সোশাল মিডিয়ায় চাউর হয়েছে যে, হিন্দু দেবীকে কটাক্ষ করে বর্ষীয়ান অভিনেত্রী শাবানা আজমি যে সব কথা বলেছিলেন, কঙ্গনা রানাবত নাকি তার মুখের মতো জবাব দিয়েছেন । পোস্টটি শেয়ার করেছে আমরা নরেন্দ্র মোদীকে সমর্থন করি নামে একটি গোষ্ঠী, যারা রানাবতকে প্রশংসা করেছে তাঁর ‘জবরদস্ত’ জবাবের জন্য । বলা হচ্ছে, শাবানা নাকি ২০১৭ সালে নবরাত্রির সময় হিন্দু দেবীর বিরুদ্ধে কুকথা বলেছিলেন, যার জবাব কঙ্গনা দিয়েছেন ।
ফেসবুক পোস্টটিতে কঙ্গনার তথাকথিত উদ্ধৃতির সঙ্গে তাঁর একটি ছবিও দেওয়া হয়েছে । বলা হয়েছে, ঈদের উত্সবের সময় কঙ্গনা নাকি ইসলামকে তার পাপাচার থেকে মুক্ত করার ডাক দিয়েছেন । সচিত্র লেখাটির শিরোনামঃ “শাবানা আজমিকে দুর্দান্ত জবাব দিয়েছেন কঙ্গনা রানাবত” । তারপর লেখা হয়েছে—শাবানা নবরাত্রির সময় হিন্দু দেবী সম্পর্কে অপমানজনক টুইট করেছিলেন । তার পরেই রয়েছে রানাবতের সেই উদ্ধৃতিঃ “এই ঈদে আসুন আমরা প্রার্থনা করি, যেন কোনও আয়েষাকে ৬ বছর বয়সে বিয়ে দেওয়া না হয়, কোনও শাহবানুকে যেন তিন-তালাক দিয়ে অসহায় করা না হয়, কোনও মীনা কুমারীকে যেন হালালার মধ্য দিয়ে যেতে না হয়, কোনও ফতিমাকে চতুর্থ স্ত্রীর অমর্যাদা পেতে না হয়, কোনও শেহলাকে বোরখা পরতে না হয়, কোনও ইসরাতকে সন্ত্রাসবাদী হয়ে যেতে না হয় এবং কোনও মুমতাজকে ১৪টি সন্তানের জন্ম দিতে না হয় ।”
নীচে পোস্টটি দেখতে পারেন এবং তার আর্কাইভ বয়ানটি এখানে দেখুন ।
তথ্য যাচাই
এ বছরের জানুয়ারিতে পুলওয়ামায় জঙ্গি হামলার ঘটনার পর কঙ্গনা রানাবত শাবানা আজমিকে ‘জাতীয়তা-বিরোধী’ আখ্যা দেওয়ার পর দুজনের মধ্যে বাক-যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় । করাচিতে শাবানা ও তাঁর স্বামী জাভেদ আখতারের একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা ছিল, পুলওয়ামা হামলার প্রেক্ষিতে যেটি তাঁরা বাতিল করেন । রানাবতও নিহত শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে তাঁর ফিল্মের সাফল্য উদযাপনের পার্টি বাতিল করে দেন । কিন্তু ২০১৬-র উরি হামলার পর পাকিস্তানি শিল্পীরা ভারতে নিষিদ্ধ ঘোষিত হলেও শাবানা পাকিস্তানের সঙ্গে সাংস্কৃতিক সম্পর্ক অটুট রাখার অপরাধে কঙ্গনা তাঁকে জাতীয়তা-বিরোধী আখ্যা দেন ।
২০১৯-এর ১৬ ফেব্রুয়ারি ইন্ডিয়া টুডে পত্রিকায় প্রকাশিত এক রিপোর্টে রানাবতকে উদ্ধৃত করে লেখা হয়ঃ “শাবানা আজমির মতো লোকেরা আজ পাকিস্তানের সঙ্গে সাংস্কৃতিক বিনিময় কর্মসূচি বন্ধ করার কথা বলছেন—অথচ ওঁরাই তো ‘ভারত তেরে টুকরে হোঙ্গে’ গ্যাংকে প্রশ্রয় দেন….ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি এ ধরনের জাতীয়তা-বিরোধী লোকে ভর্তি, যারা অনেক ভাবেই শত্রুর মনোবল বাড়িয়ে দেয় ।”
শাবানা আজমিকে যখন একটি ওয়েবসাইট এ ব্যাপারে যোগাযোগ করে, তখন তিনি বলেন—“যখন সমগ্র জাতি একটা শোকাবহ ঘটনায় নিমগ্ন, তখন তাঁর বিরুদ্ধে কে ব্যক্তিগত আক্রমণ হানল, তাতে কান দেওয়া অর্থহীন ।”
তবে ভাইরাল হওয়া পোস্টটিতে যেমনটা দাবি করা হয়েছে, সেভাবে রানাবত কিন্তু ইসলামের বিরুদ্ধে কোনও নিন্দেমন্দ করেননি । বুম এ ব্যাপারে কঙ্গনার বোন রঙ্গোলি চান্দেলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, তাঁর প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেলে রিপোর্টটি হালনাগাদ করা হবে ।
নবরাত্রি নিয়ে শাবানার টুইটটি ২০১৭ সালের
২০১৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর শাবানা আজমি একটি ছবি টুইট করেন, যাতে বলা হয় আমাদের দেশের মেয়েদের জন্য দুর্গা অষ্টমীর তাত্পর্য কী হওয়া উচিত-- নিরাপত্তা, শিক্ষা এবং ছক বা ছাঁচ ভেঙে বের হওয়া । এ জন্য তখনই আজমিকে ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয় ।
মজার ব্যাপার, বুম লক্ষ করেছে, সে সময়কার জবাবি টুইটের সঙ্গে রানাবতের এখনকার উদ্ধৃতির আশ্চর্য মিল!
জবাবি টুইটে বলা হয়েছিলঃ “আসুন আমরা প্রার্থনা করি, যেন এই মহরমে কোনও হামিদাকে তিন-তালাক দেওয়া না হয়, কোনও সাকিনাকে নিকাহ হালালায় বাধ্য করা না হয়, কোনও ফরিদাকে বোরখা পরতে বাধ্য করা না হয়, কোনও অপ্রাপ্তবয়স্ক রুবিনাকে বুড়ো শেখের সঙ্গে বিয়ে দেওয়া না হয়, কোনও আফরিনকে তার আত্মীয়দের দ্বারা ধর্ষিত হতে না হয়, যেহেতু ব্যক্তিগত আইন অনুযায়ী সেটা অপরাধের পর্যায়ে পড়ে না ।”
কঙ্গনার মুখে বসানো ভাইরাল হওয়া ভুয়ো উদ্ধৃতির সঙ্গে এই জবাবি টুইটগুলো হুবহু এক নয়, তবে তার বাচনভঙ্গি এবং উদাহরণগুলো একই, শুধু মেয়েদের নামগুলো পাল্টে দেওয়া ।