২০১৮ সালের একটি ভিডিওতে দেখা গিয়েছিল, মধ্যপ্রদেশের এক হোটেলের ঘরে একাধিক ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন পাওয়া গিয়েছে। এই ভিডিওটিকেই সাম্প্রতিক লোকসভা ভোটের ভিডিও বলে ভুল ভাবে শেয়ার করা হচ্ছে। বুম দেখতে পায়, ভিডিওটি আসলে দেশের সাধারণ নির্বাচনের নয়। এটি ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বরের, মধ্যপ্রদেশে বিধানসভা ভোট শুরু হওয়ার একদিন আগের ঘটনা।
৪৮ সেকেন্ডের ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে ইভিএমগুলি একটি হোটেলের ঘরে রাখা রয়েছে। সেখানে চারজন লোকও রয়েছেন। একদল লোককে ওই ইভিএমগুলির ব্যাপারে ওই চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে শোনা যায়। সেই চার জন তখন নিজেদের নির্বাচনী ডিউটিতে থাকা পোলিং অফিসার বলে পরিচয় দেন এবং জানান যে ওই ইভিএমগুলি ব্যবহারের জন্য নয়। এগুলি ভোটের জন্য রিজার্ভে রাখা হয়েছে।
ভিডিওটি ফেসবুকে শেয়ার করা হয়েছে এবং সঙ্গে দাবি করা হয়েছে যে একটি হোটেলের ঘর থেকে ইভিএমগুলি উদ্ধার করা হয়েছে।
সঙ্গে যে ক্যাপশন শেয়ার করা হয়েছে, তাতে লেখা হয়েছে, ‘Ye EVM hotel main kya kar Rahi hai’। যার অনুবাদ করলে দাঁড়ায়, ‘এই ইভিএমগুলো হোটেলের ঘরে কেন?’
পোস্টটি এখানে দেখা যাবে। পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে। বুম একই ক্যাপশন সহ আরও কতকগুলি পোস্ট দেখতে পায়।
ভিডিওটি তামিল ভাষায় ক্যাপশন সহ ট্যুইটারেও শেয়ার করা হয়েছে।
বুম এই ভিডিওটি তার হোয়াটসঅ্যাপ হেল্পলাইন নম্বরেও (৭৭০০৯০৬১১১) পায়, যাতে ভিডিওটির সত্যতা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়।
তথ্য যাচাই
বুম দেখে যে এই ভিডিওটি ২০১৮ সালের ২৮ নভেম্বর, মানে মধ্যপ্রদেশ বিধানসভা ভোটের দিন থেকে, হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুকে ভাইরাল হয়।
ভিডিওটিতে দেখা যায়,যাঁরা রেকর্ড করছেন,তাঁদের একজন ওই ঘরে উপস্থিত ব্যক্তিদের তাঁদের পরিচয় দিতে বলেন।তাঁদের মধ্যে একজন জানান যে তাঁরা শাজাপুর থেকে এসেছেন। শাজাপুর মধ্যপ্রদেশের একটি জেলা।
বুম ‘মধ্যপ্রদেশ’, ‘ইভিএম’, ‘হোটেল’এই কিওয়ার্ডগুলি দিয়ে গুগল সার্চ করে স্থানীয়ওআঞ্চলিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বেশ কিছু সংবাদ প্রতিবেদন দেখতে পায়, যেগুলির বেশির ভাগই ২০১৮ সালের ২৮ নভেম্বর প্রকাশিত হয়েছিল। প্রতিবেদনগুলি এখানে পড়তে পারেন।
বুম নিউজলন্ড্রির একটি প্রতিবেদন থেকে জানতে পারে যে মনোজ পুরোহিত নামে এক সাংবাদিক ভিডিওটি শুট করেন এবং এবং বলেন, “ভিডিওটি ২৭নভেম্বর রাত্রে শুলজপুর কেন্দ্রের রাজমহল হোটেলে তোলা হয়। শুলজপুর মধ্যপ্রদেশের শাজাপুর জেলার অন্তর্গত।”
বুম দেখেছে, ২০১৮ সালের ২৮ নভেম্বর পুরোহিত নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ভিডিওটি আপলোড করেছিলেন।
ভাইরাল হওয়া এই ভিডিওটি দেখে ইলেকশন কমিশন একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানায় যে ইভিএম এবং ভোটিং-ভেরিফায়েড পেপার অডিট ট্রেল মেশিন (ভিভিপ্যাট) হোটেলে নিয়ে যাওয়ার জন্য ওই চারজন পোলিং অফিসারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তাঁদের মধ্যে দু’জনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয় যে ইঞ্জিনিয়ররা ইভিএম ও ভিভিপ্যাট মেশিন পরীক্ষা করে দেখেছেন যে তাতে কোনও কারচুপি করা হয়নি।