শরীর কেটে ছড়ানো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কিছু লোক পরিষ্কার করছে, ব্রাজিলের গা ঘুলিয়ে ওঠা এ রকম একটি ভিডিও হোয়াট্স্যাপ এবং সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করে বলার চেষ্টা হচ্ছে, এটি ভারতে সক্রিয় ছেলে-ধরা গোষ্ঠীগুলির অপকর্মের নমুনা।
ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, ৩ জন লোক মেঝেতে ছড়িয়ে থাকা মাছি-ভনভন-করা কয়েকটি শরীরের টুকরো সরাচ্ছে আর তাদের নির্দেশ দিচ্ছে কালো জামা পরা দুজন লোক। লোকগুলি পর্তুগিজ ভাষায় কথা বলছিল বলেই মনে হয়।
২৪ সেকেন্ডের এই ভিডিওটির দৃশ্য এতই পৈশাচিক যে, বুম সেটি না-দেখানোরই সিদ্ধান্ত নিয়েছে । ভারতে কোনও ক্যাপশন ছাড়াই হোয়াট্স্যাপে ভিডিওটি শেয়ার করা হচ্ছে এবং তার সঙ্গে আরও কিছু বিচ্ছিন্ন ছবি জুড়ে দিয়ে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা হচ্ছে যে, এ দেশে ছেলেধরা এবং কিডনি-পাচার চক্রের তত্পরতার এগুলোই পর্যাপ্ত প্রমাণ।
তবে ভিডিওটির একটি স্ক্রিনশট নিয়ে খোঁজখবর চালিয়ে দেখা গেছে, এটি বেশ পুরনো, অন্তত ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসের। ওই বছরেরই জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে ইউ-টিউবে ওই একই ভিডিও আপলোড করা হয়। দুটি ভিডিওর কোনওটিরই ক্যাপশনে ঘটনা সম্পর্কে বিশদে কিছুই বলা হয়নি। (অনুগ্রহ করে ভিডিও দুটি দেখার আগে সতর্কতা অবলম্বন করুন, কারণ দৃশ্যগুলি হিংসার)
বিভিন্ন আধুনিক তদন্ত-প্রযুক্তি প্রয়োগ করে আমরা বুঝতে পেরেছি, ভিডিওটি ব্রাজিলের জেলখানার ভিতরে ঘটে যাওয়া একটি বীভত্স দাঙ্গার পরবর্তী ঘটনাবলীর ছবি। দাঙ্গাটি ঘটে ২০১৭ সালে।
ইনভিড নামে একটি ভিডিও-যাচাই প্রযুক্তি প্রয়োগ করে আমরা দেখি, একজনের টি-শার্টে সিভিল পুলিশ (পোলিশিয়া সিভিল) শব্দদুটি লেখা আছে।
গুগল ইমেজ সার্চে গিয়ে আমরা পোলিশিয়া সিভিল শব্দদুটি সার্চ করে একই ভাবে লেখা ছবি দেখতে পাই।
নৃশংস ভিডিও আপলোড করে, এমন একটা ওয়েবসাইটেও আমরা এই ভিডিওটি খুঁজে পায়। যদিও ভিডিওটি আপলোড করা হয় ২০১৯ সালের মার্চে, তার ক্যাপশনে স্পষ্ট লেখা আছে—“ব্রাজিলের একটি জেলখানার ভিতরে দুই উপদলের দাঙ্গায় বেশ কয়েকজন বন্দিকে এ ভাবে কচুকাটা করা হয়।”
ওই একই ভিডিওর একটি স্ক্রিনশট এএফপি ফ্যাক্টচেক এ বছরের মার্চে পর্দাফাঁস করে। সংস্থাটি নৃশংস ব্রাজিল (গোর ব্রাজিল) নামের ওয়েবসাইটটিতে অন্য একটি পুরনো পোস্টও খুঁজে পায় ২০১৮ সালের ১৮ জানুয়ারি, যার সঙ্গে পর্তুগিজ ভাষায় একটি প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়েছিল।
প্রতিবেদনটির অনুবাদ পড়লে মনে হয়, ২০১৭ সালের ১৪ জানুয়ারি ব্রাজিলের রিও গ্রান্দে দো নর্তের আলকাকুজ জেলখানায় প্রতিদ্বন্দ্বী দুই বন্দিগোষ্ঠীর দাঙ্গার ফলেই এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড চলেছিল। এ ব্যাপারে আরও পড়ুন এখানে।
ব্রাজিলের কারাগারে গণহত্যা
২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে ব্রাজিলের ভিড়ে-ঠাসা জেলখানাগুলিতে প্রতিস্পর্ধী বন্দি-উপদলগুলির মধ্যে দাঙ্গায় শতাধিক বন্দি নির্মমভাবে খুন হন। এই সব হিংসাত্মক দাঙ্গায় পরাজিত পক্ষের বন্দিদের শুধু হত্যা করাই নয়, দেহ টুকরো-টুকরো করে কেটে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
বছরের প্রথম দিনটিতেই আমাজন জঙ্গলের নিকটবর্তী মানাউস শহরে আনিসিও জোবিম জেলখানায় মাদক চোরাচালানকারী বন্দি-উপদলগুলির দাঙ্গায় প্রায় ৬০ জন বন্দি নিহত হন। ১৭ ঘন্টা ব্যাপী সেই দাঙ্গায় বন্দিরা ১২ জন জেলপ্রহরীকে পণবন্দি করে রাখে এবং হিসেব নেই এমন সংখ্যক বন্দি জেল থেকে পালিয়েও যায়। সংবাদ-রিপোর্ট অনুযায়ী দাঙ্গা থামলে দেখা যায়, বেশ কিছু নিহতের দগ্ধ, ছিন্নভিন্ন দেহ চারপাশে ছড়িয়ে আছে। এ বিষয়ে আরও জানতে এখানে, এখানে এবং এখানেপড়ুন।
১৪ জানুয়ারি দেশের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে আলকাকুজ জেলখানায় অন্য একটি দাঙ্গায় ৩০ জন নিহত হয়। স্থানীয় মিডিয়াকে উদ্ধৃত করে এএফপি জানায়, এই দাঙ্গাটি ব্রাজিলের বৃহত্তম মাদক পাচারকারী উপদল দ্য ফার্স্ট ক্যাপিটাল কমান্ড বনাম তার প্রতিদ্বন্দ্বী মাদক চোরাচালান গোষ্ঠী রেড কমান্ড-এর সমর্থকদের মধ্যে ঘটে। এখানেও পরাজিতদের দেহ টুকরো-টুকরো করে কেটে ছড়িয়ে দেওয়ার নৃশংসতা ঘটে। আরও পড়ুন এখানে।