এক মহিলার রক্তাক্ত কপাল ও নাকের ছবি রকমারি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে এটা বোঝাতে যে, পশ্চিমবঙ্গে মহিলারা কী দুরবস্থায় রয়েছেন । পোস্টগুলিতে লেখা হয়েছে—“ধিক তৃণমূল কংগ্রেস সরকারকে! পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কন্যাশ্রী প্রকল্প অর্থহীন, কারণ এই রাজ্যে মহিলারা আদৌ নিরাপদ নন ।” এই প্রতিবেদনটি লেখার আগে পর্যন্ত পোস্টটি ৭০০ জন শেয়ার করে ফেলেছে ।
পশ্চিমবঙ্গের শৃঙ্খলাহীনতা তুলে ধরতে পোস্টে যে ছবিটি ব্যবহৃত হয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে, একজন মহিলা পুলিশের দিকে আঙুল তুলে কিছু অভিযোগ করছেন এবং আর একটি মেয়ে যেন পাশেই আহত অবস্থায় বসে রয়েছে । "যে রাজ্যের কন্যা রা সুরক্ষিত নয় সেই রাজ্যের কন্যাশ্রী কোনো মূল্য নেই ছি ছি TMC ।" - পোস্টের বার্তা।
নীচে পোস্টটির স্ক্রিনশট এবং আর্কাইভ লিংকটি দেখতে পাবেন ।
Full View
তথ্য যাচাই
বুম ছবিটি বিশ্লেষণ করে দেখেছে, এটি পশ্চিমবঙ্গের কোনও ঘটনার ছবিই নয়, বরং উত্তরপ্রদেশের মইনপুরির একটি ঘটনার ছবি ।
২০১৬ সালের ২২ ডিসেম্বর উত্তরপ্রদেশের মইনপুরি জেলার কিশানি বাজারে এক দম্পতি অশ্লীল টিটকারির প্রতিবাদ করায় আক্রান্ত হয়েছিলেন । প্রকাশ্য দিবালোকে ঘটা এই হামলা ও শ্লীলতাহানির ঘটনারই প্রতিবাদ করছেন এই মহিলারা ।
কুইন্ট সংবাদ-পোর্টালে এই ঘটনাটির রিপোর্টও প্রকাশিত হয়েছিল ।
ভিডিওটির ০.০৮ কাউন্টারে দেখা যাচ্ছে, একদল লোক ভাইরাল হওয়া পোস্টের ছবির মহিলাটিকে মারধর করছে । ভিডিওটির ০.৩০ নম্বর কাউন্টারে মহিলাটিকে বলতে শোনা যাচ্ছে, তিনি যথন একটি লোককে কিশানি গ্রামের একটা বিশেষ দোকানের ঠিকানা জিগ্যেস করেন, তখন লোকটি তাঁকে দোকানের ভিতরে আসতে বলে । কুইন্ট-এর রিপোর্ট অনুযায়ী সেখানে অতঃপর দু পক্ষের মধ্যে বচসা শুরু হয় । অভিযুক্ত ব্যক্তিটি অশালীন ভাষায় গালাগাল দিতে শুরু করে এবং তারপর লাঠিসোঁটা নিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকেই ওই দম্পতিকে আক্রমণ করে, যা অন্যরা নীরব দর্শক হয়ে দেখে যায় । এর পরেই প্রচণ্ড মারধরে মহিলার মাথা ফেটে গল-গল করে রক্ত বেরতে থাকে ।
টাইমস অফ ইন্ডিয়াও ঘটনাটি রিপোর্ট করে ।
কিশানি থানার ইনস্পেক্টর আশিস কুমার সিং বুমকে জানান—“আমরা এই ঘটনার সূত্রে ১২ জনকে গ্রেফতার করেছি । তাদের বিরুদ্ধে মহিলাদের শ্লীলতাহানি ও মারধর করার মামলা রুজু হয়েছে ।”
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কন্যাশ্রী প্রকল্প হল শিশুকন্যাদের অবস্থার উন্নতি ঘটাতে তাদের কাছে নগদ হস্তান্তরের প্রকল্প । একটি রিপোর্ট অনুসারে প্রকল্পটির লক্ষ্য হল, অল্পবয়সী মেয়েদের পড়াশোনায় উত্সাহিত করা এবং ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত তাদের বিবাহ স্থগিত করা । এ পর্যন্ত ৫০ লক্ষেরও বেশি মেয়ে এ রাজ্যে এই প্রকল্পে উপকৃত হয়েছে । ২০১৭ সালের ২৪ জুন রাষ্ট্রপুঞ্জও মহিলাদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে নিয়োজিত এই প্রকল্পের জন্য রাজ্য সরকারকে জন-পরিষেবার সর্বোচ্চ পুরস্কারে সম্মানিত করেছে । ২০১১ সালে এই প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয় ।