ভাইরাল হওয়া সোশাল মিডিয়া পোস্টে দাবি করা হয়েছে নেদারল্যান্ডস-এর সরকার আইন প্রণয়ন করে পঞ্চম শ্রেণী থেকে 'গীতা' পড়া বাধ্যতামূলক করেছে।
ভাইরাল হওয়া পোস্টটিতে ক্যাপশন লেখা হয়েছে, 'আমাদের দেশে গীতা প্রত্যেক স্কুলে চালু করা দরকার।'
পোস্টে দেওয়া ছবিটিতে লেখা রয়েছে, ''নেদারল্যান্ডের মোট জনসংখ্যা ১ কোটি ৭০ লক্ষ। সেখানে হিন্দু মাত্র ২ লক্ষ ১৫ হাজার! অথচ সরকার আইন প্রণয়ন করে পঞ্চম শ্রেণী থেকে 'গীতা' পড়া বাধ্যতামূলক করলো!! কারণ গীতা পড়লে মানসিক বিকাশ ঘটবে..."
এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত ৭৮৫ জন শেয়ার করেছেন পোস্টটি। এবং লাইক করেছেন ৪৩ জন। পোস্টটি দেখা যাবে এখানে। পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম নেদারল্যান্ডস সরকারের এই পদক্ষেপের ব্যাপারে বিশ্বাসযোগ্য কোনও গণমাধ্যমের প্রতিবেদন খুঁজে পায়নি।
বুম নেদারল্যান্ডস সরকারের ওয়েবসাইট খুঁজে দেখেছে। সেখানে বাধ্যতামূলক বিষয়ের তালিকায় 'গীতা' ধর্মপুস্তকের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্তির কোনও উল্লেখ করা নেই। জনসাধারনের জন্য পরিচালিত সরকারী স্কুলে ধর্ম বা নীতি শিক্ষার সংস্থান না থাকলেও বেসরকারী স্কুলে সেরকম কোনও বিধিনিষেধ নেই।
বুম খুঁজে দেখেছে ২০১৬ সালে একই বিবৃতি টুইটারে ভাইরাল হয়েছিল।
(ইংরেজিতে মূল ক্যাপশন: Bhagavad Gita classes made compulsory for Dutch students from Grade 5 -The Netherlands Law)
সেখানে ব্যবহার করা হয়েছিল দুটি বাচ্চা মেয়ের ছবি। বুম রিভার্স সার্চ করে জানতে পারে ছবিগুলি ইসকনডিজায়ারট্রি ওয়েবসাইটের একটি ওয়াবপেজের। ওয়েবপেজটি ডিলিট করে দেওয়া হয়েছে।
বুম ইন্টারনেট আর্কাইভ থেকে ক্যচে ভার্সন ওয়েবপেজটি উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। 'বিউটিফুল লিটিল বৈষ্ণব' শিরোনামে প্রকাশ হয়েছিল ওই ছবিটি।
বুম ফেসবুকে কিওয়ার্ড সার্চ করে আরও কিছু ভিডিও খুঁজে পেয়েছে। ভিডিওগুলিতে সংস্কত শ্লোক পড়তে দেখা যাচ্ছে বাচ্চাদের।
পোস্টগুলিতে ক্যাপশন লেখা হয়েছে, 'ভগবতগীতা ক্লাস পঞ্চম শ্রেণী থেকে ডাচ পড়ুয়াদের বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।'
(মূল ইংরেজিতে ক্যাপশন: Bhagavad Gita classes made compulsory for Dutch students from Grade 5)
বুম 'কিড লারনিং সংস্কৃত', 'সংস্কৃত চ্যন্টিং ইন স্কুল' প্রভৃতি গুগুল ও ইউটিউবে সার্চ করে জানতে পারে সেগুলি নেদারল্যান্ডস-এর ডাচ পড়ুয়াদের ভিডিও নয়।
সেগুলি লন্ডনের সন্ত জেমস স্কুলের পড়ুয়াদের সংস্কৃত শেখার ভিডিও। ১৯৭৫ সালে সন্ত জেমস স্কুল স্থাপিত হয়। ভাষা শিক্ষা অঙ্গ হিসেবে বাচ্চাদের রয়েছে সংস্কৃত শিক্ষার পাঠ, ব্যকরণ, বানানবিধি। পাঠ্যসূচি হিসেবে বিভিন্ন ক্লাস ও স্তরের পড়ুয়াদের জন্য সংস্কৃত ভাষা অন্তর্ভুক্ত। আয়োজন করা হয় বাৎসরিক ধর্মীয় পাঠ প্রতিযোগীতাও। বিস্তারিত জানা যাবে সন্ত জেমস স্কুলের ওয়েবসাইটে।
সন্ত জেমস স্কুলের সংস্কৃত ভাষা শিক্ষার পরিচালক পল পালমারোজার-এর ডিডিনিউজ-কে দেওয়া ইন্টারভিউ নীচে দেওয়া হল।