প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ির জনসভায় দাবি করেন যে উত্তরবঙ্গের বন্ধ চা বাগানগুলি খোলার জন্য যাবতীয় পদক্ষেপ কেন্দ্রীয় সরকার করেছে।
সভার বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি হল ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’। সেই কারণেই আমরা রাজ্যের বন্ধ হয়ে যাওয়া চা বাগানগুলি খুলে দিয়েছি।”
সঙ্গের ভিডিয়োটিতে ১:১৮ মিনিট থেকে ১:২৬ মিনিট অবধি অংশে দেখা যাচ্ছে যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হিন্দিতে বলছেন, “এনডিএ কা নীতি হ্যায়, ইসলিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার নে রাজ্য কা বন্ধ চায়েবাগানো কো খুলে হ্যায়।”
শুক্রবার মোদী বলেন, “এনডিএ সরকারের উন্নয়ননীতির নির্দিষ্ট অভিমুখ আছে, এবং সেই অনুসারেই পলিসি বা নীতি নির্ধারিত হয়। সেই কারণেই আমরা পশ্চিমবঙ্গের বন্ধ চা বাগানগুলি ফের খুলেছি। সেই বাগানগুলিতে যাঁরা কাজ করেন, সেই শ্রমিকদের জন্য আমরা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টও খুলে দিয়েছি। চা-বাগানের শ্রমিকদের জন্য পেনশনও দিয়েছি।”
রাজ্যের একাধিক পদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে বুম। তাঁরা জানান, ডুয়ার্সে মোট ১৪টি চা-বাগান বন্ধ রয়েছে। জলপাইগুড়িতে আটটি, আলিপুরদুয়ারে ছ’টি। এর মধ্যে কয়েকটি বাগান পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। সেই বাগানগুলি খোলার জন্য নতুন কোনও উদ্যোগ কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকারের তরফে হয়নি বলেই জানান তাঁরা।
জি পি গোয়েঙ্কার ডানকান ইন্ডাস্ট্রিজ পরিচালিত সাতটি চা-বাগানের পরিচালনার দায়িত্ব অধিগ্রহণ করার জন্য ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে কেন্দ্রীয় সরকার টি বোর্ডকে নির্দেশ দেয়। টি বোর্ড এই সাতটি বাগানের পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে, কিন্তু বাগানগুলির শ্রমিকদের অবস্থার উন্নতি ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছে।
সেন্টার ফর ইন্ডিয়ান ট্রেড ইউনিয়নের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য সমন পাঠক বললেন, “চা শ্রমিকদের দাবিগুলি পূরণ করার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার এখনও অবধি ব্যর্থ। যদিও কেন্দ্রীয় সরকার টি বোর্ডকে নির্দেশ দিয়েছে জি পি গোয়েঙ্কার মালিকানাধীন ডানকান ইন্ডাস্ট্রিজ-এর অধীনস্থ সাতটি চা-বাগান অধিগ্রহণ করতে, কিন্তু তারা চা-শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। ২০১৮ সালের অগস্টে জয়েন্ট ফোরাম ফর ট্রেড ইউনিয়নস শ্রমিকদের ন্যূনতম বেতনবৃদ্ধির দাবিতে বন্ধ ডাকে। একাধিক বার প্রতিবাদের পর পশ্চিমবঙ্গ সরকার ন্যূনতম মজুরির পরিমাণ ১৫৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৪৪ টাকা করেছে।”
আইএনটিইউসি-সমর্থিত ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব প্ল্যান্টেশন ওয়ার্কার্স-এর সাধারণ সম্পাদক মণি কুমার দরনাল বললেন, “ডুয়ার্স অঞ্চলে এখন ১৪টি চা-বাগান বন্ধ। রাজ্য সরকার যদিও বা আংশিক ভাবে হলেও শ্রমিকদের কল্যাণের কথা ভেবেছে, রাজ্যের বন্ধ চা-বাগান খুলতে কেন্দ্রীয় সরকার কোনও পদক্ষেপই করেনি। বন্ধ চা-বাগানের সমস্যার সমাধান করতে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের আলোচনার মাধ্যম এক সঙ্গে পদক্ষেপ করা উচিত।“
রাজ্য সরকারের পদস্থ আধিকারিকদের মতে, এখন ৪,৩৯৬ জন বন্ধ চা-বাগানের শ্রমিক লক-আউট গওয়া শিল্পের শ্রমিকদের জন্য প্রদত্ত ১,৫০০ টাকার এক্স গ্র্যাশিয়া পান। ২০১৮ সালের পূজার আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিদ্ধান্তটি ঘোষণা করেন। এ ছাড়াও, বিপিএল কার্ডে যে সুবিধাগুলি প্রাপ্য, তাঁরা সেগুলিও পান। বন্ঝ চা-বাগানের সব শ্রমিক দু’টাকা প্রতি কিলোগ্রাম দরে চাল পান। তাঁরা স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত, অর্থাৎ প্রয়োজনে তাঁরা নিখরচায় স্বাস্থ্য পরিষেবা পেতে পারেন।
ওয়েস্ট বেঙ্গল টি ডায়রেক্টরেট-এর চেয়ারম্যান সৌরভ চক্রবর্তী জানালেন, “বন্ধ কারখানার প্রায় ৪,৩৯৬ জন শ্রমিক ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকারের থেকে এক্স গ্র্যাশিয়া পেমেন্ট পেয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার আরও ৩০৮ জন চা-শ্রমিককে চিহ্নিত করেছে, যাঁরা বন্ধ বাগানের শ্রমিক হওয়া সত্ত্বেও গত বছর এক্স গ্র্যাশিয়া পাননি, ঠিক ভাবে ফর্ম পূরণ না করার জন্য। এই বছর থেকে তাঁরাও এক্স গ্র্যাশিয়া পাবেন। ১৯৮৯ সালে বন্ধ কারখানার শ্রমিকদের জন্য এই আর্থিক সাহায্যের পরিমাণ ছিল ৫০০ টাকা।”
কেন্দ্রীয় সরকারকে তীব্র আক্রমণ করে শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “২০১৬ সালে কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে রাজ্যের সব বন্ধ চা-বাগান খুলে দেবে। চা-বাগান খোলার জন্য তারা কি বিন্দুমাত্র উদ্যোগ করেছেন? উনি (নরেন্দ্র মোদী) মিথ্যে কথা বলছেন। আমাদের রাজ্য সরকার বন্ধ চা-বাগানের শ্রমিকদের সাহায্য করছে। অন্যান্য চা-শ্রমিকদেরও সাহায্য করছে। ওরা (কেন্দ্র) চা-বাগানের শ্রমিকদের জন্য পেনশন স্কিমও খোলেনি।”