চিনে ব্যাপক হারে শুকূর নিধনের এক অস্বস্তিকর ফুটেজ এখন সোশাল মিডিয়ায় ছড়ানো হচ্ছে। সেই সঙ্গে মিথ্যে দাবি করা হচ্ছে যে, চিনে নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে, প্রাণীগুলিকে জ্যান্ত কবর বা পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে। বুম দেখে যে, ভিডিওগুলি দু' বছরের পুরনো। এবং চিনে আফ্রিকান সোয়াইন ফিভার রুখতে যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, ভিডিওগুলি সেই সংক্রান্ত। ওই অসুখটি মানুষের হয় না, কিন্তু শূকরদের মৃত্যু ঘটায়।
ভিডিওগুলিতে একাধিক ক্লিপ রয়েছে। যেমন, একটি ট্রাক বোঝাই শূকর, একটি বড় গর্তের মধ্যে সেগুলিকে ফেলা হচ্ছে, এবং আরও একটিতে আগুন ধরিয়ে মারা হচ্ছে প্রাণীগুলিকে।
প্রথম ক্লিপটি ৪৬ সেকেন্ডের। তাতে দেখা যাচ্ছে, অনেকগুলি শূকরকে ঠেসে তোলা হয়েছে একটি দাঁড়িয়ে-থাকা ট্রাকে। তারপর দেখানো হচ্ছে একটা বিরাট গর্ত। আর একটি এক্সকাভেটার বা মাটি কাটার যন্ত্রের সাহায্যে আর্তনাদ করতে-থাকা প্রাণীগুলিকে ঠেলে ফেলে দেওয়া হচ্ছে তার মধ্যে। ফেসবুকে ভাইরাল ভিডিওর স্ক্রিনশট দেওয়া হল নীচে। সত্যতা যাচাইয়ের জন্য সেটি বুমের কাছেও এসেছিল।
অন্য ফুটেজটি ১ মিনিট ২৪ সেকেন্ডের। তাতে দেখা যাচ্ছে একটি গর্তের মধ্যে এক পাল জ্যান্ত শূকরের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
এবং দু'টি ভিডিওই ফেসবুকে ছড়াচ্ছে। সেগুলির ক্যাপশনে বলা হচ্ছে, "করোনা থেকে যে অসুখ হচ্ছে বা অন্য কোনও অসুখ ঠেকাতে চিন সরকার শূকর নিধন করছে।"
পোস্টগুলি আর্কাইভ করা আছে এখানে ও এখানে। ভিডিওগুলি অস্বস্তিকর হওয়ায় বুম এগুলি এখানে অন্তর্ভুক্ত করেনি।
তথ্য যাচাই
প্রথম ভিডিও
ভিডিওটির কয়েকটি প্রধান ফ্রেম বেছে নিয়ে আমরা রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। যে ভিডিওতে শূকরগুলোকে একটি ট্রাকে দেখা যাচ্ছে এবং পরে তাদের একটি গর্তে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। এই ভিডিওর স্ক্রিনশটটির হদিস পাওয়া যায় একটি সংবাদ প্রতিবেদনে।
লেখাটি প্রকাশিত হয়েছিল ১ জানুয়ারি ২০১৯। লেখাটির সঙ্গে লিঙ্ক ছিল ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮'র একটি ফেসবুক পোস্টের। আর সেটি ছিল চিনের মূল ভূখণ্ডে আফ্রিকান সোয়াইন ফিভারের প্রাদুর্ভাব সংক্রান্ত। লেখাটির স্ক্রিনশট দেওয়া হল নীচে।
২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ওই একই ভিডিও টুইট করা হয়েছিল। ২০১৮'র ১৩ নভেম্বর একটি ব্লগের লেখায়, ট্রাকে করে শূকর নিয়ে যাওয়ার ভিডিওর একটি স্ক্রিনশট ব্যবহার করা হয়। ওই লেখার এক অংশে বলা হয়, "সম্প্রতি, ফুজিয়ানের পুটিয়ানে একটি বড় খামারে সোয়াইন ফিভার দেখা দেওয়ায়, খামার মালিক, অনেক জ্যান্ত শূকর বিক্রি করে পালিয়ে যায়। সেগুলি কেনার পর, আসে পাশের খামারে কয়েকশো শূকর মারা যায়। অসুস্থ শূকরগুলি ছড়িয়ে পড়ায়, স্থানীয় মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হয় আতঙ্ক। কিন্তু কর্তৃপক্ষ কিছুই বলে না। ৮ নভেম্বর, চিন কমিউনিস্ট পার্টির কৃষি ও গ্রামীন মন্ত্রক ঘোষণা করে যে, ফুজিয়ানে পুটিয়ান শহরের লিংচুয়ান এলাকায় অবস্থিত হাইক্সিঙ ব্রিডিং কম্পানি লিমিটেডের খামারে আফ্রিকান সোয়াইন ফিভার মহামারীর আকার ধারণ করেছে।"
শূকরের মাংসের সবচেয়ে বড় বাজার হল উত্তর চিন। সেখানে আফ্রিকান সোয়াইন ফিভার সংক্রমণের খবর সমর্থন করে, 'ইপকটাইমস'-এ প্রকাশিত ২০১৮ সালের ১ অগস্ট প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন। সংক্রমণ নানান প্রদেশে ছড়িয়ে পড়লে, ২০১৮ সালের দ্বিতীয়ার্ধে হাজার হাজার শূকর মেরে ফেলা হয়েছিল সেদেশে।
দ্বিতীয় ভিডিও
যে ভিডিওতে এক পাল শূকরকে গর্তে ফেলে আগুন ধরিয়ে দিতে দেখা যায়, সেটি ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ফেসবুকে পোস্ট করা হয়েছিল। ওই প্রাণীগুলিকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার কারণ হিসেবে একটি 'প্লেগ'-এর উল্লেখ করা হয়। আমরা নভেম্বর ২০১৮'য় তৈরি এমন আরও অনেক ভিডিওর সন্ধান পাই যেখানে শূকরদের পুড়িয়ে মারতে দেখা যায়।
ডিসেম্বর ২০১৮'য় প্রকাশিত আরও একটি সংবাদ প্রতিবেদন থেকেও শূকর খামারে সোয়াইন ফিভারের সংক্রমণের কথা জানা যায়। এবং এও জানা যায় যে, প্রাণীগুলিকে জ্যান্ত পুঁতে বা পুড়িয়ে মেরে ফেলা হয়েছিল।