জোম্যাটো-কে আক্রমণ করে একটি নিউজ-ক্লিপ-এর অংশ ভাইরাল করা হয়েছে, যাতে হরিয়ানার রোহতকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর টাকা খোয়ানোর গল্প আছে। ছাত্রীটি ভুল করে জোম্যাটোর গ্রাহক পরিষেবা হেল্পলাইন বলে বিজ্ঞাপিত একটি ভুয়ো নম্বরে ফোন করার পর জালিয়াতরা তার অ্যাকাউন্ট থেকে ৮০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়।
সংশ্লিষ্ট ভিডিওটি এমন একটা সময়ে বাজারে ছাড়া হয়েছে, যখন খাদ্য সরবরাহকারী এই পরিষেবাটির বিরুদ্ধে রক্ষণশীল হিন্দুরা আক্রমণাত্মক হয়েছে পরিষেবা দানে তার ধর্মনিরপেক্ষ অবস্থানের কারণে। এক হিন্দু ক্রেতা/গ্রাহক শুধুমাত্র খাবার পৌঁছে দেওয়ার ডেলিভারি বয়টি মুসলিম এই অজুহাতে তার একটি অর্ডার বাতিল করে দেয়। জোম্যাটো সংস্থা এ ক্ষেত্রে তার ডেলিভারি নীতির পক্ষে দৃঢ়ভাবে সাওয়াল করেছিল।
২ মিনিটের ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, কীভাবে এক মহিলা তাঁর সঙ্গে হওয়া জালিয়াতির বিশদ বিবরণ দিচ্ছেন।
ফেসবুকে পোস্ট হওয়া ভিডিওটির ক্যাপশন হল: “জোম্যাটো থেকে খাবার অর্ডার দিয়ে এই মেয়েটির ৮০ হাজার টাকা গায়েব হয়ে গেছে। আরও জোম্যাটোকে অর্ডার দাও! # জোম্যাটোকে বয়কট করুন!”
একই ভিডিওর সঙ্গে ভাইরাল হওয়া অন্য একটি দাবি: “জোম্যাটোর ড়েলিভারি বয়রা হিন্দু মেয়েদের ফোন-নম্বর ছড়িয়ে দিচ্ছে এবং তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা সরিয়ে নিচ্ছে। ভাইসব, সতর্ক হোন এবং #জোম্যাটোকে বয়কট করুন!”
নেপথ্যে একজনকে বলতে শোনা যাচ্ছে—“মোবাইল অ্যাপ জোম্যাটো মারফত খাবারের অর্ডার দেওয়ার ব্যাপারে সতর্ক হোন, কেননা সাইবার অপরাধীরা আপনাদের তথ্য জেনে ফেলছে। ওরা এই অ্যাপগুলির ওপর নজরদারি চালায় এবং প্রথম সুযোগেই আপনার আমানত খালি করে দেবে। ঠিক এই ধরনের ঘটনাই হরিয়ানার রোহতকে মহর্ষি দয়ানন্দ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী সাক্ষীর বেলায় ঘটেছে। সাইবার অপরাধীরা তার ব্যাংক আমানত থেকে ৮০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।”
ক্লিপটিতে এমনও দাবি করা হয়েছে যে, মহিলাটি জোম্যাটো কর্তৃপক্ষের কাছে এ ব্যাপারে দরবার করলেও তারা বিশেষ গা করেনি। এই দাবিটির সত্যতা অবশ্য বুম যাচাই করে উঠতে পারেনি।
ভিডিওটিতে পরে মেয়েটি জালিয়াতির ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করেছে। তার কাছে পৌঁছে দেওয়া অর্ডার বাতিল করার জন্য সে ইন্টারনেটে জোম্যাটোর একটি নম্বরে যোগাযোগ করে। দেখা যায়, নম্বরটি সাইবার অপরাধীদের দেওয়া, যারা তার সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য জেনে নিয়ে তার আমানত থেকে ৮০ হাজার টাকা সরিয়ে ফেলে।
ভিডিওটি নীচে দেখুন। পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
সোশাল মিডিয়ায় ভিডিওটি ঝড় তুলেছে এবং ফেসবুক ও টুইটারে অনেকেই এটি শেয়ার করছেন।
তথ্য যাচাই
“জোম্যাটো জালিয়াতি রোহতক”(জোম্যাটো ফ্রড রোহতক)—এই নাম দিয়ে বুম ইন্টারনেটে খোঁজ করলে এবিপি নিউজের আপলোড করা এ সংক্রান্ত দীর্ঘতর একটি ভিডিওর সন্ধান পায়।
দীর্ঘতর এই ভিডিওটি দেখলে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, মহিলাটি আদৌ জোম্যাটোর কোনও হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করেননি, তিনি ফোন করেছিলেন সাইবার অপরাধীদের দেওয়া একটি নম্বরে। ভিডিওটি জোম্যাটোর মতো খাবার পরিবেশনের অ্যাপ সহ অন্য যাবতীয় অনলাইন পরিষেবার অ্যাপ ব্যবহারের ক্ষেত্রে হুঁশিয়ার করেছে।
ক্লিপটি দেখে মনে হয়, মহিলাটি যখন জোম্যাটোর এক প্রতিনিধির কাছে সহায়তা চান, তখন তিনি তাতে তেমন আমল দেননি। তবে এই বিষয়টা বুম আলাদাভাবে যাচাই করে দেখতে পারেনি।
বুম এ ব্যাপারে রোহতক পুলিশের কাছেও জানতে চায়। গান্ধী ক্যাম্প থানার আধিকারিক জানান, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে।
“এটা একটা সাইবার অপরাধ। আমরা এখনও বিষয়টি তদন্ত করছি এবং জোম্যাটোর আঞ্চলিক ম্যানেজারকে ডেকে পাঠিয়েছি। তিনি আমাদের সঙ্গে সবরকম সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন”
স্টেশন ইন-চার্জ, গান্ধী ধাম থানা
অফিসারটি বুমকে জানান, ডেলিভারি বয়কে গ্রেফতার করা হয়নি, যেহেতু মহিলা ফোন করেছিলেন ইন্টারনেট থেকে পাওয়া একটি নম্বরে।
বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও জোম্যাটো বুমের প্রশ্নের উত্তর দেননি।
জোম্যাটোর অবস্থানের জন্য সোশাল মিডিয়ায় তার বিরুদ্ধে অনেক ভুয়ো পোস্ট ভাইরাল হচ্ছে।