ভারতীয় তেরাঙা পতাকা পরা এক ব্যক্তি ক্রিকেট মাঠে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করছেন, এমন একটি ভিডিও এই ভুয়ো বিবরণী দিয়ে শেয়ার হয়েছে যে, লোকটি একজন পাকিস্তানি।
তারিখ না দেওয়া ভিডিওটিতে ব্যক্তিটিকে দেখা যাচ্ছে, নিজের হাফপ্যান্ট নামিয়ে প্রকাশ্যে মাঠের মধ্যে প্রস্রাব করতে, যাকে পিছন থেকে একজন উত্সাহিত করে যাচ্ছে এবং ক্যমেরায় ঘটনাটি রেকর্ডও করে রাখছে। প্রস্রাব করা হয়ে গেলে লোকটি উঠে দাঁড়ায় এবং তারপর চিত্কার করে খেলোয়াড়দের উত্সাহিত করতে থাকে। তার পরনে ছিল একটি গেঞ্জি এবং মাথায় ভারতীয় তেরাঙা পতাকার একটি পাগড়ি।
বুম-এর হেল্পলাইনে একজন এই ভিডিওটি পাঠিয়ে জানতে চান, লোকটি পাকিস্তানি নাগরিক কিনা।
পোস্টটির বিবরনে লেখা: “এমন একটা লজ্জাকর ঘটনা। এক পাকিস্তানি ভারতীয় তেরঙা পতাকায় নিজেকে ছদ্মবেশ পরিয়ে ওভালের ঐতিহাসিক ক্রিকেট মাঠে ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচ চলার সময় এ ধরনের একটি অপকর্ম ঘটালো। সেটার ছবি তুলে সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল করে দিল। তারপর লন্ডন পুলিশ এসে ফরিদ খান ও তার দুই ভাইকে গ্রেফতার করলো। এমন ন্যক্কারজনক ঘটনা ক্রিকেটের ইতিহাসে কখনও ঘটেনি। এ ধরনের উগ্র জাতীয়তাবাদ ভালো নয়।”
পোস্টে চারটি ছবির কোলাজ করা হয়েছে, যার মধ্যে দুটি ভিডিও-র স্ক্রিনশট, আর বাকি দুটি স্থিরচিত্র। সেই সঙ্গে জনৈক ইরানি পাসপোর্টধারী ফরিদ মনসুরজাদের একটি সচিত্র বিবরণ এবং লন্ডন পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া এক ব্যক্তির ছবিও আছে।
তথ্য যাচাই
অল্টনিউজ-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা মহম্মদ জুবের-এর শেয়ার করা একটি টুইটে ব্যক্তিটিকে নরেন্দ্র ভোজানি বলে শনাক্ত করা হয়েছে।
ভোজানি ভাইদের বিষয়ে অনুসন্ধান চালিয়ে আমরা দেখেছি, নরেন্দ্র ভোজানি হলেন তিন ভাইয়ের অন্যতম, যাঁরা ক্রিকেট অনুরাগীদের একটি পেজ চালান। তিন ভাই নরেন্দ্র, সুরেশ ও হরি ভারতীয় ক্রিকেট দলের খেলা থাকলেই তেরঙা পতাকায় সজ্জিত হয়ে এবং একটি কলসি ও শাঁখ নিয়ে মাঠে আসেন। ম্যাচ চলাকালে তাদের এই পোশাকের জন্য অনেক আলোকচিত্রীর ক্যামেরাতেই তাঁরা ধরা পড়েন।
নরেন্দ্র ভোজানির ফেসবুক প্রোফাইল এবং তাঁর ভাইদের ফ্যান পেজ দুটোই এখন মুছে দেওয়া হয়েছে।
‘ভোজানি ক্রিকেট’--শব্দদুটি বসিয়ে খোঁজ লাগালেই ভোজানি পরিবারের বেশ কয়েকটি ভিডিও ও ছবির সন্ধান মিলছে। নীচে সে রকম একটি ভিডিওরই স্ক্রিনশট:
স্ক্রিনশটের লোকটির সঙ্গে ভিডিওয় দেওয়া প্রস্রাবরত ব্যক্তির ছবির অনেক সাদৃশ্যই চোখে পড়ছে।
বুম একটি স্থানীয় গুজরাটি ওয়েব-সংবাদ চ্যানেল লেভা প্যাটেল নিউজ-এ ২০১৬ সালের ৭ এপ্রিল ভোজানির একটি ভিডিও সাক্ষাত্কারও খুঁজে পেয়েছে। তাতে নরেন্দ্র সহ তিন ভোজানি ভাইকেই ভারতীয় ক্রিকেটের কট্টর সমর্থক বলে অভিহিত করা হয়েছে এবং তাঁদের বাড়ি গুজরাটের কচ্ছ এলাকায় বলে জানানো হয়েছে। ভিডিওটির ১ মিনিট ২৩ সেকেন্ডের মাথায় গুজরাটি ভাষায় নরেন্দ্রকে বলতে শোনা যাচ্ছে, তিনি গুজরাটের লোক বটে, তবে ইদানীং ব্রিটেনেই থাকেন। ভিডিওটির ২ মিনিট ৯ সেকেন্ডের মাথায় তিনি কতগুলি খেলা দেখেছেন, তার তালিকা দিয়েছেন এবং এই লড়াইয়ে ভারতের সাফল্য কামনা করার কথাও জানিয়েছেন।
গোটা সাক্ষাত্কার জুড়েই নরেন্দ্র ও তাঁর ভাইদের কথা, ক্রিকেটের প্রতি তাঁদের অনুরাগের কথা এবং তাঁদের দেখা স্মরণীয় খেলাগুলির কথা বারবার এসেছে।
২০১৫ সালে মিড-ডে ট্যাবলয়েডে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদনেও ভোজানির উল্লেখ রয়েছে এবং এই ভারতীয় ক্রিকেট ফ্যানটি যে সর্বদা পয়া হিসাবে মাঠে একটা কলসিও নিয়ে যান, তার উল্লেখও রয়েছে।
ইউ-টিউব অ্যাকাউন্ট হর্ষিকা০১পি অন্তত এক ডজন ভিডিও আপলোড করেছে, যাতে নরেন্দ্র ভোজানি ও তাঁর ভাইদের ভারতীয় তেরাঙা পরে মাঠে যাওয়ার ও ভারতীয় দলকে সমর্থন করে গলা ফাটানোর ছবি ধরা পড়ে।
আলোচ্য বর্তমান ঘটনাটি ঠিক কোথায় ঘটেছে এবং আইসিসি-র চলতি বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতার মাঠেই ঘটেছে কিনা, তা স্বাধীনভাবে যাচাই করতে বুম সমর্থ হয়নি।
এরপর আমরা ভুয়ো দাবিটি সম্পর্কে দুটি ফোটো দেখতে পাই, যার একটিতে এক ইরানি নাগরিকের পাশপোর্টের স্ক্রিনশট রয়েছে, অন্যটিতে পুলিশকে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করতে দেখা যাচ্ছে।
ইরানি নাগরিকের পাসপোর্টের ছবির উত্স বুম খুঁজে পায়নি, তবে পুলিশের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতারির অন্য ছবিটির হদিশ পেয়েছে। ইউরোপিয়ান ফোটো এজেন্সি ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত জি-৮ শীর্ষ সম্মেলনের সময় প্রতিবাদ জানানো এক ব্যক্তিকে লন্ডন পুলিশের গ্রেফতার করার এই ছবিটি প্রকাশ করেছিল।