একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে এক কিশোরকে একাধিক ব্যক্তি কুপিয়ে মারছে। ওই বীভৎস ঘটনার ভিডিও ভারতের এক গণপিটুনির দৃশ্য বলে চালানো হচ্ছে এখন হোয়াটসঅ্যাপ আর সোশাল মিডিয়ায়।
ভিডিওটি ৪৭ সেকেন্ডের। তাতে দেখা যাচ্ছে একাধিক লোক এক কিশোরকে মাটিতে ফেলে বেধড়ক মারছে। মনে হচ্ছে একটি আবর্জনার স্তূপে ঘটছে ঘটনাটা।
লোকগুলি আক্রান্তকে ইঁট, লাঠি এবং কুঠার দিয়ে আঘাত করছে, আর অপর একজন রেকর্ড করছে ওই ভয়াবহ ঘটনা। আক্রমণকারীরা সম্ভবত নিজেদের মধ্যে পোর্তুগিজ ভাষায় কথা বলছিল।
ভিডিওতে যাদের দেখা যাচ্ছে তাদের একেবারেই ভারতীয়দের মত দেখতে নয়। যা শোনা যাচ্ছে, তার সঙ্গে ভারতীয় ভাষার কোনও মিল নেই। তবুও হোয়াটসঅ্যাপ আর টুইটারে সেটি ভারতে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। ভিডিওটির সঙ্গে দেওয়া একটি পাদটিকায় বলা হয়েছে, "এই ভিডিওটি ব্যাপকহারে শেয়ার করুন, যাতে এটি কালকের মধ্যে নরেন্দ্র মোদী ও অন্যান্য মন্ত্রীদের কাছে পৌঁছে যায়। যাতে, ওই জানোয়ারগুলোর শাস্তি হয়। এই ভিডিও দেখে যদি আপনি বিচলিত না হন আর এটি শেয়ার না করেন, তাহলে আপনি মানুষ বলে বিবেচিত হওয়ার যোগ্য নন!"
তাতে আরও বলা হয়, "মোদী দেশে আইনের কোনও প্রয়োজন নেই।" স্পষ্টতই ইঙ্গিতটা হচ্ছে ঝাড়খন্ডে এক সাম্প্রতিক ঘটনার প্রতি। চুরির সন্দেহে সেখানে এক মুসলমানকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।
এর আগে টুইটার হ্যান্ডেল 'পায়েল রোহতাগি ফ্যানক্লাব' ভিডিওটি টুইট করেছিল। পরে অবশ্য সেটি তুলে নেওয়া হয়। বলা হয়, ভিডিওটির উৎস সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না বলেই সেটি সরিয়ে নেওয়া হল।
ভিডিওটির দৃশ্যগুলি বীভৎস হওয়ার কারণে বুম ভিডিওটিকে এখানে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। টুইটটির আর্কাইভ করা আছে এখানে।
তথ্য-যাচাই
ভিডিওটিকে ফ্রেমে-ফ্রেমে ভাগ করে বুম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে।
এর ফলে একটি ফেসবুক পোস্ট সামনে আসে। তা থেকে জানা যায় ঘটনাটি ঘটেছিল ব্রাজিলে। সমকামী হওয়ার অভিযোগে সেখানে এক কিশোরকে হত্যা করা হয়।
প্রধান শব্দগুলি দিয়ে আরও সার্চ করলে কয়েকটি সংবাদ প্রতিবেদনের সন্ধান পাওয়া যায়। তাতে বলা হয় ১৭ বছর বয়সী ওয়েসলে টিয়াগো ডি সওসা ক্যারাভেল্লোকে ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭ হত্যা করা হয়। ঘটনাটি ঘটে উত্তরপূর্ব ব্রাজিলের সেয়েরা অঞ্চলের ফোরটালেজা শহরে।
সমকামীদের প্রতি তীব্র ঘৃণা থেকেই ওই অপরাধ সংগঠিত হয়েছে, তা বোঝাতে ওই ভিডিওটি সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছিল। তবে স্থানীয় পুলিশ সে কথা অস্বীকার করে। তারা বলে, নিহত ব্যক্তি যে সমকামী ছিলেন সেরকম কোনও খবর নেই তাদের কাছে।
প্রকাশিত খবরে বলা হয় "অপরাধী গোষ্ঠীর মধ্যে মারপিট" ওই হত্যাকান্ডের কারণ।
স্বাধীনবাবে ওই হত্যার কারণ নির্ধারণ করা বুমের পক্ষে সম্ভব হয়নি।