জলের তলায় ডুবে থাকা স্থাপত্যের এক সেট ছবি শেয়ার করা হচ্ছে এই মিথ্যে দাবি করে যে, সেগুলি সমুদ্রে তলিয়ে যাওয়া গুজরাটের পৌরাণিক শহর দ্বারকার ধ্বংসাবশেষ।
'দ্বারকা' শব্দের মানে, স্বর্গে যাওয়ার দ্বার। আধুনিক দ্বারকা শহর গুজরাটের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত। হিন্দুদের কাছে দ্বারকা হল একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মস্থান। কথিত আছে যে, গুজরাটের পশ্চিম উপকূলে ওই শহর প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণ।
একজন টুইটার ব্যবহারকারী চারটি ছবির একটি সেট শেয়ার করেন। ক্যাপশনে লেখেন, "শ্রীকৃষ্ণের দ্বারকা। গুজরাটের ডুবে-যাওয়া সেই শহর। যার বর্ণনা আছে মহাভারতে। এটা সত্য। কিন্তু খ্রিস্টান দুনিয়া বলে এর কোনও প্রমাণ নেই! #জয়শ্রীকৃষ্ণ।"
টুইটটি দেখা যাবে ও টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত টুইটটি ১,৬০০ বার রিটুইট করা হয়েছে আর লাইক করেছেন ৩,২০০ জন।
ফেসবুকে ভাইরাল
আমরা একই ক্যাপশন দিয়ে সার্চ করি। দেখা যায়, ছবিগুলি ফেসবুকেও মিথ্যে দাবি সমেত শেয়ার করা হয়েছে।
ইন্টারনেটে ভাইরাল
'পোস্টকার্ড' সহ বেশ কয়েকটি ওয়েবসাইট ও ব্লগ ওই ভাইরাল ছবিগুলি শেয়ার করে এই বলে যে সেগুলি তলিয়ে যাওয়া শহরেরই ছবি।
পোস্টকার্ডের দ্বারা ছড়ানো একাধিক ভুয়ো খবর বুম খন্ডন করেছে। ক্লিক করুন এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম দেখে যে, ছবিগুলি দ্বারকার নয়, যদিও তেমনটাই দাবি করা হয়েছে ভাইরাল পোস্টে।
প্রথম ছবি
আমরা ইয়ান্ডেক্সের সাহায্যে, রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। দেখা যায় ছবিটি অন্য অনেক মিথ্যে দাবির সঙ্গে ভাইরাল হয়েছিল।
কিছু ব্লগ মিথ্যে দাবি করে যে, ছবিটি সমুদ্রে বিলুপ্ত অ্যাটলান্টিসের। সেটি হল এক কাল্পনিক দ্বীপ। একটি দাম্ভিক দেশের কি পরিণতি হতে পারে তা বোঝাতেই প্লেটো অ্যাটলান্টিসের কথা লেখেন তাঁর 'টিমাইউস' ও 'ক্রিটিয়াস' গ্রন্থে।
অন্যরা সেটিকে বিলুপ্ত মিশরীয় শহর থোনিস-হেরাক্লিয়ন-এর অবশেষ বলে বর্ণনা করেছেন। প্রখ্যাত প্রত্নতত্ত্ববিদ ফ্র্যাঙ্ক গ্যাডিও ২০০০ সালে ওই শহরের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করেন।
নেপচুন মেমোরিয়াল রীফের ছবি
আমরা দেখি যে, জলের তলায় সিংহের মূর্তিটি নেপচুন মেমোরিয়াল রীফের। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফ্লোরিডার উপকূলে সেটি একটি কৃত্রিম উপায়ে তৈরি রীফ। রীফ হল জলের তলায় বালি, পাথর আর প্রবালের এলাকা।
নেপচুন সোসাইটি সৎকারের কাজ করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সৎকারের কাজ করে, এমন বৃহৎ কোম্পানিগুলির মধ্যে নেপচুন একটি।
নেপচুন মেমোরিয়াল রীফ হল জলের তলায় একটি সমাধি স্থল। সেখানে চিতা ভস্ম সিমেন্টের সঙ্গে মিশিয়ে নানা ধরনের সামুদ্রিক প্রাণীর আকৃতি তৈরি করা হয়। যেমন, স্টারফিস, শামুক বা সামুদ্রিক কচ্ছপ।
নেপচুন মেমোরিয়াল রীফের ফেসবুক পেজে আমরা দূরে জলের মধ্যে বড় থাম সহ সেই একই ক্লাসিক্যাল সিংহ দেখতে পাই।
তাদের ইউটিউব চ্যানেলে আমরা একটি ভিডিও পাই। তাতে দেখা যায় একজন স্কুবা ডাইভার সাঁতরে ওই স্ট্যাচুটির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
বুম নেপচুন মেমোরিয়াল রীফের সঙ্গে যোগাযোগ করলে, তারা জানান যে, ছবিটা তাদের রীফেরই।
দ্বিতীয় ছবি
ওই ভাইরাল ওপর মত বিনিময় থেকে একটা ইঙ্গিত পেয়ে, আমরা 'ফ্লিকার'এ সার্চ করি। দেখা যায় একই ছবি সেখানে পোস্ট করেছেন বালা গোপালন নামের এক ব্যক্তি।
ছবিটি ১৬ এপ্রিল ২০০৬ সালে তোলা হয়। ক্যাপশনে বলা হয়, "সুনামির পর। ২০০৫-এর সুনামিতে মন্দিরের গোপুরমের মাথা ভেঙে গেছে। দৃশ্যটা আমায় শেলির 'ওজিমানডিয়াজ'র কথা মনে করিয়ে দেয়। তরঙ্গবাদি, তামিলনাডু, ইন্ডিয়া।"
তৃতীয় ছবি
ইয়ানডেক্সের সাহায্যে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে দেখা যায়, ছবিতে নেপচুন মেমোরিয়াল রীফের বলেই ব্যবহার করা হয় একটি ওয়েবসাইটে।
নেপচুন মেমোরিয়াল ২০১৭ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি ছবিটি ফেসবুকে পোস্ট করে। তাতেও একই ধরনের স্থাপত্য দেখা যায়।
নেপচুন মেমোরিয়াল বুমকে জানায় যে, ওই ছবিটি তাদেরই রীফের।
চতুর্থ ছবি
এবার 'টিন আই'-এর সাহায্যে আমরা রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। দেখা যায়, ছবিটি আন্তর্জালে প্রথম আসে ২০১৩ সালের ২ অক্টোবর।
ছবিটি একাধিক ব্লগে ভাইরাল হয়েছে। কিন্তু সেখানে যা দাবি করা হয়, তা যথেষ্ট তথ্য-সমর্থিত নয়। কোথাও বলা হয়েছে সেটি দক্ষিণ আমেরিকায় পেরুর লেক টিটিকাকার জলের তলায় একটি মন্দির। আবার কোথাও দাবি করা হয়েছে সেটি কল্পকথার শহর অ্যাটলান্টিসের ছবি। তবে ছবিটি যে আসলে কোথাকার, বুম তা চিহ্নিত করতে পারেনি।