সম্প্রতি একটি অতি উদ্বেগজনক ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যাতে দেখা যাচ্ছে বেশ কয়েক জন লোক একটি যুবককে ঘিরে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন। তাঁদের সন্দেহ যে যুবকটি ছেলেধরা। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োটির ভাষ্য বিপজ্জনক ভাবে বিভ্রান্তিকর।
ভিডিয়োটিতে বলা হয়েছে, “গোটা দেশ জুড়েই ছেলেধরার দল ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের কঠোর হাতে দমন করা জরুরি। নয়ডা/ভুবনেশ্বর— দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘটা এমন অপরাধের ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় আসায় গোটা দেশে আলোড়ন শুরু হয়েছে। আমরা এ রকম ভিডিয়োও পেয়েছি, যাতে ঘটনাস্থল ও সময় স্পষ্ট ভাবে বোঝা যাচ্ছে না। কিন্তু অভিভাবকদের নিজেদের সন্তানের বিষয়ে সতর্ক হতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।”
এর পর নয়ডা ও ভুবনেশ্বরের রাস্তায় খারাপ হয়ে থাকা সিসিটিভি-র প্রসঙ্গে আলোচনা করা হয় ভিডিওটিতে।
ভাইরাল হওয়া ভিডিয়োটি এখানে দেখা যাবে। পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
প্রায় তিন মিনিটের এই ভিডিয়োটিতে দেখা যাচ্ছে যে এক দল লোক এক জন খালি গায়ে বসে থাকা যুবককে প্রশ্ন করছেন। যুবকটি দৃশ্যত আহত। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হচ্ছে তাঁর বাড়ি কোথায়। ভিডিয়োটির শেষাংশে যুবকটির স্বীকারোক্তি শোনা যাচ্ছে যে সে বাচ্চাদের অপহরণ করতেই কানপুরে এসেছে।
তথ্য যাচাই
বুম ভিডিয়োটি খুঁটিয়ে দেখে এবং খেয়াল করে যে ভিডিয়োটিতে একাধিক বার কানপুর শহরটির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর পর আমরা হিন্দিতে ‘কানপুরে ছেলেধরা ধৃত’ কিওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করি এবং দেখি যে এই ভিডিয়োটিই ইউটিউবে আপলোড করে দাবি করা হয়েছে, ঘটনাটি উত্তরপ্রদেশের ইটাওয়ার। হিন্দি সংবাদপত্র দৈনিক ভাস্কর-এর একটি সংবাদ প্রতিবেদনেরও সন্ধান পাওয়া যায়, যেখানে এই ঘটনাটিকে উত্তরপ্রদেশের ইটাওয়ার ঘটনা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
পাঠকদের মধ্যে কারও কারও এই ভিডিয়োটি দেখে মানসিক আঘাত লাগতে পারে, ফলে ভিডিয়োটি দেখার বিষয়ে তাঁদের নিজস্ব বিবেচনা প্রয়োগ করতে অনুরোধ করা হচ্ছে।
সংবাদ প্রতিবেদনটিতে দাবি করা হয়েছে যে এই অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি ১১ অগস্ট একটি ক্ষেত থেকে এক শিশুকে অপহরণ করার চেষ্টা করে। কিন্তু, অপহৃত শিশুটির দাদা ঘটনাটি দেখে ফেলে সাহায্যের জন্য চিৎকার করে। গ্রামবাসীরা এই যুবককে ধরে ফেলেন এবং বেদম প্রহার করেন।
বুম ইটাওয়ার সুপারিন্টেন্ডেন্ট অব পুলিশের দফতরে ফোন করে। দফতরের জনসংযোগ আধিকারিক জানান এই ঘটনাটির সঙ্গে ছেলেধরার কোনও যোগ নেই।
“অভিযুক্ত যুবকটি মানসিক ভাবে ভারসাম্যহীন। সে আপাতত জেল হেফাজতে রয়েছে, এবং আমরা ঘটনাটির তদন্ত করছি। কিন্তু এটি শিশু অপহরণের ঘটনা নয়।”
– জনসংযোগ আধিকারিক, এসপি অফিস, ইটাওয়া।
বুম ইটাওয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শহর)-এর সঙ্গেও যোগাযোগ করে। তিনিও জনসংযোগ আধিকারিকের কথাই সমর্থন করে জানান যে যুবকটি মানসিক ভারসাম্যহীন।
“যুবকটি মানসিক ভাবে সুস্থ নয়। যখন জনতা তাকে মারতে আরম্ভ করে, সে ভয়ের চোটে অভিযোগ স্বীকার করে নেয়। কিন্তু সে ছেলেধরা নয়। এই ঘটনা নিয়ে কোনও গুজব ছড়াক, আমরা তা চাই না। আগেও গুজব রটেছিল যে দুষ্কৃতীরা মেয়েদের চুলের বেণী কেটে নিচ্ছে, ছেলেদের গোঁফ ছিঁড়ে নিচ্ছে। আমরা গুজব রটনাকারীদের সফল হতে দিতে চাই না।”
– অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ইটাওয়া
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরও জানান যে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবেই যুবকটিকে আপাতত জেল হেফাজতে রাখা হয়েছে।