণাপত্র অনুযায়ী, প্রতি তিন লক্ষ শিশুর মধ্যে মাত্র এক জন এই রোগে আক্রান্ত হয়।