সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যেখানে দাবি করা হয়েছে যে একটি ট্রেনের যাত্রীদের প্লাস্টিকের চালের ভাত দেওয়া হয়েছে।
ওই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একদল যাত্রী ভাত দিয়ে ছোটো গোল্লা পাকিয়ে সেগুলোকে শক্ত মেঝের উপর ছুঁড়ে দিচ্ছেন। তাতে ভাতের বলগুলো ভেঙে যাচ্ছে না। ভিডিয়োটিতে দাবি করা হয়েছে, ভাতের মধ্যে যে প্লাস্টিক আছে, এটা তারই অকাট্য প্রমাণ।
টুইটটি দেখা যাবে । টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
ফেসবুকেও ভাইরাল
পোস্টটি দেখা যাবে এখানে। পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
তথ্য যাচাই
২০১৭ সালের জুন মাসে বুম প্লাস্টিকের চাল সংক্রান্ত ঠিক এইরকম একটি দাবির তথ্য যাচাই করেছিল।
আমরা ১১ বছরের এক স্কুলছাত্রীকে এই একই পরীক্ষা করে দেখতে বলি। তার বাড়িতে যে সাধারণ চালের ভাত রান্না হয়েছিল তাই দিয়ে এই পরীক্ষাটি করা হয় এবং আমরা দেখতে পাই যে যে কেউ তার রান্নাঘরে এই ভাতের লাফানো এই বল তৈরি করতে পারে।
ভাতের বল' বৈশিষ্ট্য
ইন্ডিয়া গেট ঘটনা
২০১৭ সালের জুন মাসে একটা ভিডিও ভাইরাল হয় যেখানে মনদীপ সিং নামে এক ব্যক্তি, ভিডিয়োটিতে যিনি নিজেকে নরওয়ের অসলোর বাসিন্দা বলে দাবি করেন, বলেন যে 'ইন্ডিয়া গেট' ব্র্যান্ডের যে চাল তিনি রান্না করেছেন তা দিয়ে ভাতের বল বানানো যাচ্ছে এবং তা শক্ত জায়গায় ছুঁড়ে দিলে লাফিয়ে উঠছে। তিনি ওই চালকে প্লাস্টিক চাল বলে দাবি করেন।
ইন্ডিয়া গেটের মূল কোম্পানি কেআরবিএল লিমিটেড পাটিয়ালা হাউস কোর্ট থেকে ইউটিউব, হোয়াটসয়াপ ও ফেসবুকের বিরুদ্ধে স্থগিতাদেশ বার করে এবং এই ভিডিয়োটি ইন্টারনেটে শেয়ার করার ব্যাপারে বিধিনিষেধ জারি করা হয়।
কেআরবিএল ভাতের বলের ব্যাপারে ব্যাখ্যা হিসাবে নীচের বক্তব্যটি বুমকে জানায়।
১) চাল রান্না করার সময় সিদ্ধ হয়ে যাওয়া স্টার্চ বা শর্করা তাপ থেকে শক্তি পায়। তারফলে শর্করার অণুগুলির জোড় ভেঙ্গে যায় এবং জল থাকার ফলে হাইড্রোজেন আরও জল শুষে নেয়। শর্করার কণাগুলি অপরিবর্তনীয় ভাবে জলে আরও বেশি করে মিশে যায় এবং তা প্লাস্টিকের চেহারা নেয়। তার ভিস্কোসিটি বাড়ে,জেল স্ট্রেংথ ও টেন্সিল স্ট্রেংথওবাড়ে। ভাত রান্নার জন্য ব্যব্যহার করা জল প্লাস্টিসাইজার হিসাবে কাজ করে, ফলে প্লাস্টিসিটি বা ভিস্কোসিটি বেড়ে যায়।
২) ভাত রান্না হয়ে যাওয়ার পর শর্করা ফুলে আঠালো হয়ে ওঠে।
৩) সাধারণ ভাবে রান্না করা ভাতকেও বলের মতো গোল্লা পাকালে তালাফানোর ক্ষমতা অর্জন করে। ফুলে ওঠার ফলে চালের আয়তন বেড়ে যায় এবং তারমধ্যে জল ও বাতাস আটকে যায়। ভাতের মণ্ড বলের আকারে গড়ে নিলেও একই ঘটনা ঘটতে পারে।
বুম ইতিমধ্যে তার নিজস্ব কিচেন এক্সপেরিমেন্ট দিয়ে প্রমাণ করে দিয়েছে যে যে কোনো ব্র্যান্ডের চালের ভাত দিয়েই বল বানানো সম্ভব।
প্লাস্টিক চাল নিয়ে এফএসএসএআই-এর বক্তব্য
ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ডস অথরিটি অফ ইন্ডিয়া তাদের ওয়েবসাইটে প্লাস্টিক চালের ব্যপারে তাদের বিবৃতি দিয়েছে।
এফএসএসএআই সেখানে জানিয়েছে যেহেতু চাল একটি জটিল শর্করা এবং চালের ৮০%ই শর্করা,ফলে রান্না করার সময় তা স্বাভাবিক ভাবেই পুড়ে যেতে পারে।
তারা আরও জানিয়েছে যে চালের মধ্যে আঠালো পদার্থ থাকার ফলে রান্না করার পর যদি ভাত দিয়ে বল পাকানো হয়, তবে তা বলের মতই বাউন্স করবে।
তামিলনাড়ুতে প্লাস্টিক চালের গুজব
২০১৭ সালের ১৬ই জুন ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত প্লাস্টিক চাল বিষয়ক প্রতিবেদনকে তামিলনাড়ু সরকার গুজব বলে উড়িয়ে দেয়।
খাদ্য ও অসামরিকপণ্য বিষয়ক দফতরের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী আর কামরাজ রাজ্য বিধানসভায় জানিয়েছেন, "ভারতের কোথাও প্লাস্টিক চাল বাজেয়াপ্ত হয়নি। তামিলনাড়ুতে সোশ্যাল মিডিয়া প্লাস্টিক চালের গুজব ছড়িয়ে দিচ্ছে।"