অটোরিকশয় বসে থাকা দুই হিজড়ার একটি ছবি বাংলাদেশি ফেসবুকের অনেকের টাইমলাইনে নতুন করে ভেসে উঠেছে এই ভুয়ো দাবি সহ যে, তারা আসলে কিডনি পাচারকারী দুর্বৃত্ত । সেই সঙ্গে বাংলা বিবরণী দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে এই দুইজনের খোঁজখবর করতে । সঙ্গের ক্যাপশনটিকে বাংলায় অনুবাদ করলে দাঁড়ায়—“এরা এক নতুন ধরনের ডাকাত, যারা লোকের বাড়িতে ঢুকে প্রথমে এক গ্লাস জল খেতে চায় । তারপর যখন বোঝে যে বাড়িতে কোনও পুরুষ নেই, তখন মহিলাদের ওপর হামলা করে এবং জোর করে তাদের কিডনি কেটে নিয়ে পালায়”।
২০১৮ সালের জুলাই মাসে জনৈক মহম্মদ হাসান এটি পোস্ট করেন এবং সেটি ৮০০০ জন শেয়ার করে । অতি সম্প্রতি ১৪ জানুয়ারি এটি আবার পোস্ট করা হয়েছে । বুম খেয়াল করেছে, জানুয়ারি মাসে আরও অনেকেই এটি পোস্ট করেছে, যা থেকে মনে হয়, এই গুজব জনে-জনে ঘুরছে ।
সঙ্গের বাংলা ক্যাপশনটি আঞ্চলিক বাংলা ভাষায় লেখা ।
তথ্য যাচাই
এ ধরনের ছবি (যার ভিত্তিতে ছড়ানো গুজবের পরিণামে মানুষের জীবন পর্যন্ত বিপন্ন হয়)এই প্রথম অনলাইনে ছড়ানো হচ্ছে, এমন নয় । গত বছর ভারতের বিভিন্ন এলাকায় এই ছবি ভাইরাল করা হয়েছিল এই গুজব ছড়াতে যে, এই হিজড়ারা আসলে ছেলেধরা ।২০১৮ সালের মে মাসে তেলুগুঅ্যাপ২টিজি.কম নামের একটি তেলুগু ওয়েবসাইটে প্রথম ছবিটি বের হয় ।
গত বছর মে মাসে তেলেঙ্গানা রাজ্যের মেহবুবনগর জেলায় এই ঘটনা ঘটে, যখন গ্রামবাসীরা ছেলেধরা সন্দেহে এই দুইজন হিজড়াকেতাড়া করে ধরে ফেলে এবং বেধড়ক প্রহার করে । এ সংক্রান্ত রিপোর্টটি এখানে দেখুন ।
অতীতে অল্টনিউজ নামের ওয়েবসাইটও একবার ছবিটিকে ভুয়ো আখ্যা দিয়েছিল। নামের ওয়েবসাইটও একবার ছবিটিকে ভুয়ো আখ্যা দিয়েছিল । এই ছবিটি হোয়াট্স্যাপের মাধ্যমে ছড়িয়ে গুজবে উস্কানি দিয়ে গোটা ২০১৭ ও ২০১৮ সাল ধরে ভারতের নানা স্থানে অনেক গণপিটুনির ঘটনায় ইন্ধন জুগিয়েছিল, যার পরিণামে অন্তত ৩০ জন মানুষের মৃত্যু হয়।
সোশাল মিডিয়ার ওই সব বার্তায় অভিযুক্তদের কেবল ছেলেধরা হিসাবেই শনাক্ত করা হয়নি, তারা বাচ্চাদের ধরে তাদের মেরে ফেলে কিডনি বা অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কেটে পাচার করে, এমন মিথ্যা অভিযোগও তোলা হয়। তামিলনাড়ু, কেরালা, ওড়িশা, মহারাষ্ট্র, গুজরাট, কর্নাটক ও বিহারে ছেলেধরাদের ওত পেতে থাকার গুজব ছড়াতে এমন সব ছবি বা ভিডিও ব্যবহার করা হয়, যেগুলোর সঙ্গে ঘটনার কোনও সম্পর্কই নেই । এমনকী নিরাপত্তা বিষয়ক একটি পাকিস্তানি বিজ্ঞাপনকেও তারা এই গুজব ছড়ানোর কাজে ব্যবহার করে । সে সময় বুমই ছিল প্রথম ওয়েবসাইট, যে পাকিস্তানি বিজ্ঞাপনটি ব্যবহার করে ভুয়ো গুজব সৃষ্টির দুরভিসন্ধিকে ফাঁস করেছিল ।